পর্ব-১৯
শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী-র
চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে
মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা
পর্ব-১৯
ছবিঃগৌতম মাহাতো
বিদ্রোহ বহ্নি
শাল ফুল উপন্যাস, টুসু গান ও সাহেব পটে
নায়েক বিদ্রোহ….. …….. । ফাঁসী দেওয়ার অশ্রু
সজল কাহিনীঃ
শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী
অতঃপর অচল সিংহ চামেলীর ভুমিষ্ট প্রণাম গ্রহণ
করে বধ্যভূমির দিকে অগ্রসর হন। শোকাভিভূতা চামেলী আর সেইস্থলে থাকতে ইচ্ছা করলেন না। তিনি অদূরে বীর সিংহ, শশী শেখরের নিকট উপস্থিত হয়ে স্থানান্তরে যাবার জন্য অনুরোধ করেন। ইতি মধ্যে রামার মা ও মথুরানাথ উপস্থিত হয়। সেনাপ্রধান অচলসিংহের ফাঁসী হয় ১৮১৬ খ্রীস্টাব্দে এবং মেদিনীপুরের কংসাবতী নদীর তীরে তাঁরই কন্যাবীরাঙ্গনা চামেলী কর্তৃক তাঁর অন্তেষ্টিক্রিয়া সুসম্পন্ন হয়। অচল সিংহের মৃত্যুর পর নেতৃত্ব দেনবিখ্যাত নায়েক সর্দার ভোঁদা বিশা।
আঠারো শতকের শেষ দিকে বগড়ীর শেষ স্বাধীন
রাজা ব্রিটিশের নিকট ধরা পরে হুগলি জেলে প্রেরিত হন। তখন ব্রিটিশ রাজ বিদ্রোহী ভোঁদা বিশাকে কোনরূপে ধরতে না পেরে প্রচার করে,
“বিশাল ছিন্ন শির এনে দিলে তবে রাজা ছত্র সিংহ
মুক্তি পাবেন’। এমন সময় ছত্র সিংহের দুই দৌহিত্র
চন্দ্রমোহন ও মনমোহন বিশাকে হত্যা করে এবং তার ছিন্ন শিরের বিনিময়ে ছত্র সিংহের মুক্তি প্রার্থনা করায় ছত্র সিংহ হুগলী জেলার ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব কে ১২৩০ সালের ৭ ই কার্ত্তিক
তারিখে ছয়টি শর্ত সম্বলিত একটি প্রতিজ্ঞাপত্র
লিখে দেন। এই প্রতিজ্ঞাপত্রের অন্যতম সাক্ষী
ছিলেন চন্দ্রকোণা অধিবাসী শ্রী কালী প্রসাদ মিত্র।
তারপর আপ্তাবুদ্দিন আহম্মদ (সেরেস্তাদার ফৌজদার) হ’তে সন ১৮২৩ খ্রীস্টাব্দে ২২ শে অক্টোবর তাঁর কারা মুক্তির হুকুম হয়। আর বিশাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য চন্দ্রমোহন ও
মনমোহন ৫০০ টাকা পুরস্কার ও রাজশক্তির নিদর্শন পত্র পায়। কথিত আছে, এ সময় ভোঁদা
বিশা প্রত্যহ প্রত্যুষে মঙ্গলপোতার নিকটবর্ত্তী এক
গোয়ালা গৃহে দুধ খেতে যেতেন, এই সুযোগে চন্দ্রমোহন ও মনমোহন তাঁকে হত্যা করে। এই
মর্মান্তিক ঘটনায় ভোঁদা বিশা বা স্থুলতা চেহারা
যুক্ত বিশ্বনাথ দেশের তরে জীবন দান করে অমর
হয়ে আছেন। কারণ আজো বগড়ী বাসীর মুখে
মুখে এই ছড়া শুনতে পাই।
“যুগল কিশোর মগন মদন
ভোঁদা বিশা যেমন তেমন”
অবশ্য সেই দুর্দিনে ভোঁদা বিশা, যুগল কিশোর ও
মগন মদনের মত তত শক্তিশালী দল গঠন করতে
না পারলেও তখনকার মুক্তি যুদ্ধে তিনি যে একটু
কম শক্তি সম্পন্ন দলও গঠন করেছিলেন সে বিষয়ে সন্দেহ নাই।
ক্রমশঃ…