ছবি গৌতম মাহাতো
দেবপ্রিয় দে-র কবিতাগুচ্ছ
নিভৃতের কবি।নিজের ভেতর যত চোরাগলি তার গন্তব্যের দিকে ছুটে যায়,তারই প্রকৃত প্রশাখার খোঁজ নেন রোজ নিজেরই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।কবিতার ভেতর তাঁর অনন্ত মুক্তির স্বাদ নিতে নিতে পথ চলা।কবি হয়ে ওঠার ইপ্সা থেকে অনেক দূরে তাঁর বসতি।মানুষের ভেতরে দাঁড়িয়ে যে অনুভব তাঁরই অলিখিত সৌজন্যপুরুষ।
পোস্টমর্টেম
শেষ রজনীগন্ধাটি তোমার বাসর সাজিয়েছে।
শেষ বকুলটি স্পর্শ করেছে তোমার প্রিয়ার বক্ষযুগল।
শেষ ড্যাফোডিলটি তোমার ডাইনিং টেবিলের ম্যাডোনা আর সামান্থা ফক্স!
শেষ পদ্মটিও তার দেবতাকে সাক্ষী রেখে হাসতে হাসতে পান করেছে হেমলক।
অভিমানী আমাজন গায়েতে আগুন দিল।একশিশি স্যালাইনও তার মুখে তুলে দিতে পারোনি,উল্টে সম্রাট নিরো সেজে সোশ্যাল মিডিয়ার সার্জেন্ট!!
পোস্টমর্টেমের পর যখন বর সাজতে হবে,তখন শেষ তুলসী আর শেষ চন্দনকাঠটিও অনলাইনে অর্ডার করে তারপর পার্লার যেও।
বৃত্ত চাপের বাইরে
বৃত্তের বাইরেও একটা
সীমানা বৃত্ত থাকে।
সযত্নে লালিত সুপ্ত
বাসনাগুলি রাত জাগে,
ভিজতে থাকে শিশিরে।
ওত পেতে থাকা শৃগালের
মতো সুযোগ পেলেই স্যাঁকরা!
সে খবরগুলি মুচমুচে করে ভাজা হয় রাষ্ট্রের কুনজরে।
ফেরিওয়ালা ফেরি করে রগরগে ঘা।তাই খেয়ে ঢেকুর তোলে কবিতার ভাণ। কবির অশ্রু লিখে চলে জাগরণের গান।
পরাবৃত্তের মাঝে অক্ষরগুলির
দমবন্ধকরা ছটফটানি।
তারাও মুক্তি পেতে চায়।
স্বাদ পেতে চায় বেদ বেদান্ত ত্রিপিটকের………
রাষ্ট্রের নজর পোড়ায়
গ্যালিলিওর ঘর।
বৃত্তের বাইরে হাসে
কণাদ ঋষিবর!
ফসিলস
অতীত -বর্তমান -ভবিষ্যৎ সকলি আপেক্ষিকতার নামান্তর। কাল যা ঘটেছে, তা আজ ঘটবে না কে বলল?ভবিষ্যৎও অগ্রজদ্বয়ের পদাঙ্ক অনুসারী।
টেথিসের গর্ভে হিমালয় বেড়ে ওঠে দশমাস দশদিন। তেনজিং আর হিলারী কি অতীত? তবে লীনা দাসরা কার ঔরসজাত? আজকের বশিষ্ঠ, দূর্বাশারা কোন গোপন গহ্বর থেকে ওম নিয়ে আসে?
মহাকাল প্রতিনিয়ত কলন করে চলে। বর্তমানের চাকায় অতীত পুড়তে পুড়তে রক্তিমা। তারপর কখন মিলিয়ে যায় সবার আলেখে।তৈরি হয় ভবিষ্যতের জীবাশ্ম।
মহানির্বাণ
এক ফোঁটা শিশিরবিন্দু মহাশূন্যচারী,মোহনা পার করে…।
তারপর অনাবিল আনন্দ! পরমকে প্রত্যক্ষের তরে,
নিজেকে রাঙিয়ে তুলি দীপাবলির রাতে।
সে মুহূর্তের জীবনানন্দ তুমি
বনলতার খোঁজে।
খুঁজে পেলে জিরিয়ে নাও
মরুদ্যান ছায়ে।
না পেলেও ক্ষতি নেই,দুচোখে নামুক ফল্গুধারা।
আবারো সাঁতার কাটো
চণ্ডীদাস হয়ে।
“প্রিয়েরে দেবতা করি
দেবতারে প্রিয়ে।”
দার্শনিকের বাটখারা
আপন ঘূর্ণিপাকে পাক খেতে খেতে তীব্রতর যন্ত্রণা আর ক্ষোভ ছুটে চলে একূল-ওকূল।
ভাঙতে ভাঙতে গড়ি আবার গড়তে গড়তে ভাঙি। জন্ম নেয় নিজস্বতা। আবার শুরু হয় ঘূর্ণিপাকের যন্ত্রণা! নিজস্বতারও একটা নিজস্ব ঘর-সংসার প্রয়োজন। তাই আবার দে ছুট…….
তারপর একরাশ সোনালী মখমলে কনেদেখা ক্লান্তি। মহাশূন্য পানে ধায় সে প্রশান্তি।
নিজস্বতা হারিয়ে ফেলে নিজস্বতা খুঁজে পাই।
BEELZEBUL
জলের উপর জল,তার উপর জলকেলি।
কৃষ্ণ কৃষ্ণ রাধে রাধে গোলাপ কোথায় পেলি?
গোলাপ ছিল খোঁপায় বাঁধা উপড়ে এনেছি,
ছিঃ ছিঃ ছিঃ বে-হায়ারে এ কী করেছি?
গোলাপ ছিল বেশতো ছিল শোভে রাধার মাথে,
শতেক নজর শৃগাল হয়ে নাচছে স্যাটান হাতে।
এদিকে সব ছাতায় ঢেকে মালিক ঘুমোয় বেশ।
শীতের বেলা মাশরুমেরা দোলাবে সব কেশ!
লেপের তলায় দোলে ভুঁড়ি নাকও ঘরর ঘর।
এমন সময় ইন্দ্রমশাই করাৎ করাৎ কর।
প্রচণ্ড সে ক্যাটাস্ট্রফি মালিক গেলো জেগে,
ছাতাটা তার ফুটো করে স্যাটান গেছে ভেগে।
হায়!হায়! হায়! মাশরুমেরা সবই গেছে হেজে!
মালিক তবে খাবেটা কী?ভেবেই মরে সেযে।
সে যাই হোক সরজমিনে দেখিগে চল আগে,
হিরোসিমা-নাগাসাকি মুচকি মুচকি কাঁদে।
সবাই হাসে ফিক ফিক ফিক ভেতরে সব ফাঁকা,
তাপ্পি দিয়ে রেখেছি সব নিরাপদে ঢাকা।
ঢাকনা যেদিন খুলবে সেদিন ফাটবে তৃতীয় বোম,
তখন সবাই বরযাত্রী কে বলে ‘হরি ওম’?
ক্রন্দসী
লালনকে যারা হত্যা করলো, তাদের ভালো হোক,
লালনের খেলাঘর যারা ভেঙে দিলো, তাদের ভালো হোক।
লালনের সমাধি থেকেও যারা মাটি চুরি করে নিয়ে গেলো, তাদেরও ভালো হোক।
শুধু একটাই নিবেদন……
লালনের একতারাটা ভেঙে ফেলো না,ওখানে মরাল -মরালী খেলা করে।
লালনের আনন্দলহরিটা বাঁচিয়ে রাখো,নয়তো
প্রকৃতি আর পুরুষের কারবালার মরুপ্রান্তরে হাসান হোসেন পাবেনা জল।
লালনের মন্দিরাটা একবিংশের হোলি না খেলে,
নটরাজ তার নৃত্য ভুলে যাবেন।
লালনকে ভুলে যেও ক্ষতি নেই,শুধু একবার বলো-“এই মানুষে সেই মানুষ আছে।”
ক্ষত
উপত্যকার গভীর থেকে গভীরতম
ক্ষত পার হচ্ছিল ওরা…
কিন্তু তখনো ভাবেনি
উন্মত্ত পিশাচের দল
তাদের গোপন বুলেটে
আরো গভীরতম ক্ষত
সৃষ্টি করবে তাদের বুকে।।
দু -একটি অপরাজিতা
চরণে লুটিয়ে পড়লো।
বুকের ওপর ঝরে পড়ল
আরো কয়েকটি শিউলি।
রাত জাগা পাখীদের সাথে
সারারাত কেঁদে গেল
ঝরনার জল।
যেই না ভোরের আলো ফুটল
বাহারী গোলাপ
এক এক করে
হঠিয়ে দিল অপরাজিতা
আর শিউলির ব্যারিকেড।
ঝরনার কান্না গেল থেমে।
ক্ষতগুলো ঢাকা পড়ে গেলো
তেরঙ্গার মোড়কে!
ক্রিমসন জয়(Crimson joy)
মুকুরে দেখেছে সে তোমার ভালোবাসা –
দশজনে পরকীয়া রটায়।
সহস্র আলোকবর্ষ পলেস্তারার প্রলেপ,
লায়লা চিনেছে ঠিক তার মজনুকে।
তৃতীয় রিংটোন চড়ায়
সপ্তমে মেজাজ,
বালুকায় লেখা নাম
ঢেউ এ চুরমার।
তোমায় আমি ভালোবাসি
বায়বীয় ভাবে।
শৃগাল দিব্যি চতুর
মোরগের পিছে।
কণ্ঠী পড়েছো গলে
নজরে শকুন
যাদবায় মাধবায়
বড্ড খিদে!
দিনমণি পাটে গেলে
তোমার দেখা পাই,
নিশিটি ফুরায়ে গেলে
তোমার বাপের ও দেখা নাইরে
বাপের দেখা নাই!
★★★