বা সু দে ব গা য়ে ন
অস্তিত্ত্ব
তোমার অস্তিত্ব মুছে যাচ্ছে
জলের ভেতর,
দিকে দিকে কলামন্দিরে ভেসে যাচ্ছো
দীপের ম্লান আলোয়।
তুমি দু’হাতে ধরে নিচ্ছো শেষ পিণ্ড
আন্দোলিত ঢেউয়ের ইঙ্গিতে।
একদিন আমিও কুড়িয়ে নেবো
তোমার ছিটেফোঁটা
আগামীর ঈশারায়।
জোনাকি আলাপ
ঈশাণী রশ্মিতে নামে শূন্য তাপাঙ্ক
অবোধ রাত ধনুকে টানটান ছিলায়,
পৌষ শরীরে চোখ বোজে লজ্জাবতী।
আদুরে হাওয়ায় শীতের আবেশ
মাটির মুকুরে জোনাকি আলাপ
অপেক্ষার অবসান হয়নি এখনো
অবয়ব ভেসে আছে জলে।
ফেরিওলা
প্যাডেলে বাড়ছে চাকার গতি
গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-শীত
কী হেমন্ত, কী বসন্ত
রাঙা সূর্য মুখ তুললে
নিত্যদিনের পদযাত্রা শুরু
রোদ – ঝড় – জলে
কপাল ছুঁয়েছে বিমর্ষতা
অসহ্যতার উপপাদ্যে
বাস্তবতার জীবন-জারণ
দৈর্ঘ্য প্রস্থে ক্রেতাহীন বিক্রেতা
হাঁক দিয়ে যায়…
বিস্কুট-ঝুরি-নিমকি…
বন্ধু
তোমার জন্য একলা আকাশ
তোলা থাক আমার অ্যালবামে,
বাউল বাতাস জলছাদে
ধরে আছে লাটাই
জীবন ঘুড়ি ব্রত উপবাসী।
ইড়া ও পিঙ্গলা
পেরিয়ে যাচ্ছে চড়াই-উতরাই
ধমনী-শিরায় পুণ্যতোয়া।
তোমার নৈবেদ্যের পবিত্রতায়
পূর্ণ হবে সিংহ-মিথুন
শালগ্রামের পুণ্যতায়
ভরুক তোমার জীবন-নদী।
তাঁত-শিল্পী
অশীতিপর বৃদ্ধ হলেও
তুল ঘুরছে দশ আঙুলে
পা-চাপের অসহ্যতায়
জো পথে ছুটছে মাকু
দিনের সূর্য দুয়ারে এলে
কপালে ঝরছে দরিদ্রতা
প্রহর গিয়ে দুপুর এলে
পলতি ঘুরছে সুতোর ফিটে।
পালক
ফিরে গছে পিউকাঁহা পুরোনো পালক ফেলে
নির্জনে খুঁজে ফেরে বউ কথা কও,
রাতভোর এডাল ওডাল
কখনো ক্লান্তি এলে
মনে জাগে স্মৃতি কথা।
কতকাল কেটেছে বেলা,
থেমেছে কত ঝড়,
জীর্ণ সে বাসায় বৃষ্টি পড়ে আজও
আসে না শুধু অচিন পাখি
বেঁচে আছে ঝরা পালক বুকে নিয়ে।
শাড়ির থান
টান পড়ছে পা-চাপে
ভোর রাতে পাখিরা নিঝুম
দশ আঙুলের আলতো ভাষায়
অধর ছুঁয়েছে মাকু।
হাতার টানে ঝাপ পড়ছে
মোমের প্রলেপ শাড়িতে মিলায়,
ঝুলন মালার লাল আলোয়
খিল ঘুরছে বারবার।
মোড় মুখে বুটির কাজ,
ছিলায় কাঠির নতুন সাজ
ক্রোড় তুলে শাড়ির থান
ভোরের শাঁখ বাজছে পাড়ায়।
মহাকাল
চাঁদ ঝুলে আছে
ঈশ্বরের মাথায়,
মহাকাল দাঁড়িয়ে ক্ষয়িষ্ণু শরীরে
দিকে দিকে প্রাণের সঞ্চার
ধূপের ধোঁয়ায়,
কতকাল প্রস্তর সাধনা,
কত সন্ন্যাসী, বিদর্ভের রাজকন্যা,
চলে গেছে তাঁর কোলে;
সিঁদুর-চন্দন-তিলক কপালে
প্রমাণবিহীন।
তোমার নৈবেদ্য থালা
ভরে যাক উদারতায়,
দেবীত্ব থাকুক আত্ম পরিধিতে
গর্বের আমিত্ব মুছে যাক,
কথিত বাতাসের আবর্তে
বেঁচে থাক তেত্রিশ কোটি দেব-দেবী।
দুঃখ-ঝারি
ভাষাহীন দরিদ্রতা
বাঁধা আছে চাকায়,
বৃষ্টির ছাঁটে লাল মাটির দাগ
কিংবা গ্রীষ্মের তীব্রতা দয়াময়ী হলে
গাল ও কপাল ছোঁয় ধুলোট বাতাস।
এখন সে সান্ত্বনা দিয়ে যায়
বটের ফলের মতো চোখে
হে নির্বেদ রাহু – কেতু,
আমার পরিশ্রম নৈবেদ্য নাও,
অজস্র দুঃখ-ঝারি দিয়ে যাবে
সময়ের দাম।
পরকীয়া
কখনো খোলা ছাদে
মুক্ত বেনী দাঁড়ালে এসে
সুদীর্ঘ সভ্যতা পেরিয়ে
লাবণ্য লাগে চোখে
তুমি শুকিয়ে নিচ্ছো ভেজা পাড়
আনমনা হয়ে।
কতকাল নিরুত্তর
মনে আছে দশ বছরের কথা
এখন কে যেন বিমর্ষ করেছে তোমাকে
নাম না জানা অসুখের মতন।
হলুদ শাড়িতে বেশ লাগে বলে
স্বপ্নালু বেলা চলে যায়…
বুনো চালতা কিংবা বেত বনের দিকে।
পরিধি
অস্থায়ী সবকিছু আঁকড়ে
মাধবীলতা ধেয়ে যাচ্ছে চড়াই
রক্তাক্ত পদচিহ্নেে
খোদিত হচ্ছে সংসার পরিধি
বৃদ্ধ বয়সে কঙ্কাল শরীর
ফুল দিচ্ছে বিধির নিয়মে।
অপ্রবেশ্য গার্হস্থ্যে
কোনোদিন ছুঁয়েছিল কোমল আঙুল
কিংবা মধুকর,শান্তশ্রী স্মৃতি কণা।
এখন বেলাভূমি ছুঁয়ে গেলে বাস্তব ঢেউ
সংসার,অসংসারের কথিত বাতাসে
দুলবে সে।
তবুও পাঁচ তত্ত্বমূলে ঘুরে চলে
পার্থিব অপার্থিব সব কিছুই।