আফজল আলি-র কবিতাগুচ্ছ

কবিতাগুচ্ছ

                                                                                              ছবিঃ গৌতম মাহাতো

আফজল আলি-র কবিতাগুচ্ছ

                                                         

                      হুগলি জেলার দশঘরার নিকটস্থ গঙ্গেশনগর গ্রামে জন্ম এবং বাস।  নয়ের দশকের কবি , বর্তমানে কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা এগারো   দীর্ঘ পনেরো বছর কবিতা পাক্ষিক পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীতে থেকে কাজ করেছেন। জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট নামে নতুন একটি ধারণা তথা দর্শন নিয়ে লিখেছেন এবং বর্তমানেও জিরো বাউন্ডারি কবিতা পত্রিকার সম্পাদনা করেন । 
                 পেয়েছেন কবিতা পাক্ষিক সম্মান  , সমিধ সাহিত্য সম্মান এবং টার্মিনাস বই পার্বন সম্মান ইত্যাদি। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে কবির দশটি কাব্যগ্রন্থের কবিতা নিয়ে   কবিতা সমগ্র।পশ্চিমবঙ্গের একাধিক প্রথম শ্রেণীর পত্রিকায় লিখে চলেছেন।

 ভালোবাসার সপক্ষে একটি ব্যঞ্জনা 


পুকুর চুরির ব্যাপারে তখন লিটমাস পেপারের গুরুত্ব বোঝানো হচ্ছিল 
হায় রাম ! 
ভীষণ অপটু আমি কান্দাহারে পৌঁছে দেখলাম 
পৃথিবীর প্রচন্ড অসুখ
মানুষের শেষ নিশ্বাস ঘনত্বের আকার নিচ্ছে 
ইস্পাত কারখানার শ্রমিকদের ঠিক যেমনটা ভেবেছিলাম 
জাদুঘরে পাঠানো হয়েছে 
এমন একটি ঘটনা যেখানে ঘোড়ার বিজ্ঞাপন আছে
এবং ফুসফুসের সংক্রমণ নিয়ে সমগ্র পৃথিবীর মানচিত্র 
অনাহারের বিরুদ্ধে একটি স্তবক
ভালোবাসার সপক্ষে একটি ব্যঞ্জনা 
একটি আলোগ-লতার জড়িয়ে ওঠা
সপ্তকের শেষ পর্যায়ে আবেগ ঝালার মতো বেজে ওঠে 
ফিরে এসেছে সেই প্রেম যাকে দেখেছিলে কড়ে আঙুলের নখে
বাস্তব শলমন খান , পরাবাস্তব শাহরুখ 
অথবা অজয় দেবগন যেভাবে নেচেছিল
তোমরা চেঁচিয়ে বলছিলে ওখানে যেও না , ওটা ঈশ্বরের দরজা 
ভেবে দেখলাম বাতাস প্রকৃতপক্ষে নীতিবাগিশ 
সমর্পণ সান্ত্বনা দেয় 
আমি গাছ কাটার গল্প বলে কতদূর এগোতে পারি

 ছাতা অন্ধ 

ছাতা অন্ধ 
ভীষণ পিপাসা এখন
ভয় এবং কবিতা লেখা 
গরীবরা মরছে 
অথচ 
অথচ
অথচ 
তোমরা দুজন 
দেশ চালাচ্ছো প্রহসন 
বিবেচনায় ডেকে চলে কাক
বিশুদ্ধ নদীর জলে
ধুয়ে ফেলে পাপ
বাঁচতে চাই
বাঁচতে চাই 
বাঁচতে চাই 
কীভাবে বাঁচি

 লকডাউনের প্রহর 

সারিবদ্ধ ভাবে তখন আমরা দাঁড়িয়েছিলাম 
আমাদের শোনানো হচ্ছিল মৃত্যুর গল্প 
আমাদের হাতে সাবান , ভয়মুক্ত হওয়ার মুখে মাস্ক 
জমায়েত এড়িয়ে থাকার সদর্থক ঘোষণায় 
চোখে দেখা যাচ্ছিল না শান্ত অভিব্যক্তির ছাপ
দুশ্চিন্তার গা ঘেঁষে জীবনের হলুদ হয়ে ওঠা 
কী করতে পারি নাকে রুমাল চাপা দেওয়া ছাড়া
আরো সতর্ক ও সাবধান হয়ে থাকো

সব পাখি ঘরে আসে 
সব মানুষ ফেরে ঘরে 
বন্দি জীবনের কিছুটা অংশ নতুন হয় চেনা 
সুখ ওড়ে পায়রার ঠোঁটে , পাখির ঠোঁটে 
অসুখ পুনরায় প্রতিস্থাপিত হয় 
ভালো থেকো তোমরা , ভালো থেকো সব
কোনো এক জীবন আমাদের জন্য দাপিয়েছিল
ভরে উঠেছিলাম সবাই 
এখন মাস্কের আড়ালে পৃথিবীর লকডাউনের প্রহর 
কী হবে কী হবে , করোনা দাঁড়িয়ে আছে দুয়ারে



 একা দেউলিয়া চাঁদ 

দুঃখের ঝোপে আগুন লাগল যখন 
পুনরায় চেয়ে দেখলাম আমাকে
বিকল্প ক্ষত বিক্ষত 
বুঝি নির্মম হয়ে উঠেছে মানুষ 
কোথায় কে কাকে গোপনে ছুরি মারে
বিকেলের বারান্দায় তারা দাঁড়িয়ে ছিল 
আমি ভুল করেছিলাম তখন
মানুষের পাশে মানুষ থাকবে বলে
বুঝেছি এখনো বাকি আছে অনেক 
অনেক কিছু অমিলের 
মিত্ররা শত্রু হবে , শত্রুরা বসাবে কামড় 
আজ সারাদিন বন্ধু খুঁজেছি শুধু
গ্রাম থেকে গ্রামে , শহরে নগরে 
সুযোগ নাই মিলিয়ে নেবার অসফল সফলে
তারা ছিল মানুষের মতো 
তারা মানুষের আচরণে সম্পৃক্ত মানচিত্র
তারা ছিল ভয়ানক ভিতরে ভিতরে 

গভীর রাত্রে বিছানার এক ধারে
বুঝেছো , গভীর রাত্রে বিছানার এক ধারে 
একা দেউলিয়া চাঁদ মনোসংকটে 
সব অপমান নিবিড় বসন্তকাল
ভালোবাসা উধাও আজ ভরসার ভাড়া ঘরে

 গসিপ

স্বপ্নগুলো ছিল । অর্থাৎ ঘুমানোর আগে কয়েক ডলার খরচের কথা ভেবেছিলাম । মানুষের চামড়া নিয়ে গসিপ করার সময় এখন নয়। রাতের তারা অতিক্রম করে যায় বিরহের জল। আরে দূর , কী যে বলেন । কয়েক চামচ হিসেবের বাইরে আমারও ছিল । প্লিজ রাতগুলো থেকে চাপ তুলে নাও , নতুবা ফিরে এসো । কবিতা লিখতে লিখতে কিছুটা বেপরোয়া , আরো গভীরে জটিল অঙ্ক । একা থাকতে হবে জেনে লেখার ধারা পাল্টে ফেলছি । এই তো জীবন আমাকে ছায়া দিচ্ছে না , অনুকূল দিচ্ছে না , দেখছে , দেখাচ্ছে । কী করা যায় ।

 মানুষগুলো ভয়ানক 

ওই দূরে নিরপেক্ষতা বাঁকা হয়ে আছে
ওদের চাউনিগুলো অপর্যাপ্ত
একটা রাত্রি ছোট ছোট পায়ের ব-দ্বীপ নিয়ে আসে
দেখা যায় না
আমি গালে হাত দিয়ে ভাবি
এই দেহ এবং শরীর, এখানেই আছে একটি যৌথ খামার
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে এ কোন অবাস্তব দরজা ঠক ঠক করে
ভেঙে যায় মন
ভেঙে যায় সামনের দিকে সারাক্ষণ
লোকেরা ভয় পাচ্ছে , মানুষগুলো ভয়ানক
হৃদয়ের কথার আড়াল হৃদয় থেকে দূরে
আরো অনেক শোকের জন্য পথে নেমেছে ওরা
সর্বনাশ গল্প লেখে , ওরাই নির্বাচন করেছে দেবতা
আকাশ কালো কাপড়ে ঢাকা
মেঘের অনুকূলে নেমে আসে মেঘ
পৃথিবী থেকে ক্রমেই বিদায় নিচ্ছে মানবিকতা
এরপর আজ দুপুরে আমি কি সেই কবিতাগুলো লিখব
যা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করতে পারবে

 এখন মানুষের কথাগুলো ভয়যুক্ত 

মৃত্যুকেও চিনি না , জীবনকেও চিনতে পারছি না 
তাই কাকের ডাক উপেক্ষা করে হেঁটে চলেছি
কল্পনায় এখন আর প্রমোদ উদ্যান নেই 
কবিতাগুলো বাঁকা ও টেরা 
মানুষের কথাগুলো ভয়যুক্ত 
একদিন আশার সংঘাতে তবু বেঁচে ছিল দোলাচল 
সূর্য ওঠা দেখতাম , সবুজ ছায়ার ঘরবাড়ি 
এখন ধোঁয়া উড়ছে 
কবরের পাশ দিয়ে যেতে যেতে মনে হয় দুঃখের সঞ্চার-ই বুঝি হৃদয় 
বড়ো কষ্টে আছে সবাই , বড়ো কষ্টে আছে মানুষ 
প্রাণের বিনিময়ে তারা চলে গেছে 
এ পৃথিবী হয়ে উঠছে নির্মম , অনেক অন্ধকার ঘিরে

 ভিতরটা অর্ধেক 


ভিতরটা অর্ধেক , অর্থাৎ আমি দেখতে পাচ্ছি না তোমাকে 
এই হিসেব চলতে থাকলে নিশ্চয় ভাবনার ব্যাপারে একমত হতে পারব না 
অনেক পুরনো স্বপ্নের কাছে একদা ছিল আমার প্রকাশ 
তখন আমার চুল পাকা ছিল না 
তখন কব্জির জোর ছিল প্রচন্ড 
আমি হতে চাইছিলাম না যা তোমরা বলেছিলে
ক্রমাগত এক ভিন্ন প্রান্তর গ্রাস করছিল
এখন ধীর গতিতে ট্রেন চলছে , বসে আছি পদাতিক এক্সেপ্রসে 
চারপাশের ধুলো , অন্য ধরণের মনকেমন 
বসন্ত এসেছে 
গ্রীষ্মকালে মানুষগুলো প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠে
এ সময় নাম ধরে ডাকা উচিত হবে না 
কেবল একটি গাছের স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্থবিরতা ভেঙে দিতে পারব
এবং নীল সোয়েটারের দিকে আর না তাকালেও চলবে
কারণ আমি যা লিখছি তা কবিতার অন্তর্গত একটি সিলেবাস মাত্র

                                ★★★ 

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *