স্বপ্নধারার পর্বকথা(৪র্থ পর্ব) কলমেঃ শু ক্তি   চ ট্টো পা ধ্যা য় 

শুক্তি ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে এখন নিভৃতেই তাঁর লেখা-লিখি নিয়েই ব্যস্ত। ইতিমধ্যেই যুক্ত হয়েছেন বিভিন্ন সাহিত্য পত্র পত্রিকার সাথে। লিখেছেন বাস্তবের আলোকে দেশ-বিদেশের পুরাণের বিভিন্ন কাহিনী ও বেশ কিছু কবিতাও। এছাড়াও শুক্তি যুক্ত “জিজীবিষা” নামক লিটল ম্যাগাজিনের সাথে। সেখানেও তাঁর নিয়মিত লেখালেখি। নাচ তাঁর ভীষণ প্রিয় এছাড়াও শুক্তির ছবি আঁকা ও ফটোগ্রাফি নিয়ে অগাধ আগ্রহ।আজ থেকে প্রতি সপ্তাহে বাইফোকালিজম্-র পাতায় থাকছে তাঁর এই ধারাবাহিক।

স্বপ্নধারার পর্বকথা(৪র্থ পর্ব)

কলমেঃ শু ক্তি   চ ট্টো পা ধ্যা য় 

ছবিঃ সুনিপা ব্যানার্জি

বন্ধুরা, স্বপ্ন নিয়ে কত যে কথা, গাথা রয়েছে বিশ্ব সাহিত্যে, তার ইয়ত্তা নেই। এই যেমন আগের দিনই বললাম, মহাকাব্য Iliad-এর একটি ছোট্ট স্বপ্নের গল্প। এরকম আরও কয়েকটি গল্প নিয়ে চলে এলাম আজ আপনাদের কাছে। মহাকাব্য Iliad-এর কথা হবে আর সেখানে বীর রাজা Odysseus-এর কথা থাকবে না, তাও হয় বলুন? হ্যাঁ, আজ সেই রাজা Odysseus ও Penelope এর কাহিনী দিয়েই শুরু করা যাক।
Laertes ও Anticlea-এর পুত্র বিখ্যাত Odysseus(ওরফে Ulysses) ছিলেন Ithaca-র রাজা। তাঁর স্ত্রী ছিলেন Penelope ও Telemachus,তাঁর পুত্র। Odysseus ট্রয়ের যুদ্ধে সামিল হয়েছিলেন ও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছিলেন। দশ বছর ধরে সেই যুদ্ধ চলে ও Troy নগরী ধ্বংস হয়, সেকথা আগেই বলেছি। Odysseus অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই যুদ্ধে যান, যদিও একটি ভবিষ্যতবাণীর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, তিনি এই যুদ্ধে গেলে,বহুবছর দেশছাড়া হবেন। কিন্তু এই যুদ্ধে যখন তাঁকে সামিল হতে হয় ও তখন তাঁর পুত্র Telemachus নিতান্তই শিশু। এই অবস্থায় Penelope শিশুপুত্র সহ সেই রাজ্য ও রাজ্যবাসীর সুখ-সাচ্ছন্দ্যের দিকে নজর দেওয়া শুরু করেন। Odysseus প্রায় কুড়ি বছর অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ফিরে আসছেন না দেখে সবারই ধারণা হয়েছিল, তিনি যুদ্ধে প্রান দিয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রকৃতপক্ষে বেঁচে ছিলেন, এবং রাজ্যে ফিরছিলেন। কিন্তু এত বছর অনুপস্থিত থাকায় বিভিন্ন দেশের কিছু রাজা ও অভিজাত ব্যক্তিরা(suitors) Penelope-র পাণিপ্রার্থী হয়ে সেই রাজ্যে আসে ও থাকতে শুরু করে। কিন্তু Penelope রাজি না থাকায় তিনি বিভিন্ন কৌশলে তাদের প্রস্তাবে অসম্মতি প্রকাশ করতে থাকেন।

তিনি তাঁর স্বামীর প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছিলেন। এরকম সময়, একদিন তিনি একটি স্বপ্ন দেখেন যে, অনেকগুলো (প্রায় কুড়িটি) রাজহাঁস তাঁর প্রাসাদে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। হঠাৎ একটি ঈগল পাখি শুন্য থেকে নেমে এল ও সাথে সাথে সেই রাজহাঁসের দল ভয়ে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পরতে লাগল। Penelope-ও স্বভাবতই হতবাক। এমন সময়ে দেখলেন, সেই ঈগলটি তাঁর কাছে এসে হঠাৎ মানুষের গলায় কথা বলে উঠল। Penelope-কে সাহসের সাথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার উপদেশ দিল, আর বলল, এটি কোন স্বপ্ন নয়,বরং ঘোর বাস্তব। তাই সাহসের সাথে এগিয়ে চলা ও রাজ্যের রক্ষাই এখন একমাত্র কর্তব্য। এই স্বপ্নটি প্রতীকী অর্থ বহন করেছে। এখানে ঈগল হলেন Odysseus নিজে, এবং রাজহাঁসগুলো suitors-দের নির্দেশ করছে। অর্থাৎ, Penelope স্বপ্নের মাধ্যমে দেখলেন, Odysseus-এর দ্বারাই Ithaca রাজ্যের সমস্ত অযাচিত ও অবাঞ্ছনীয় মানুষ তথা সমস্যার অবসান হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, যে ট্রয়ের কথা আমরা বলছি,

Hecuba

     সেই ট্রয়ের রানি Hecuba-র একটি স্বপ্নের কাহিনী জেনে নিই আসুন। Hecuba ছিলেন ট্রয়ের রাজা Priam-র দ্বিতীয় স্ত্রী ও Hector, Paris, Polydorus, Cassandra প্রমুখের মা। এই Hecuba একবার অন্তঃসত্ত্বা(Paris জন্মানোর সময়) অবস্থায় স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনি একটি জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডের জন্ম দিয়েছেন এবং সেটিকে ঘিরে আছে কিছু সাপ। এটি ভগবানের আদেশ বা ভবিষ্যতবাণীও বটে। এক ভবিষ্যতদ্রষ্টা বলেন, যদি এই সন্তান বাঁচে তবে সে ট্রয়ের ধ্বংসের কারণ হবে। এই স্বপ্নের পর Paris-এর জন্ম হলে, Hecuba, Paris-কে হত্যা করতে আদেশ দেন তাঁর দুই ভৃত্যকে। তারা এই পাপ করতে পারে না ও শিশু Paris-কে পাহাড়ের কোলে রেখে আসে। যদিও Paris কিছু বছর পর ফিরে আসে ও (ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী) ট্রয়ের ধ্বংসের কারণ হয়।
আগের পর্বে ট্রয়ের যুদ্ধে Agamemnon-এর কথা বলেছি।

   

murder of Agamemnon

সেই Agamemnon-এর স্ত্রী Clytemnestra’র কথা এবার বলব। Clytemnestra একবার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তিনি একটি সাপের জন্ম দিয়েছেন এবং সেই সাপটিকেই তিনি স্তন্যপান করাচ্ছেন সন্তানস্নেহে। যদিও স্বপ্নের মধ্যেই তিনি খেয়াল করেন, সেই সাপটি স্তন্যপান করার সময় তার রক্ত শোষণ করছে। দ্বিতীয় পর্বেই এই সাপের স্বপ্নের বিষয়ে বলেছিলাম, মনে পড়ছে? সাপের স্বপ্ন একদিকে যেমন যৌনতার প্রতীক তেমনি, এতি বিশ্বাসঘাতকতারও প্রতীক। হয় সেই ব্যক্তি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন অথবা তার সাথে এইরূপ কোন বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঘটেছে।
Clytemnestra’র স্বপ্নের কথা জানতে গেলে একটু পূর্ব আখ্যান জানা প্রয়োজন, তবেই এই স্বপ্নের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। Agamemnon যখন যুদ্ধের যান, সেই সময় Clytemnestra, Agamemnon এর ভাই(cousin) Aegisthus এর সঙ্গে প্রণয় ঘটিত সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন এবং Agamemnon যুদ্ধ থেকে ফিরলে, তাকে Clytemnestra ও Aegisthus ছল করে হত্যা করেন। তাদের পিতার এই অভাবনীয় ও নৃশংস হত্যা তাদের(Agamemnon ও Clytemnestra) দুই সন্তান Orestes ও Electra সহ্য করতে পারে না। Orestes–এর প্রতিশোধ নিতে তার মা Clytemnestra-কে হত্যা করে। তাহলেই দেখুন বন্ধুরা, বিশ্বাসঘাতকতা আর সাপের স্বপ্ন কিরকম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শুধু আজকের যুগে নয়, বহু বহু যুগ আগে থেকেই এই ধারণা প্রচলিত, যার প্রমাণ এই পুরাণের আখ্যানগুলি। এবার তাহলে Clytemnestra-র স্বপ্নটির ব্যাখ্যা পাওয়া গেল তো? আসলে সাপের স্বপ্নটি এখানে symbol হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে সাপের দুটি স্পষ্ট symbol পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমত, Aegisthu’র সাথে Clytemnestra’র প্রণয়ঘটিত যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া এবং দ্বিতীয়ত, স্বামীর সাথে তার বিশ্বাসঘাতকতা। বর্তমানে আমরা এই আখ্যানের ব্যাখা খুঁজতে গেলে এই ধারণাতেই অবতীর্ণ হই যে, অবচেতনে তথা অচেতনে Clytemnestra নিজেও তাঁর স্বামীর প্রতি তাঁর এই আচরণের প্রতি ওয়াকিবহাল ছিলেন, তারই প্রতিফলন হয়েছিল তাঁর স্বপ্নে।
আমরা যতই পুরান-কথনে ঢুকি, ততই যেন নতুন বা পুরনো গল্পগুলোই নতুন ভাবে explore করি। জানা-অজানা গল্পগুলোই নতুনভাবে আমাদের কাছে এসে ধরা দেয়। তবে, ধীরে ধীরে তার রূপ পরিবর্তন হতে শুরু করে।

dream of ceyx and alcyone

এই গল্পগুলি রচিত হওয়ার বহু শতাব্দী পরে, রোমান কবি ওভিড তার “Ceyx ও Alcyone’’-র চরিত্র চিত্রনে স্বপ্ন-চিত্রের ঐতিহ্য অব্যাহত রেখেছিলেন। এই কবিতায়, Alcyone জানে না যে তার প্রিয় স্বামী Ceyx যুদ্ধে মারা গেছে। তাই Hera, স্বপ্নের দেবতা Morpheus-কে পাঠান, (যিনি ইচ্ছামতো রূপ পরিবর্তন করতে পারেন) Alcyone-এর কাছে। Morpheus তাকে ঘুমের মধ্যে Ceyx-এর ছদ্মবেশে এসে জানান যে, Ceyx আর বেঁচে নেই। এই স্বপ্নের পর দুঃখে উন্মত্তপ্রায় Alcyone সাগরে ঝাঁপ দেন। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা kingfisher বা মাছরাঙ্গা পাখিতে রূপান্তরিত হন ও পরিচিত হন “halcyon birds” রূপে।
প্রাচীন সাহিত্যে কিছু গল্প এরকমও দেখা গেছে যেখানে, কারোর স্বপ্নে অন্য কোন কাছের মানুষকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। অনেক সময় সে ghost/অশরীরী রূপেও দেখা দেয়। এইরকমই একটি ছোট্ট আখ্যানের কথা শোনাই আপনাদের। বীর Achilles-এর কথা আগের পর্বেই বলেছি।

Achilles- The ghost of patroclus

   সেই Achilles-এর সাথে এরকম ঘটনা ঘটেছিল। Achilles’র সাথী Patroclus’র মৃত্যুর পর তাকে সে স্বপ্নে দেখতে পায়। Patroclus ছিল তার অত্যন্ত কাছের মানুষ। সে Achilles’র স্বপ্নে এসে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করার অনুরোধ জানায়। এই স্বপ্ন দেখে Achilles, Patroclus-কে ধরতে গেলে সে শুধুই ধোঁয়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না।
Mythology-তে স্বপ্নের গল্প বলতে বসলে তা সহজে শেষ হতে চায় না। কিন্তু বন্ধু, আজকের মতো যে বিদায় নিতেই হবে। আবার পরের পর্বে এরকমই কিছু আকর্ষণীয় কিছু গল্প নিয়ে চলে আসব। ততদিন একটু অপেক্ষায় রাখলাম…

সুক্তির আগের পর্বগুলি চোখ বোলাতে ক্লিক করুন

https://www.bifocalism.com/dream-the-oneirology-by-sukti-chattyopadhyay/

স্বপ্নধারার পর্বকথা(২য় পর্ব) কলমেঃ শু ক্তি   চ ট্টো পা ধ্যা য় 

স্বপ্নধারার পর্বকথা(৩-য় পর্ব) কলমেঃ শু ক্তি   চ ট্টো পা ধ্যা য় 

 

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *