দুরন্ত বিজলী-র কবিতাগুচ্ছ

কবিতাগুচ্ছ

                                                                                                 ছবিঃগৌতম মাহাতো
 
দুরন্ত বিজলী-র কবিতাগুচ্ছ

একজন লিটল ম্যাগাজিনের কবি।দীর্ঘদিন ধরে লিখে চলেছেন বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে।তার শক্তিই হল লিটল ম্যাগাজিন।আমরা যারা নতুন বা পুরাতন প্রজন্মের লিটল ম্যাগাজিন কর্মী তাঁরা প্রত্যেকেই এই কবির নিষ্ঠার ওপর কোনও দ্বিমত পোষন করব না বা করবেন না।কবি গদ্যতেও সমান সাবলীল।



                       মা

একঃ

যখন তুই রোদে ছুটিস উদোম  গায়ে 
মনে পড়ে ছেলেবেলার আমার  মায়ে।

দিনদুপুরে ঘুরে ঘুরে ফিরে এলে
চড়চাপড়ে মারত মা কাছে পেলে।

তবুও দেখি রাতে তোর মায়ের মত
ঘুম ভাঙিয়ে আদর করে খাইয়ে দিত।

সে সব দিন দেখতে পাই তোর ভিতরে,
মায়ের জন্য তাই তো মন কেমন করে।

                আলো

দু’চোখে দেখি প‍ৃথিবীর রূপ,
অন্ধকারে আঁধার মহিমা,
দু’চোখ বন্ধ করলে রাত্রি- নিশীথে 
দৃশ্যগুলো চোখের ভিতর এক হয়ে যায়,
দু’চোখের তারা মিলেমিশে এক।

একান্ত নির্জনে খুঁজে পাওয়া ঈশ্বর,
একান্ত নীরবতায় জেগে ওঠা বাণী,
উৎসারিত জলধারা, বরফের চাঁই
খসে খসে নেমে আসা প্রপাত।

ব‍্যথিত হলে মুখে  চোখে  আর্তি,
টুপটাপ ব‍ৃষ্টি, বেদনা ভোলার চুম্বন,
প্রেম-পরাগ, পূজার ফুল।

একটি  কবিতায় রেখে যাওয়া 
এই সব আলো-ভালোবাসা।

                 মা

দুইঃ

সন্তান চেয়েছি বলে
যন্ত্রণা সয়েছি দশমাস-দশদিন,
সেই সন্তান যদি খুনি হয়
নিজেকে কী করে ধরে রাখতে পারি বলো?
নিজের মৃত্যু কামনা করি।

অথবা যদি খুন হয় 
চোখের জলে বুক ভাসাই,
দুনিয়াকে বলি–
কেন, কেন আমাকে শূন্য করে দিলে ?

আর যদি শহিদ হয় 
চোখের জলে ভাসিয়ে দিই বেদি,
জড়িয়ে ধরে সহস্র চুম্বন করি।

                   ★মাটির মানুষ
     (কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য্যকে নিবেদিত )


যার গায়ে মাটির গন্ধ 
সে মানুষ মাটিরই,
যে গানে মাটির মমতা 
সে গান মাটিরই।

যে সেই গান গায়
সেও মাটিরই।

জন্মের পর মাটি.
মৃত্যুর পরও মাটি…

ম‍‍ৃত‍্যু যতই সত্য হোক,
সুরসরিতার অমূল্য ধারায়
সে পরাজিত, তাই
মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে —
‘আমি তোমারই, তোমারই, তোমারই…’

মাটিতে বৃষ্টি মিশে যায়।

                মেঘ

চিঠি এল মেঘ এল,
দুকুল ছাপিয়ে গেল ঢেউ,
রোদছুট মাঠে সবুজ সংকেত এল–

চিঠি যায়, রোদ যায়,
দুপুরের শেষে নরম বিকেল,
তার আলস‍্য থাকে মেধাবী পাখনায়,
কিছু শাদা পালকের শান্তি ও সোহাগ।

আয়ত চোখের আলোয় ঢাকা থাকে মেঘ,
কচি হাতের পাতায় লুকিয়ে থাকে মেঘ,
গাছ-গাছালির ভিতর চাপা থাকে মেঘ।

চিঠি যায়, রোদ যায়,
মেঘ যায় না।

                    প্রেম

মেঘ এলে বৃষ্টির কথা  মনে হয়,
মনে হয় দিন গেলে রাত্রির,
নিথর হয়ে শুয়ে থাকে প্রকৃতি-পুরুষ,
জেগে ওঠে কামিনী সোহাগ।
একা একা রাত্রি জেগে কার কথা ভাবা?
মেঘ নেই, রোদ্দুর নেই,
জ‍্যোৎস্নায় ঢেকে আছে পাতা।

                  অসুখ-বিসুখ

কেউ এল কি এল না 
কী আসে যায় 
               তুমি তো এলে
তোমার স্পর্শটুকু আমার কপালে 
               দীর্ঘ শীতলতা দেবে

হিংসায় মরে যায় যাক
আমার মৃত্যু কামনা করে করুক 
তুমি তো এলে 
               তোমার কামনায় 
আমার আয়ু দীর্ঘ হল

তার কথা থাক তাদের কথা থাক
তোমার চোখের জলে আকাশ মেঘমুক্ত
এবার আলোক ছড়াবে 
সে আলোকে তুমিও জড়াবে 

তোমার চুম্বন এই ঠোঁটে পড়ুক বা না পড়ুক 
সৃষ্টির ওপর তোমার চোখের জল
আমার ঠোঁট ছুঁয়ে যাবে 
পরান জুড়াবে।

               জলের গভীরে

জল আমাকে টানে।
জীবনের মানে খুঁজতে জলে নামি,
অফুরন্ত জলের গভীরে মুক্তো খুঁজি।

শ‍্যাওলার কাদা হাতে লাগে,
শামুকের পেটে চাপ দিই,
খোলস ভেঙেচুরে থলথলে শরীরে ঢুকি—

মাংসপিণ্ড ছিঁড়ে-ছড়ে ছড়িয়ে দিই,
শ্বাস বন্ধ  হয়ে আসার আগে নীলাভ জলের ওপর 
ভেসে উঠি, দুটো হাত রক্তে মাখা।

ধুয়ে ফেলি, রক্ত মুছে যায়, হাতের নরম তালুতে 
ক্ষতচিহ্ন, রক্ত ঝরে. যন্ত্রণা হয়, কঁকিয়ে উঠি–
আবার জলে ডুব দিই।

                                  ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *