ছবিঃ গৌতম মাহাতো
স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ
লিটল ম্যাগাজিনে আজও পরীক্ষা-নিরীক্ষা মূলক লেখা নিয়েই তাঁর একান্ত-যাপন।গদ্যও লেখেন,তবে তাঁর মুক্তি কবিতায়।চলার পথে দৈনন্দিন চিত্রপট ভাবের আদলে হয়ে যায় একান্ত দর্শন।আর তিনি ডুবে থাকেন এক একটা অক্ষরমেরুতে…
বৃষ্টির কাঙাল
হাসছে মাথার সূর্য ।বৃষ্টি নেই,
বৃষ্টি চাই মাটি
এই মাটি বৃষ্টির কাঙাল ।
কুমারী বাঁধের থেকে চোখ তুলে
তাকালে জঙ্গল…
খুব ম্রিয়মান, যেন পুড়ছে জীবন ।
বাতাস-বাহিত মেঘ এইখানে থামাে
এই মাটি বৃষ্টির কাঙাল ।
অভুক্ত সময়
অপেক্ষার দিন-রাত্রি ছিল, ছিল প্লাবনের বর্ণনা
খুব সূক্ষ্ম অণুখাদ্য, আবিস্কার ছিল জীবনের…
তবুও অভুক্ত দিন, অভুক্ত সময়।
চলে গেল আমাদের বর্ণমালা ছুঁয়ে..
আমরা তাদের খাদ্য দিতে পারিনি।
শুধুমাত্র লিপিবদ্ধ করেছি কবিতায়….
কেবল অপেক্ষার কথা শুনিয়েছি
বর্ণনা দিয়েছি প্লাবনের…
কিন্তু নিজেদেরই ঘরে বৃষ্টি আনতে পারিনি
পারিনি ফিরিয়ে দিতে সুষম সময়…
আশ্বাসবাণী
নৈরাশ্য ছড়ানাে মেঘ, তুমি আমার কবিতায় এসাে তােমাকে আশার আলাে দেখাবাে প্রতিদিন | দেখাবাে, বিরুদ্ধ বাতাস ভেঙে পাখিদের
নির্দিষ্ট গন্তব্যে উড়ে চলা…
আরও বহু উদাহরণ মানুষের মধ্যে তুমি পাবে
পাবে তুমি গদ্য-ভঙ্গিমায়, বহুমুখী ক্ষুধার জ্বালায়…
নৈরাশ্য ছড়ানাে মেঘ, তুমি আমার কবিতায় এসাে তােমাকে প্রচুর বৃষ্টি, উপহার অবশ্য দেবােই…
আমাকে এবার আঁকো
ওগাে কুসুম ঢালা মেঘ, নীহারিকার ছবি
আমাকে আঁকো যদি, দেবােই দেবাে প্রেম…
না হয় লেন-দেন, হবেই হবে কিছু
ছুটবাে তােমার পিছু, মাথাটা কিছু নিচু
হােকনা তােমার কাছে, মন যে আমার নাচে…
ওগাে কুসুমটালা মেঘ, নীহারিকার ছবি।
তােমায় দিলাম সবই, আমাকে এবার আঁকো। তােমার কাছেই ডাকো এবার, তােমার কাছেই ডাকো
কবিতা সর্বত্রগামী
কবিতা সর্বত্রগামী, নয় শুধু বাউলের পথ
কুমির ও কুমারী থেকে যেথায় কুহক
আরও দূর নির্বাসনে, ভাঙা-চোরা যেখানে অক্ষর | সেইখানে সান্ধ্যভাষা, ছায়াদের বাড়ি…
কবিতা সেখানে যায় খুব তাড়াতাড়ি ।
কবিতা সর্বত্রগামী, হাট ও হাটুরে থেকে
পথ ও পথিক থেকে,সে ছােটে ট্রেনের মত ধেয়ে | পাশে পড়ে জলাধার, সবুজের হাসি…।
যতই পুরনাে হােক, কবিতা কখনাে নয় বাসি।
তাকে নিয়ে পৃথিবীর ভালােবাসাবাসি…
নামাবলী
হলুদ পুরাণ গাঁথা মৌন নামাবলী
উষালােকে মন্ত্রপাঠে ডেকেছাে আমাদের ।
বিস্ময়ে টিভির ক্যামেরা হাসছে।
কাক ও কোকিল হাসছে তােমার প্রস্তাবে
এটা কি ব্রাহ্মণ্য যুগ, বৌদ্ধ তান্ত্রিকতা !
দেখছো না নাচনী বাঁদরটির গায়েও পোষাক
বিদ্রুপ করছে যেন কাকে
স্বাধীনতা, সভ্যতা, প্রগতির কথকতা আজ পথে ঘাটে এখনি লুকাও তুমি
নইলে, ঠাট্টার বদলে এবার মুখঝামটা খাবে
হলুদ পুরাণ গাঁথা মৌন নামাবলী।
উষালােকে মন্ত্রপাঠে ডেকেছাে আমাদের !
আঁধারলিপি
উড়ে যাও সাদা ভাবনা, উড়ে যাও প্রণয় অভ্যাস মহিষ-আঁধার থেকে তােমাদের বিদায় দিলুম
শ্মশান-প্রক্রিয়া থেকে উঠে এসাে অক্ষরের চিতা নবজন্মে তুমি হবে আমার বান্ধবী..
কাঠ-কয়লায় লেখা হবে প্রেম-উপাখ্যান সাইনবাের্ডগুলি হবে পাতা, বিজ্ঞাপন থাকবে না তখন
দূর হটো রিফিল সুন্দরী, ঝর্ণা কলম
মাহিষ-আঁধার থেকে তােমাদের বিদায় দিলুম।
এসাে ঘৃণা, এসাে জ্বালা, কাছে এসাে কিম্ভূত সময় তোমাকে দেখার জন্য, আলাের-সংকেত ছেড়ে
অপেক্ষা এখন !
★★★