সুকমল বসু-র কবিতাগুচছ
ছবিঃ প্রসেঞ্জিৎ মণ্ডল
সুকমল বসু ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা।৮০-র দশকের একজন নিভৃতের কবি।নিরন্তর কবিতা চর্চার মধ্যে তাঁর অদ্যাবধি গতায়াত।নিজের ভেতর নিজেকে, নিজের কবিতাকে লালন করে চলেছেন…
প্রাচীর তুলেছ দুই হাতে
তােমার জমিন থেকে
এখন অনেক দূরে সরে যায় জল
মেঘ তার বন্দর গুটিয়ে নিয়েছে
শুধু আমরাই
অট্টালিকার হাঁ-এ বুক টিপে পড়ে আছি
কার স্নেহ কবে কার পূজনীয় মুখ
প্রস্তর যুগের মাটি ভেদ করে আছে।
তুমিই তো সীমারেখা
তুমিই তো ব্যবধান,
ভূমিকে করেই দুই ফালা ।
নতুন অধ্যায়
বলুন এই সময় কার জীবনী লিখবেন?
অন্ধকারে হারিয়ে যায় টাঙিয়ে রাখা মুখ
চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াতে চাই
দেওয়াল নড়ে ওঠে
কাকের মথে চালান যায় কচি পাতার সুখ
বলুন বসে নীরবে কার কাহিনী লিখবেন?
গভীর থেকে উঠে আসুক নদীর থৈ জল
মাটি কোথায় সভ্যতার,বাঁচিয়ে রাখবেন!
চারিদিকে নগর খাক ভূতের কোলাহল
সন্ধ্যা হলে অন্ধকার – অন্ধকার প্রেম।
মূল্যবােধ বল কোথায়
শব্দকোষ হারিয়ে যায়
কেউ কি দূর মঙ্গলের প্রেরণা আনবেন।
পৃথিবী নাম পাল্টাবেই একথা জানবেন।
ভিখারী
ভিখারীটা রােজ আসে খঞ্জনী হাতে।
সেই ছােটবেলা থেকে আজকে ৭ই জুন
৩৭ বছর,
আমি তো নিজের কথা
নিজের শব্দ আর ব্যঞ্জনা নিয়ে
আউল বাউল হয়ে কাল কাটিয়েছি।
কত কিছু চলে গেল, যুদ্ধ ও খরা গেল
বিগত বছরে।
তারপর ব্যাংক লুঠ খুন আর রাহাজানি
রোজ লেগে আছে।
রক্তের সাথে যেন গোপন হিংসাগুলি
গাছ হয়ে বেড়ে ওঠে শাখা ডালপালা
বনজ জ্যোৎস্না থেকে গান কিছু ভেসে এল
সুর ভাটিয়ালী।
ও দিয়ে কিই বা হবে
কাঁসাই নদীর জলে নিজেকে লুকোতে চাই
নিজের স্বপ্নঘেরা কত্ত বাড়াতে।
বৃত্ত বাড়েনা তবু –
বেড়ে ওঠে মেঘেদের ঘনচুল ছায়া
ভিখারীর দুটি চোখ দুটো হাত খঞ্জনী
চাল কলাপাতা।
পোষা কাকাতুয়া
সামাজিক ধুলোবালি ঢেকেছে আমাকে
কাল মধ্যরাতে আমাকে ঢেকেছে এক কপর্দক
হাওয়া।
আমি সব ভেদ করে কোথায় অনন্ত নীল
কোথায় যে জীবনের আলমারি ছোঁব
এখন আমার কাছে এই জিজ্ঞাসা!
কাকাতুয়া উড়ে গেছে সন্ধ্যাবেলায়
এখন খাঁচার পাশে আবছা কুয়াশা
তারও অনেক দেখা বাকী থেকে গেছে
সবুজের ভেজা চুল ডুরে শাড়ী ভেদ করে
সে গেছে নতুন এক অদেখার কাছে,
কাল আমায় ডেকে গেছে
আমারই খাঁচার সেই পােষা কাকাতুয়া।
তােমার কাছে
তােমাকে বক্ষ ভেবে ফল চেয়েছিলাম।
তুমি কিছু উপহাস উপহার দিলে
আমি তাকে রাখবো কোথায় ?
আমার তো বাড়ী নেই এই সংসারে।
সারাদিন ব্যথাগুলি
বুকের থলিতে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি
ব্যথাই কি নবান্ন, ধান আমাদের ?
নীল ডাইনী
ম্যাকবেথ
আপনার প্রতীক্ষায় আজও বসে আছে তিনজন
উইচ
যারা একদিন বিশাল প্রান্তরে আপনার ভবিষ্যতবাণী করেছিল ‘’ইট ইজ দ্যা স্লিপ দ্যা ইটারন্যাল স্লিপ বাট ম্যাকবেথ উইল স্লিপ নাে মাের”
আজ তাদের প্রত্যেকের সামনেই একটি করে রক্তের পাথরবাটি আর চোখের দুই তারায় খেলা করছে মহাশূন্যের নাইট ল্যাম্প
তারা আপনাকে যে গ্রহের কাছে নিয়ে যাবে সেখানে জলের ভেতর দেখবেন অসীম শব্দটা নীলাভ ভাষায় কথা বলছে ; একটা পাখির ডানার আস্তরণ থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে মহাকবিতার ফল্গুধারা, আর কিছু মেঘ যার কবরখানার ভেতর শুয়ে আছে মহাজাগতিক হেলেন
প্রত্যেকের সামনেই রক্তের পাথর বাটি
মাননীয় ম্যাকবেথ
এরা সকলেই আপনার প্রণয় প্রার্থিনী
আত্মা
প্রতিটি রাত্রির ভেতরেই একটা অস্ফুট তারা
গান গেয়ে ওঠে
খুব মৃদু তার লয় অথচ গম্ভীর তার ভাষা কী গান গায় সেই তারা
কতবার তাকে দেখব বলে আকাশের কাছে
প্রার্থনা করেছি……. কতবার_______
পরে জেনেছি তারাটি আর কেউ নয়
কোন এক কল্পিত দেবী
অসংখ্য নক্ষত্রের সাথে তার খুব
বন্ধুত্ব আছে
এই মহাকাশ তার জন্ম … তার মৃত্যু
তার সমস্ত অবয়বের গীত লেখা
অথচ আমাকে সে আড়াল করে
আমি তাকালেই তার সেই
অস্ফুট আলাের ভেতর
ধীরে ধীরে জমা হয় মেঘ
প্রচণ্ড বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেয় আমার উঠোন
একটা জলবিভাজিকা
আর্তনাদ করতে করতে বলে ওঠে
আমি যে আর কাঁদতে পারি না
আমার এ শূন্য বুকে অ-ক্ষ-রে-র আলাে জ্বালাে
ক্রমশই আকাশটা ভারী হয়ে আসে …