নি বে দি তা-র মেঘ-বৃষ্টি-রোদ্দুর

পরিচিতিঃ কর্মজীবনের বিপুল ব্যস্ততা সত্ত্বেও শুধু ভালবেসেই লেখালেখি করেন,ভালবাসেন কবিতা পড়তেও। পড়াশোনার পাশাপাশি খুব ছোট্ট বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু, আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ— যার নেপথ্যে ছিলেন নিবেদিতার সংস্কৃতিমনস্ক বাবা-মা। শৈশবে সেই যে সোনার কাঠি ছুঁইয়ে তাঁরা জাগিয়েছিলেন তাঁদের প্রিয়কন্যার সুপ্ত সৃজনশীলতা, আজও তা অব্যাহত। কবিতাই নিবেদিতার প্রথম ও শেষ প্রেম। কর্মসূত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বীমা সংস্থার উচ্চপদাধিকারী নিবেদিতা বর্তমানে বর্ধমানে থাকেন। দক্ষিণের বারান্দা থেকে পাঠক সমাদৃত তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘দক্ষিণের জানালা’ ও ‘মেঘেরা সপ্তপদী’

 

নি বে দি তা-র মেঘ-বৃষ্টি-রোদ্দুর

আষাঢ়স্য প্রথম দিবস

১.
টিনএজার মেয়েটি আজ
মেঘের সঙ্গী হতে চেয়েছিল।
কিন্তু সামনেই পরীক্ষা,
মায়ের বকুনিতে বেরোতে পারেনি।
তাই সজল চোখে
ছাদের কার্নিশে চিবুক রেখে
উড়িয়ে দিল উড়ো চিঠি।

২.
আর পাঁচটা দিনের মতোই
কর্মব্যস্ত দিন।
ক্যাজুয়াল লিভ নেওয়ার
কোনো উপায় নেই।
তবু ল্যাপটপে এসে পড়েছে বাদলের ছায়া…..

ব্যস্ত আঙুল স্মার্টফোনে
ইউটিউব সার্চ করে
রবীন্দ্রনাথকে খোঁজে।

আবার এসেছে আষাঢ়…
আজ আষাঢ়ের জন্মদিন।

জন্মান্ধ

 

বাগানের এক কোণে ফুটেছিল
ছোট্ট একটা ফুল।
রূপ ছিল না তার
তবু যৌবন এসেছিল।
তার রঙ ছিল না,
তবু রঙিন হওয়ার বাসনা ছিল।
সে সূর্যের কানে কানে বলেছিল
আমার তুমি প্রেমিক হবে?

দিনের শেষে এগিয়ে যাই
বাগানের সেই কোণে।
দেখি ছোট্ট ফুল সে ঝিমিয়ে পড়েছে।
মৃত্যুর প্রহর গুনছে।
ক্রোধে ফেটে পড়ে বললাম-
কে তোমার খুনি?
ছোট্ট ফুল,ফুরিয়ে যাওয়া ছোট্ট ফুল
কাঁদতে কাঁদতে বলল
বলতে পারব না,
বলতে পারব না তার নাম,
তাকে যে আমি ভালবেসেছি।

ফিরে এসো…

 

ফিরে এসো
বৃষ্টি-ভেজা ভোর,
ভিজে শালিখ,
খামখেয়ালি মেঘ।

ফিরে এসো
অফিস না যাওয়ার ইচ্ছে,
স্কুলের ‘রেনি ডে’,
প্রথম কদম ফুল।

ফিরে এসো
মেঘলা দিন,
অলস দুপুর,
শূন্য মাঠ।
আজ কৃষ্ণকলি
বৃষ্টি-চোখে ডাকছে তোমায়
‘….বন্ধু ফিরে আয়…’

তর্কে বহুদূর…

 

তর্ক করতে বড়ো ভালো লাগে
আমি তো জানি
আকাশ নীল,
জলের কোনো রঙ নেই,
বাতাসকে দেখা যায় না।
কিন্তু
যখন তুমি বলো
নীল আকাশ, বর্ণহীন জল
আর অদৃশ্য বাতাসের কথা,
তখন আমার বলতে ইচ্ছে করে
পশ্চিমের আকাশ তো এখন লাল,
আমাদের হাতে রঙিন কোল্ডড্রিংক্স,
মিনিবাসের কালো ধোঁয়া দেখিয়ে বলি
এই তো বাতাস….

আসলে তোমার সঙ্গেই
তর্ক করতে বড়ো ভালো লাগে।

পরীক্ষা

 

মেয়েটির পরীক্ষা বড় প্রিয় ছিল…
সারা বছর ধরে সে শুধু অপেক্ষায় থাকত
কবে পরীক্ষা হবে।
উইকলি টেস্ট, মান্থলি টেস্ট,
সারপ্রাইজ টেস্ট,
হাফ ইয়ার্লি, অ্যানুয়াল…
প্রশ্ন চেনা হোক বা অচেনা
সুন্দর করে লেখা সাজানো উত্তরপত্র।
মুগ্ধ হতেন টিচাররা।

মধ্যদিনে আবার পরীক্ষা এলো।
জীবন এখন ব্যস্ত, ছন্দহীন
তবু ভয় পায়নি পরীক্ষাকে।
সুদর্শন ডাক্তার আশ্বাস দিলেন
ছোট্ট একটা অপারেশন,
তারপর রুটিন বায়োপসি।
জীবনের সব পরীক্ষার মতো
রেজাল্ট এবারেও পজিটিভ।
তারপর একের পর এক পরীক্ষা।
জীবন ভেসে যায় পরীক্ষা স্রোতে…

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *