পর্ব-৭ ঐতিহাসিক চন্দ্রকোণা

 পর্ব-৭ 

 
             
★চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে লিখছেনঃ-   দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী

             মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা

                                  পর্ব-৭

                  ঐতিহাসিক চন্দ্রকোণা
                   
রহিম খাঁ (পাঠান) মোঘল -দের হস্ত হ’তে তাঁদের  পৈত্রিক রাজ্য বাংলাদেশ উদ্ধারের উচ্চাকাঙ্খায় আশান্বিত হয়ে সানন্দে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিলেন। এ সময় আওরঙ্গজেবের হিন্দুদের উপর
জিজিয়া কর পুন: স্থাপিত করায় ভারতে মোঘল
সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ সঞ্চারিত হয়। 
সর্ব্বপোরি দাক্ষিণাত্যের শিবাজী মহারাজের হিন্দু
রাজ্য স্থাপনে সমগ্র ভারতে একটি বিশেষ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। সুতরাং শোভা সিংয়ের
নেতৃত্বে চন্দ্রকোণা রাজ চন্দ্রভান সিং, যুবরাজ
 দ্বিতীয় রঘুনাথ সিং ও পাঠান সর্দ্দার রহিম খাঁ মোঘল শক্তি উচ্ছেদের দুরাকাঙ্খায় সম্মিলিত
ভাবে বর্দ্ধমানের ধাবিত হলেন। এদিকে বর্দ্ধমানাধিপতি কৃষ্ণরাম রায় ঢাকার সুবেদারের
আদেশের প্রতীক্ষায় ছিলেন। বিদ্রোহীদল অকস্মাৎ
১৬৯৬ খৃষ্টাব্দে বর্দ্ধমান আক্রমণ করল। কৃষ্ণরাম নিজ সৈন্যর দ্বারা বিদ্রোহীদলকে বাধাদানের
চেষ্টা ক’রলেও বিদ্রোহীগণের সংখ্যাধিক্যের জন্য
পরাজিত ও নিহত হলেন। বর্দ্ধমান রাজপুরী 
হ’ল। পুর মহিলাগণের অনেকেই জহর অর্থাৎ বিষপান ক’রে আত্মহত্যা করেন  এবং কেহ কেহ
বন্দী হন। কৃষ্ণরামের পুত্র জগৎরাম গোপনে পলায়ন করে ঢাকায় সংবাদ দিতে যান। ইত্যবসরে
বিদ্রোহীগণ প্রথম বিজয়োল্লাসে হুগলী, সপ্তগ্রাম, 
মুখসুদাবাদ (মুর্শিদাবাদ) প্রভৃতি অঞ্চলে লুঠতরাজ
চালিয়ে ত্রাস ও বিভিষিকার সৃষ্টি করে। জগৎরাম
ঢাকার সুবেদার ইব্রাহিম খাঁকে সমস্ত বিষয় জ্ঞাপন করেন। ইব্রাহিম খাঁ যশোহরের ফৌজদার নুরুল্লা
খাঁ উপর বিদ্রোহ দমনের আদেশ জারি ক’রলেন। তখন বিদ্রোহীগণ হুগলী অবরোধ করেছিলেন। 
নুরুল্লা খাঁ বিদ্রোহীগণকে দমন ক’রতে না পেরে
যশোহরে পলায়ন ক’রলেন। লুণ্ঠনের আশায় বহু
যুদ্ধ ব্যবসায়ী বিদ্রোহীদের সহিত যোগদান করায়
বিদ্রোহ দুর্বার আকার ধারণ ক’রল। রাজমহল হ’তে মেদিনীপুরের দক্ষিণ অঞ্চল পর্যন্ত সমগ্র
পশ্চিমবঙ্গ বিদ্রোহীদের অধিকৃত হ’ল। এই সুযোগে
বিদেশী বণিক গণের মধ্যে ইংরেজরা কলিকাতায়, 
ফরাসীরা চন্দননগরে এবং ওলন্দাজেরা (ডাচ) 
চুঁচুড়ায় দুর্গ নির্মাণের অনুমতি, দুর্বল চিত্ত সুবাদার
ইব্রাহিম খাঁর নিকট হতে আদায় করেন এবং এই
সূত্রে কলিকাতা শহরের বেশ উন্নতি সাধিত হয় ও
ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নির্মিত হয়। এই বিদ্রোহ 
কাহিনী লণ্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ‘  Letters’
নামক কাগজ পত্রে অদ্যাপি সংরক্ষিত আছে । 
বাংলার এই বিদ্রোহ ব্যাপার ‘সওয়ানে নেগার’
(বাদশাহী দ্রুত সংবাদ প্রেরক) দল কর্ত্তৃক দাক্ষিণাত্যে মারাঠাগণের সহিত যুদ্ধরত বাদশাহ
আওরঙ্গজেবের কর্ণগোচর হ’লে তিনি অবিলম্বে
স্বীয় পৌত্র আজিমুশ্বানকে বঙ্গ-বিহারের শাসন ভার দিয়া সসৈন্যে বাংলায় পাঠাবার ব্যবস্থা ক’রলেন। এদিকে ঢাকার সুবাদার ইব্রাহিমের পুত্র
জবরদস্ত খাঁ পশ্চিমবঙ্গে এই বিদ্রোহ দমনের জন্য
সসৈন্যে প্রেরিত হলেন। ইতিমধ্যে এক অভাবনীয় ব্যাপার সংগঠিত হ’ল। বর্দ্ধমানের বন্দিনী মহিলাগণের মধ্যে কৃষ্ণরাম রায়ের এক পরমা সুন্দরী কন্যার উপর  শোভা সিং অত্যাচার ক’রতে উদ্যত হ’লে এই বীরবালাএক শানিত ছুরিকাঘাতে শোভা সিং এর উদর মধ্যে আমুল প্রবিষ্ট করিয়ে দেন এবং তৎক্ষণাৎ শোভা সিংভুপতিত হয়ে প্রাণ ত্যাগ করেন। আর রাজকুমারীও সেই ছুরিকাঘাতে নিজ-বক্ষে বিদ্ধকরে মৃত্যু বরণ করেন। 

   তথ্যসূত্র “ভগ্ন দেউলের ইতিবৃত্ত” 
                         শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী
                                চন্দ্রকোণা।

                                                    ক্রমশঃ….

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *