বিপ্লব ভূঞ্যা-র কবিতাগুচ্ছ

পরিচিতিঃ
জন্ম – ১৯৭৫। পেশায় মৎস্য বিশেষজ্ঞ,কবিও। প্রকাশিত কবিতার বই, পরিযায়ী জলরেখা, অপ্রস্তুত ইচ্ছেরা, সকালের নাম অভিমুন্য, আত্মীয় রঙের জলাশয়, বর্ণনা যেমনই হোক ।

বি প্ল ব ভূ ঞ্যা

মেঘের সনাতনে

মেঘের সনাতনে দীক্ষা নিয়েছি জহুরী জল
আকাশ গাঁয়ে ওরা ধর্মান্তর
আবারও পেরাতে শিখেছে বেশ
আরো পেরিয়ে একলব্য সবুজ শহর
তুমি বলেছিলে অঙ্কেও গণিত নিয়ম
সবকিছু পেরিয়ে যায়

এখনো পারিনি এতটুকু নিজেকে পেরিয়ে যেতে ..

বহমান

আপাতত তেমন কিছুই খুঁজছি
আমার সঙ্গে রাজা ও ব্যাধ এক ঘরে শোয়

একদিন রাজার অভিষেক হবে
সাথে সাথে ব্যাধেরও
আমার সাথে এক ঘরে রাজা ও ব্যাধ

আমি তেমন একটা গুরুগৃহ খুঁজছি
যেখানে বুড়ো আঙ্গুলের দান নেই
নেই অস্ত্রশিক্ষা
শুধু ভিক্ষাবৃত্তি আর
নদী বয়ে যাওয়া …

বাতাসে ডেটলের গন্ধ

মৌর্য ধান কেটে আনি
ধাতব দাঁতের ধারে
রিমলেস চশমার নীচে ফিলোসোফি
আর ফাইন আর্ট

ওড়ো ইতিহাস ওড়ো
মৌর্য যুগের ধান কেটে এনে
বাতাসে ডেটলের গন্ধ মাখি !

পানপাতা

অগভীর কাঁচের নিচে জেগে আছো
পলি মাখতে মাখতে তোমাকে মনে রাখে পিতামহ ঘাস
মাঝে মাঝে শব্দেরা শুকতে চায়
আসলে আমিও আর বসন্ত ভাবতে পারিনা
তোর ডোরকাটা জামায়
পলাশের ঠোঁট ধোয়া জল চুইয়ে পড়া দেখে..

বৃষ্টিগান

ডাহুকের ডানায় সূর্য চুরি হলে
সমুদ্র ভাষায় গান
রোদের আঁচলে লিখি অবিনাশ নাম

অবিনাশ আমার পাগলি পিসিকে
গুছিয়ে পরতো বেশ
সরু সরু ভেসে দিতো শোল মাছ
অবুঝ অবিনাশ আর আমার পাগলি পিসি
ঝাউ এর সংসার পেরিয়ে
হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ ….

রোদের ভাসমান উত্তরীয়

ধূপের সাথে ধোঁয়ায়
তুমি প্রতিমা হয়ে ওঠো
চোখের পরিমলে রোদের ভাসমান উত্তরীয়

পুকুরঘাটে সমস্ত ঠিকানা
রেখে যান আমাদের পিতামহ
ওই ধোঁয়ার আগুন শিখেছে অভিসার
স্বপ্নের ঘোর এলে ছুঁয়ে দেখি
অ-সমতল ঠিকানা অক্ষর

পরম্পরা ধোঁয়ার ভেতর
রেখে যাই আমাদের পুকুর ঘাট !

স্থাবর সন্তান

স্বপ্নে তখন রোগা চাঁদ ঘুমিয়ে পড়েছে
কি এক আলোর বর্ষণে
ঈশ্বর অববাহিকা ডুবছে
স্থাবর সন্তান, গুছিয়ে নিচ্ছি সংরক্ষণে
পোষা ঘেউ এর শব্দে পাতার অনিয়ম জল

তোমার শিল্পের কাছে আমার আমাজন পুড়ছে
স্বপ্নের চাঁদ গানওয়ালাকে ডাকো
একটাই সাদা পদ্ম তাঁকে দিয়ে যাই…

লজ্জার রং

সরষে ফুলে সজন এসেছিলে
সাঁতরে গিয়েছি চিরকাল
তবু সাঁতারের রসায়ন তোমার কাছে
সীতা অভিশাপ ফাল্গুনীর স্রোতের ভেতর স্রোত
তোমাকে বলিনি সেসব
শরতের অবশিষ্ট জল
তবুও শালুক ফোটে লজ্জার রং নিয়ে …

সাগর ডুবি বালির বর্ণনা

শূন্য ওয়াটের আলো জ্বালিয়ে
তোমার কলোনিতে বিকেল এনেছো
তাপের কল-কব্জা করতে করতে
আঠার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড
আরো গভীর বিকেল আমি তার ভেতর
পারিবারিক বট লাগাচ্ছি
বট পরিবার না বুঝে বীজের ভেতর
আমাদের সাগর ডুবি বালির বর্ণনা …

নীল পাতা

ডোরাকাটা জানালার বাইরে আলোয়
খোলা পড়ে আছে মহাভারত
গলি জীবনযাপন
পালকও পোষে কেউ পক্ষ কৃষ্ণ এলে
গান্ধারী আঝোর শ্রাবণে কটুকথা পঞ্চমুখ
তুমি খিলখিল হাসি গাছের সবুজে
ধ্বংস লিখছে বহুযুগ
এতটা ছোট অক্ষরমালা উদ্ধার হলে
জানালার এপারে ডোরাকাটা আলো
আমাকে গল্প শেষ নীল পাতা ভাবো…

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *