হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় এর কবিতা

পরিচিতিঃ হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর লেখনভূমি দেশ,আনন্দবাজার, আজকাল,প্রতিদিন ছাড়াও নন্দন, পরিচয়, অনুষ্টুপ, এবং মুশায়েরা, একুশ শতক,কবি সম্মেলন এছাড়াও অজস্র লিটল ম্যাগাজিন। আশির দশকের এই কবি পেয়েছেন পঞ্চাশটির বেশি ছোট বড়ো পুরষ্কার। নব্বইয়ের দশকে ‘প্রতিশ্রুতি’, ‘ঢেউ’ এবং ‘চিলার’ নামে তিনটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি মনে করেন, নি:সঙ্গ মানুষের অনন্ত জিজ্ঞাসা হল কবিতা।আর এ কবিতাতেই তাঁর প্রকৃত মুক্তি।তাই আজকের বাইফোকালিজম্-এর পাতায় পাতায় থাকল তাঁরই গুচ্ছকবিতার মজলিস মোহর।হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থ –গাগরি ভরে না ঢেউ অরণি বিধিবদ্ধ উপত্যকা ছায়া ফেলি ছবি হয় নিরালম্ব সাদা কালো আ্যলবাম সুলতা সিরিজ নীল আলোর গল্প বসন্ত অপেরা

হী র ক   ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়-র কবিতা

চিত্রঃ ২
কোথা থেকে শুরু করবেন

 

কোথা থেকে শুরু করবেন তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে, কিছুটা ধূপছায়া কিছুটা নিয়ন্ত্রণ
অবশ্যই থাকবে ব‍্যক্তিগত স্মৃতিস্তম্ভের পাশে
হাততালি যদি দিতে হয় আপনাকেই দিতে হবে
কিছুটা অসংবিধানিক হলেও শুরুটা আপনার হাতে শেষটা নয়…
যে যা বলছে বলুক ওদিকে কান দেবেন না
বুদ্ধ কী উপদেশ দেবে ,শংকর মোহাম্মদ প্রোফেট প্রাকৃত না পালিতে
সেসব তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়
কোলগেট স্ক‍্যাম ,চিটফান্ড কেলেঙ্কারি বা আই পি এল বেটিং…..সমবেত হুল্লোড় করোনা আমফান প্রকৃত সুন্দরের কাছে গিয়ে
সব সপ্তমব‍্যাঞ্জন ,তালপুকুরের থোকা থোকা
কচুরিপানা ,আপনি যা চান তার
শেষ দেখে ছাড়তে হবে ,আপনার মনে হবে
যেভাবে আগায় লিবিডোর নীল
যেভাবে তৃষ্ণার দহন
লেলিহান খিদে
প্রকৃতি কাউকে বিমুখ করে না
শুধু একটু ধৈর্য্য একটু সহিষ্ণুতা আর একটু ঋজুতা বিষাদ পাপবোধ যন্ত্রণা
বজ্রাসন কূটকলা পেরিয়ে দেখবেন আপনার ঝলসে যাওয়া পৃথিবীতে ঠিক বৃষ্টি নামবে
কিন্তু তার ও আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে কোথা থেকে শুরু করবেন
আচ্ছা আমি বলছি
মায়ের বাপের বাড়ি থেকে না হয় শুরু করুন…
এই বারটা …

নতুন সম্পর্ক

 

নতুন সম্পর্ক এলে এগিয়ে যেতে হয়
গানের মানুষ আমরা মোচ্ছবে মোচ্ছবে দিন কাটে দু চারটা কবিতা লিখে খায়,তাতে কার কি এসে যায় ,বাউল ফকির হয়ে মাঝে মাঝে গৌর
গোসাই আলখাল্লা টুপি খুলে ফেলি
কেউ কেউ আসে ঝড়ের বেগে হীরে মাণিক ফুল
কেউ এসে দাঁড়ায় প্রকাশিত ঝর্ণায়
আসে যায় দ্বিখণ্ডিত
চোখে চোখ গহন রং মাখা
আহা যেন বিভাবরী
বাতাস থমকে যায় মেঘে মেঘে মীরার ভজন
এঘর সেঘর ঘুরে দুমুঠো সম্পর্ক এসে পড়ে ঝুলিতে,গানের মানুষ আমরা
নতুন নতুন সম্পর্ক এলে ভুলে যেতে হয়
দু চারটা কবিতা লিখি বলে
এগোতে হয় আরেক সম্পর্কের দিকে….

 

কথার উপর

 

কথার উপর কথা রাখায় দায়
শব্দ দিয়ে বানায় ঘরবাড়ি
যেই না দুয়ার আলগা হলো
আজ ভাব কাল আড়ি

আড়ি তবু ই মেল আসে
কাগজ ফুলের পাপড়ি উড়ে ঝড়ে
বোধন শুরু হলেই গান বাজে
পতঙ্গ যে আগুনে পুড়ে মরে

সামনে কত বয়ে যাওয়া নদী
সামনে কত অবাক লাগা চোখ
কেই দেখছে শীতের ঘন রোদ
তুমি বললে সবার ভালো হোক

কিছু কিছু জিনিস ধরা ছোঁয়ার
কিছু কিছু মানুষ আছে খাটি
ইচ্ছে ছিল জ‍্যান্ত নদী হবো
জন্ম থেকে শুধুই দেখি ,মাটি

শোক

 

যে যার মতো নতুন দৃশ্য দেখে
নতুন বাক‍্যের খোঁজে
মাথা কুটে মরে অমলকিশোর
বিষের সঙ্গে
ও পান করে
কেউ কেউ, এদিকে তখন রহস্যের মহড়ায়
জীর্ণ পাতা খসে পড়ে, কেউ তা বোঝেনা
ঝরে যায়, যেমন যায় দিন রাতের গহনে
নদীর ওপারে কেউ কেউ সুখের সাগরে গিয়ে ভাসে শব্দে স্বপ্নে সত্যে তার নেশা লেগে যায়
যে যায় কমলেকামিনী দর্শন করে ফেরেনা কেউ
যে যার মতো বিষ ও অমৃত পান করে
কখনো কখনো আয়নার পারদ মেখে
কেউ কেউ ঘরে ফিরে দেখে
নিষ্প্রদীপ ঘরগুলি ছিন্নমস্তার মতো
মুছিয়ে দিচ্ছে শোক…

 

মিথ্যে

 

আমি জানি ঐ মুখে এখন আর কোনো মিথ্যে লেগে নেই তবু মানুষের তো কৌতূহলের সীমা পরিসীমা নেই, জাল ফেলে দাঁড়িয়ে থাকে
হাতে নাতে ধরবে বলে কত বন্ধু স্বজন
নির্নিমেষ চেয়ে থাকে তালদিঘীর পারে
কে যেন বলল লোকটা নিরূপদ্রব ছিল
তবে বৃত্তের বাইরে যেতে পারতো না কখনো
কোথা থেকে কথা ভেসে আসে
…মনে রাখবেন দেশটার নাম ভারতবর্ষ
কবির মুখে কোনো মিথ্যে লেগে থাকে না
একথা কেউ জোর গলায় বললো না
এটাই যা আফশোসের …

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *