উ প মা   চ ট্টো পা ধ্যা য়-র গদ্যকথা

পরিচিতিঃ উপমা চট্টোপাধ্যায়, ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক হয়ে বর্তমানে বি. এড পাঠরতা।প্রথম লেখা প্রকাশ পায় ‘ আনন্দমেলা ‘য়।পরবর্তীকালে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশিত হয়েছে।সম্প্রতি ‘ আনন্দবাজার পত্রিকা ‘ আয়োজিত ‘ শাবাশ বাংলা ‘ রহস্য গল্প লেখার প্রতিযোগিতার জন্য লেখা গল্প প্রকাশের জন্য নির্বাচিত হয়েছে ।পরিবার জীবন আলো করে রেখেছে।বেঁচে থাকার লক্ষ্য,পাহাড়ি নদীর মত বয়ে চলা। বাইফোকালিজম্ জুড়ে আর তারই সামান্য ঝলক।

 

উ প মা   চ ট্টো পা ধ্যা য়- গদ্যকথা

 

যা হারিয়ে যায়

জানি,আপনি পুজোর চারদিন কোনোবার পশ্চিমবঙ্গের বাইরে জাননি।যাওয়ার কোনো বাসনাও নেই।তবুও,ধরুন আপনি কোনো এক বছর পুজোয় দক্ষিণ ভারত বেড়াতে গেলেন এবং নবমীর সন্ধ্যেয় ব্যাঙ্গালোর থেকে মাইসোরের দশেরা ফেষ্টিভ্যালে উপস্থিত থাকার জন্য চামুন্ডি এক্সপ্রেসে উঠলেন।অন্যান্য সহযাত্রীর সাথে এক যুবকও উঠতে পারে আপনার কামরায়,যার নির্ধারিত আসন অন্য একজন নিয়ে তাকে আপনার পাশের সিটে পাঠিয়ে দেবে।হতেই পারে আপনি এতক্ষণ যে জানালার পাশের সিটটিকে নিজের ভেবে একটা সুপ্ত অহঙ্কার বোধ করছিলেন,কালক্রমে সেটি আসলে ঐ যুবকটির ওপর আরোপিত সিট।আপনি কিছুটা বেজার মুখে পার্শ্ববর্তী সিটে সরে গেলেন ভদ্রতার খাতিরে কিন্তু আপনার মন পড়ে রইল ঐ সিটে।আপনি জানেন যে অন্য জায়গায় মন ফেলে রেখে তিনঘন্টা জার্নি করা যায় না,তাই একটু দোনামোনা ভাব নিয়ে যুবকটিকে রিকোয়েস্ট করবেন আপনাকে ঐ সিটটি ছেড়ে দিতে এবং সে অত্যন্ত নরম সুরে “ইয়াহ্ শিওর” বলে হাসিমুখে আপনার সাথে সিটটি বদলে নেবে।অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই আপনি খানিক প্রসন্ন মন নিয়ে এবার তার দিকে ভালো করে নজর দেবেন এবং বুঝবেন সেও আপনার সমসাময়িককালে কিংবা কিছু আগেই হয়ত সদ্য সাবালকত্বের স্তরে উন্নীত হয়েছে। মস্তিষ্ক আপনার ইন্দ্রিয়সমূহকে নির্দেশ দেবে এবং এই ব্যক্তিটির সাথে আলাপ জমাতে আপনি সচেষ্ট হবেন।একে অপরের ভাষা আপনারা জানেন না।অগত্যা বিদেশি ভাষায় শুরু হবে পরিচয়।সৌরভ বনাম দ্রাবিড়,ইডেন বনাম চেন্নাস্বামী,ইলিশ-চিংড়ি বনাম নিরামিষভোজী,রসগোল্লা বনাম ধোসা,ইংরাজী সাহিত্য বনাম ইঞ্জিনিয়ারিং….জমে উঠবে আড্ডা,বিতর্ক এবং আপনার তাকে অল্প অল্প ভালো লাগতে শুরু করবে।
সময়ের সাথে সাথে কথাও ফুরিয়ে আসবে;গন্তব্যের দূরত্বও।আপনি বুঝবেন,এবার ফিরতে হবে।আপনি জানেন আর দেখা হবে না,তাও হাসিমুখে একে অপরকে বলবেন,”আবার দেখা হবে”। তারপর দিব্যি ফিরে যাবেন নিজের নিজের রাস্তায়।আপনার প্রবল ইচ্ছে জাগবে তার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখার ।কিন্তু ভুলেও তার চলভাষের নং চেয়ে নেবেন না।কিছু কথা অসমাপ্ত থাকাই ভাল…পরে যদি কোনোদিন আবার দেখা হয়,নাহয় একমুখ হাসি নিয়ে বলে উঠবেন,”Nīvu hegīddīri?”

এবং সন্ন্যাসীসখা

 

বিষাদ জড়িয়ে বসে ছিল সে,আবডালে যাপন করছিল একাকীত্ব। মুখ ঢাকা কালো মুখোশে,হয়তো সে ভয় পায়,কেউ চিনে নেবে তাকে,দেখে ফেলবে সযত্নে লালিত ক্ষত..
সে পথিকের বাড়ি দূরদেশে,সবুজ সেখানে অন্দরমহলে বাস করে।তার ঋজু শরীর থেকে ভেসে আসে মাটির গান,জলের গন্ধ,মাঝে মাঝে আকাশ নেমে আসে তার কাছে।
হাতে বাউলসুতো,ঈশ্বর বাঁধা পড়ে আছেন তাতে।
দেখে ভেবেছিলাম,সে কোনো এক মগ্ন তাপস, বাৎসল্যপূর্ণ দুই খোলা চোখ দিয়ে মেপে নিচ্ছেন যাবতীয় কর্মকাণ্ডের হিসাব কিংবা ছদ্মবেশী কোনো এক রাজা,ফকিরের বেশে নেমে এসেছেন রাজ সিংহাসন থেকে।ঘুরে ঘুরে মিটিয়ে দিচ্ছেন কল্পনা ও বাস্তবের রাজ্যপাটের তফাৎটুকু।
এই ভাবেই কাটছিল দিন,দূরে দূরে, সম্ভ্রমে । নিকটে যেতে পারিনি তার,ঘিরে ধরেছিল সংশয় ! ভীত ছিলাম,সামনে গিয়ে দাঁড়ালে হয়তো সে চিনে ফেলবে আমায়,বুঝে যাবে এ মনের আকুতির কথা।তারজন্যই যে এতকাল ধরে সাধনা করছে এই নগরবালিকা !
অবশেষে ফুরিয়ে এলো দিন।শেষবেলায় দেখলাম চন্দনের সুবাস গায়ে মেখে এগিয়ে আসছে সে আমার দিকে,ধীর পায়ে..শ্রদ্ধায় বুজে আসছে আমার চোখ..মাথা নত হচ্ছে ক্রমশ।মনে একরাশ শঙ্কা।আজই কি সেই দিন?আমার যে তার সঙ্গে হাজার বছরের কথা জমে আছে!
ক্রমশ কমে আসছে তার আর আমার মাঝের দূরত্ব। আমি প্রতীক্ষা করছি,কখন ভেঙে যাবে সব আগল,খসে পড়বে কালো মুখোশ,প্রণামের ছলে চতুর আমি তার স্পর্শ পাবো।অপেক্ষা দিয়ে সাজানো এই অর্ঘ্য কি গ্রহণ করবে আমার পরমসখা?

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *