আ তা উ ল হা কি ম আ রি ফ-এর কবিতাগুচ্ছ

আতাউল হাকিম আরিফ-এর
পরিচিতিঃ

রাজনৈতিক ও সামাজিক বাঁক
পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে নিজেকে পরখ করেছেন বারবার ,কৈশোরকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণের সুস্পষ্টত প্রভাব কবির পরবর্তী জীবনকালে ব্যাপিত।প্রগতিশীল রাজনৈতিক,সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলনেও তিনি ছিলেন অগ্রগামী, জীবনের ভেতর জীবনকে খুঁড়ে খুঁড়ে দেখেছেন।তাঁর অধিকাংশ কবিতায় রাজনৈতিক চেতনাবির্দ্ধ,আঘাত করেছেন সাম্প্রদায়িকতা,কপুমণ্ডুকতাকে।পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, প্রেম এবং অনুভূতিজাত শব্দবহ কবির কবিতার উপজীব্য।লেখালেখির সূত্রপাত মূলত স্কুল জীবন থেকেই।স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার পাশাপাশি বিভিন্ন লিটন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় তাঁর অসংখ্য কবিতা,গল্প,প্রবন্ধ,ফিচার।
কবির তিনটি কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে – দাশখতে লাথি মারি/ ভিউকার্ডের রমনীগণ / স্বপ্নের স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে।এছাড়াও যৌথ কাব্যগ্রন্থ রয়েছে সহস্রধারা, মা মাটি ঘ্রাণ, ছায়াতরু, নীলপদ্ম, কাব্যকন্ঠ-১,কাব্যকন্ঠ-২
পৈত্রিক নিবাসঃ শিবপুর, সীতাকুণ্ড পৌরসভা, চট্টগ্রাম।
পড়ালেখাঃ বিএ (সম্মান) এম এ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
চাকুরীঃ প্রজেক্ট অফিসার, ইপসা, চট্টগ্রাম।
সম্পাদিত পত্রিকাঃ সাপ্তাহিক বহমান বাংলা, ফোকাস বাংলাদেশ ( ইংরেজী জার্নাল)
সম্পাদকীয় উপদেষ্টাঃ পোড়াশব্দ (ছোটকাগজ)
পুরষ্কারঃ চন্দ্রমনি দত্ত সাহিত্য পদক-২০১৯, নীলপদ্ম সাহিত্য সন্মাননা-২০২০

আ তা উ ল হা কি ম আ রি ফ-এর কবিতাগুচ্ছ

অনুজীব

বাতাসে উড়ে বেড়ায় অনুজীব
বুকের জমিনে বাজে সুতীব্র হাহাকার,
দৃশ্যমান শবযাত্রা,বিরান উপত্যকা!

ঘড়ির কাটা মন্থর,সময় টালমাটাল
ঈগলের গান সমেত ভবিতব্যের ধ্বণি
বটবৃক্ষের পাতা ঝরে পড়ে,
নরম জোৎস্নার ঘরে শকুনের সহবাস!

সন্দুকেও ঢুকে পড়েছে বিষধর সাপ-
হৃদপিণ্ড লাফাচ্ছে উর্ধশ্বাসে-লাফাতেই থাকুক!
তোমার জন্য রেখে গেলাম-
কনিষ্ঠ আঙুলের ডগায় একবিন্দু রক্তপাত!

আকাশ ভেঙে পড়ে

শূন্যযোজী আমার প্রান্তর
প্রচণ্ডমূর্তি ধারণ করে আছে দুঃখাবহ
কালশিটে, বুকেপিঠে রুদ্রাক্ষমালা!
একজন লীলাবতীর চোখে অশ্রু গড়িয়ে যায়
আমি হেঁটে যায় লীলাবতীর চোখের কালিমায়।
আরো দূরপথে বনপাখিদের নৃত্যগীত,
শাস্ত্রীয় সুরভেদ করে-
একখণ্ড আকাশ ভেঙে পড়ে,আমিও!

যদি বুকে জড়িয়ে ধরো

ধরে নিলাম তোমার সৌন্দর্য ইউরেনিয়ামের খনির চাইতেও দামী
যেখানে ঢু- মারতে চাইবে তামাম পৃথিবীর পরাক্রমশালী ব্যক্তিবর্গ,
তুমি হবে লাসভেগাসের জুয়ার আসরের সবচাইতে বড়দান
কিংবা পেন্টাগনের যুদ্ধ জয়ের কৌশলে সবচাইতে বড় অস্ত্র!
তোমার রূপযৌবনে ভাসতে থাকবে
আরব সাগরের তেল, এশিয়ার গ্যাস, আফ্রিকার সোনা এবং
আমেরিকা ,রাশিয়ার কারখানায় উৎপাদিত রাসয়নিক, হাইড্রোসিল বোমা…
তুমিও হতে পারো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম উৎসমুখ!
এইতো তোমার শক্তি,
মুহুর্তে রূপের আগুনে ছাইভস্ম করে দিতে পারো আমাকে,
তাতেও আমি রাজি,যদি একবার এসে বুকে জড়িয়ে ধরো।

কালো মিছিল

বৃষালী ভূখণ্ডে আজ গুবরেপোকার বিস্তার
সভ্যভুক্তি রঙ্গিন মনুষ্যালয় দিকচক্রে বিভ্রান্ত।
ঘড়িরকাঁটা উল্টো ঘুরছে,ঘুরছেই।
মানুষ,প্রাণী ও বস্তু বিশেষের উল্টোরথ যাত্রা।
প্রেত আত্মার ছায়া ঘুরছে এখানে-সেখানে।

ইবলিশ সহোদরগণের-নেংটো উল্লাস,
রক্তের রং ক্রমশ; লাল থেকে নীল অতপর কালো।
অবশেষে গন্তব্যেরদিকে এগিয়ে যাচ্ছে
একটি কালোমিছিল!

হোক, আপত্তি নেই

জর্জ দ্য ফিফথ ও রাণী ভিক্টোরিয়ার
ছবি দুটি দেয়ালে বেশ সজাগ
খান বাহাদুর সাহেবের উত্তরাধিকারগণের
ঠাঁটভাট এর উৎসও বলা চলে!
যদিও ৭২ বছর আগেই
বৃটিশ উপনিবেশিকতাবাদ এর বিলুপ্ত হয়েছে!
চিন্তায়-মননে আদৌ কি হয়েছে?

এইতো সেদিন…
মারকুইস ষ্ট্রিট, কলিন ষ্ট্রিট,
১০ নং সৈয়দ ইসমেইল লেন
কিংবা
ভিক্টোরিয়া পার্ক দিয়ে হেঁটে যেতে যেতেই চোখে পড়লো
পিতলে শান বাঁধানো
উজ্জ্বল সে ছবি,সে মুখ।
খান বাহাদুরের বৈঠকখানায় যে ছবিগুলো
সাঁটানো দেখেছি পূর্ব বাংলায়-
আশ্চর্য রকম ব্যঞ্জনায় কলকাতা
হয়ে উঠলো বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি।

তবে কি দুই বাংলার সংস্কতি এক ও অভিন্ন?
হোক- আপত্তি নেই।

হলুদ ছায়া

সমগ্র আকাশ হলুদ ছায়ায় লুটে গেছে
আমি বেঁচে আছি আইভিলতায় প্যাচিয়ে,
গ্রিনিচ পার্কের সে বৃক্ষের মতো।
অ্যান বোলিন-‘কুইন অভ এ থাউজেন্ড ডেইজ’
যেমনটি নেচে গেয়ে বেঁচেছিলেন কয়েকটা দিন-
সেই বৃক্ষের ছায়াতলে।

মাঝেমধ্যে বুকের ভেতরটায় শব্দরা ঝাঁপিয়ে পড়ে
স্বপ্নরাও কিছুটা ডালপালা বিস্তার করে-
পুনরায় ফিরে যায়!
শিশুদের পদভারে মুখরিত-
সবুজ মাঠটি যেনো কোথাও হারিয়ে গেছে!
আইনষ্টাইনের থিওরির মৃত্যু ঘটিয়ে যদি
অতিত দেখার যন্ত্রে দেখতে পেতাম
অ্যান বোনিনের নৃত্য!
কিংবা আমার জন্মের পর শৈশবের কিছু মুহূর্ত।

ভেজা মাটির খুব গভীরে

কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়ে পুনরায় পশ্চাৎমুখী যাত্রা
বিবর্তণ,আজকাল আমার কাছে বেশ অবিশ্বাস্য ঠেকছে
ডোরাকৃতি পথেরদাবী নিক্ষেপণ করছে অবিমিশ্র বেদনার ঢেউ,
আকাশে উড্ডীয়মান সাদা নীল স্বপ্নাদ্য সুখগুলো-
ক্রমাগত ছায়াদেহ হয়ে তলিয়ে যায়-
হালাকু যুগের জীবাশ্ম রূপে!
মগ্নচৈতন্য বিরাজিত সভ্যতার অর্থহীন পটভূমি,
হয়তোবা আমি চলে যাচ্ছি ভেজা মাটির খুব গভীরে।

তুই যদি একবার আসতি

রুপালি চাঁদের মুখ ভাসে স্বচ্ছ জলের ছায়ায়-
চৈতালি বাতাসের দোলে-
কলাপাতা বুক দেখায় পিঠ দেখায়।
আমিও হলুদরাঙা বৈকালিক/ রৌদ্রছায়ায় উদাস মনে ভাবছি তোকে,
ভাবছি তোর মনের এপিঠ-ওপিঠ!

কখন যে সময় গড়িয়ে যায়-
কালশশী জীবনের রঙমহল!
কখনোবা একেবারেই রঙহীন।
খঞ্জনীর বাজনা
খোলের চাঁটি
তমাল ঘেরা ছায়াতল
সূর্য উঠা ভোর
স্ফূর্তির আবেগ-
হঠাৎ কখনো কখনো জেগে উঠা
ঘুমন্ত ট্রাক্টর!

সোনামুখি- তুই কি জেগে আছিস?
নাকি মেঘনার স্রোতে তলিয়ে গেছিস!

কখনো কখনো মনে হয় তোকে ছুঁয়েছি,
তবুও
তোর মন ছুঁতে পারিনি!

আমাদের বাঁশঝাড়ে আজ শালিকের
কিছির মিছির,
মুকুলের গন্ধমাদন,
তুই যদি একবার আসতি-
বৈকালিক রৌদ্রছায়ায়!

আত্মজ আত্নার পদধ্বনি

বিকালটায় আড়মোড়া শুয়ে ছিলাম
বাম চোখের পাতা কেঁপে উঠলো তিনবার!
কোনো দুঃখবার্তা অপেক্ষামান কী?
কিছু দূর থেকে শোনা গেছে টমেটো চাষীদের আক্ষেপ,
দুটি দাঁড়কাকের বিষন্ন স্বর!
সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছায়ামূর্তির
বিদ্রুপাত্মক দৃষ্টি
আমাকে টেনে গেলো-কাল্পনিক কালের গহ্বরে
রাইফেল কাঁধে উত্তপ্ত লালচোখের দীপ্ত চাহনি
ঐ চোখে ছিলো মুক্তির আকাঙ্খা-বিলিয়ে দেয়ার প্রত্যয়।
শিয়রে বেজে উঠলো আত্মজ আত্নার পদধ্বণি!
আমার হাত ধরে বললো-
ভূখণ্ডের ত্বক ছুঁয়ে দেখো,ভালোবাসো।

বদলে যাবো

মাঝিমাল্লাহীন ডিঙি নৌকার মতো বেসামাল সময়টা
হয়তোবা কেটে যাবে খুব শীঘ্রই
কুয়াশাভেদ করে জেগে উঠবে রূপসী ভোর
প্রকৃতির সজীবতায় আসবে নতুন দিনের বার্তা।
নীলমণি আকাশে উড়ে যাবে গাংচিল,
সূর্যলোক ঘোষণা করবে উজ্জ্বলিত আশাবাদ।
এবার নিশ্চয়ই আমরা বদলে যাবো,গাইবো সাম্যের গান।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *