ছবিঃ গৌতম মাহাতো
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ
মূলত লিটল ম্যাগাজিনের একজন লড়াকু কবি।দীর্ঘদিন নানান লিটল ম্যাগাজিনে আমরা তাঁর লেখা কমবেশি সবাই পড়েছি।তিনি শুধু কবিতা নয় গদ্য ছোটগল্প ও অণুগল্পেও তাঁর বিচরণ সমান।
ছায়া দীর্ঘ হয়
পায়ে পায়ে হেঁটে যেতে যেতে দীর্ঘ হয় পথের মহিমা
প্রতিটি মুহূর্ত যেন পলির সঞ্চয়
শাশ্বত অক্ষরে লেখে লিপিবদ্ধ শস্য সম্ভাবনা।
প্রতিদিন জমে ওঠে স্মৃতির সম্বিত।
পায়ে পায়ে দীর্ঘতর পথ
পথ নয়
চিন্তার ফসল
সমৃদ্ধ করেছে তার দীর্ঘ চলাচল।
চিন্তাপথিক তাকে আরও দূর যেতে হবে
বহুদূর ব্যপ্ত হয়ে আছে তার ইপ্সিত আকাশ
একদিন ঠিক ছুঁয়ে ফেলবে স্বপ্নের মাস্তুল।
ছায়ার কাঙাল
হারানো দিনের মধ্যে খুঁজে যাই নিরুত্তাপ আলোর সকাল
কোথাও তো আছে জানি
জলে স্থলে আকাশের পরিসীমা শেষে
আরও দূরে যে নিথর মায়ার প্রান্তর
সেখানেও গান বাজে তোমারই সুরের ধ্বনিপথে
স্রোতে ভেসে যাওয়া এই অস্থিরতা বিলিয়ে দিলাম
যেখানে আশ্রয় থাকে ততদূর রবীন্দ্রনাথ
ছায়ার কাঙাল আমরা
প্রেমপূর্ণ ছায়াপথে ঘুরে ঘুরে কী ঐশ্বর্য ঢুঁড়েছি কেবল
তুমি আছো আমার রবীন্দ্রনাথ মর্মের অলিন্দ জুড়ে সুরে সুরে শব্দের ছায়াতরু হয়ে।
ছোট হয়ে আসছে বারান্দা
পা থেকে কেউ খুলে নিয়ে যাচ্ছে সময়
বারান্দায় বসে দূরের দিকে খেয়া বাইছে চোখ
কেউ অনবরত কাঁপিয়ে যাচ্ছে শব্দের পাঁজর
ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে পা রাখার বসতি
কোনপথই আমাদের ব্যক্তিগত নয়
হাহাকার তুলে কোথায় গচ্ছা দেবে তুমি ?
একটি বারান্দা নির্জনতা বুনে চলেছে ফুসফুসে
এই বাতাস অম্লজান নয়।
ছায়ার দিকে তাকিয়ে দেখো
পা থেকে কেউ খুবলে নিচ্ছে সুখী চলাচল।
যতদূর চোখ যায়
কেমন কষ্ট হয়
অকস্মাৎ
বিনা নোটিশেই কেউ চলে যায়
অপেক্ষা সাজিয়ে বসে থাকে ছুটে যাওয়া দুরন্ত বালক
যতদূর চোখ যায় তারও চেয়ে আরও আরও দূরে দৌড়ে গিয়ে খুঁজে আনবার এক তোড়জোড় আকুলিবিকুলি করে মনে।
চোখ নামিয়ে রাখে আকাশের কাছে
চোখ খোলে জানালার কাছে
দূরে নয়, যতদূর চোখ যায় ততদূর নয়
যারা যায় তারা থাকে হৃদয়ের খুব কাছাকাছি ।
রৌদ্রের ভিতরে চিঠি
রৌদ্রের ভিতরে চিঠি লিখে কতবার অজান্তেই ছিঁড়ে ফেলেছি ঠিকানাবিহীন ঘুমে
আজও এক স্বপ্নভূক দৃপ্ত মায়াঘরে বাকলের দিন খুলে নিজেকে উজাড় করে ভালোবাসে কেউ
অন্ধকার ঠোঁটে নিয়ে রাত বোনে যে বিনিদ্র চাঁদ
চেয়ে থাকি অপলক তারই দিকে
জানালার পাশে বসে ধানখেত শস্যে শস্যে সোনালি হয়েছে
তোমাকে লিখেছি চিঠি কতবার জ্বরে ও অসুখে
আরোগ্যের শব্দচিহ্ন স্খলিত স্নেহের স্পর্শ আমার সিথানে
তোমার অক্ষরগুলি রৌদ্রের ভিতরে চিঠি ,অনির্বাণ আলো।
আগন্তুক
কেউ আসে মাঝে মাঝে
গল্পস্বল্প করে
তারপর উঠে যায়
শুধু ফেলে যাওয়া স্তব্ধ চায়ের কাপে ধোঁয়াটে আকাশ লেগে থাকে ।
এসব দেখতে দেখতে সময়ের জটিল সুড়ঙ্গ
কখন যে ডুবে যায় ভাবি
একান্ত স্মৃতির নীচে
কেউ এসেছিল
তার ছায়া নিভিয়ে দিয়েছে মৃদু আলো।
যোগ বিয়োগ
আকাশ লিখতেই
একটা পাখি উড়ে গেল এইমাত্র
আমার হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে এক একটি সংখ্যা
মায়াবী উষ্ণতা নিয়ে ছাতার আড়াল চায় অসীমের অনুসন্ধানী চোখ
গাছ লিখতে লিখতে সবুজ হয়ে যাচ্ছে হাত
শস্য আর সন্তানের মায়া ফিরে আসছে
অভিকর্ষ টান
অন্নজলে বেড়ে ওঠা গেরস্থালি।
★★★