আ মি রু ল    বা সা র-র গুচ্ছকবিতা

লেখক পরিচিতিঃ জন্মস্থান বাসার পরিবার, পলাশপোল, সাতক্ষীরা। জন্ম- ৩ মার্চ ১৯৭১ । পিতা আব্দুস সোবহান, মাতা রাহিলাতুন্নেছা বিবি। স্ত্রী- শাহনাজ রুবী, সন্তান-আহসান বাসার কাব্য ও আকিব বাসার মুগ্ধ।
বড়ভাই ৩ জন, বড় বোন ৩ জন, ছোট ভাই ২ জন
লেখালেখির বিষয়- কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ।
ছোটবেলা থেকেই লেখালেখি । স্কুলজীবন পেরুবার আগেই সম্পাদনায় হাতেখড়ি। ১৯৮৭ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রথম পত্রিকা ত্রৈমাসিক ইক্ষণ সম্পাদনা। পরপর ১১টি সংখ্যা প্রকাশ।
১৯৯১ সালের পর সম্পাদিত সাময়িকপত্র – ছাড়পত্র, গণনাট্য কেন্দ্র পত্রিকা, বৈশাখের কবিতাপত্র।
১৯৯৩ সাল থেকে সম্পাদিত শিল্প, সমাজ ও সাহিত্য বিষয়ক ছোট কাগজ সাম্প্রতিক, ইতোমধ্যে ২১টি সংখ্যা সম্পাদনা সম্পন্ন ।
প্রকাশিত গ্রন্থাবলী
কাব্যগ্রন্থ- নীলচোখ (১৯৯২), নীলঅরণ্য (২০০৮), কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ (২০১০), কবুতর উপাখ্যান ও অন্যান্য কবিতা (২০১২), অনুশীলন (সম্পাদিত-আবৃত্তির জন্য নির্বাচিত কবিতা সংকলন, ২০১০), কাঁঠালিচাঁপা (সম্পাদিত- নির্বচিত গল্প সংকলন, ২০১১), কমিউনিজমের মূলনীতি ও অন্যান্য প্রসংগ (২০১১,সম্পাদিত), লিটলম্যাগ কবিদের নির্বাচিত কবিতা ( সম্পাদিত-২০১৩), প্রেমের পদাবলি, ২০১৭ ( সম্পাদিত) অন্যতম।
সাংগঠনিক কাজ
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ঈক্ষণ গ্রন্থাগার ও পাঠচক্র সংসদ, সাতক্ষীরা (১৯৮৩), সেবাসংঘ, পলাশপোল, সাতক্ষীরা (১৯৮৭), সাতক্ষীরা থিয়েটার, সাতক্ষীরা (১৯৮৭) সদস্য বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ঢাকা (১৯৮৯), সদস্য গণনাট্যকেন্দ্র, ঢাকা ( ১৯৯১) প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক-সাম্প্রতিক সাহিত্য ও আবৃত্তি সংসদ, সাতক্ষীরা নাট্যদল, সাতক্ষীরা ( ১৯৯৪ ), কেন্দ্র্রীয় পরিষদের নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ (২০১১ থেকে), প্রতিষ্ঠাতা প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র “সাম্প্রতিক-ঢাকা”,(২০১১)
সত্ত্বাধিকারী-সাম্প্রতিক প্রকাশনী।
পুরস্কার ও সম্মাননা – পল্লী কবি জসিমউদ্দীন স্মৃতি পুরস্কার, বসিরহাট নাট্য আকাদেমী সন্মাননা, পশ্চিমবঙ্গ, বর্ধমান লিটলম্যাগাজিন সম্মাননা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

 

আ মি রু ল    বা সা র-র গুচ্ছকবিতা

 

প্রজাপতি উড়ে যায় দূরে…

এই শীতে- সবুজ অরণ্য ঢেকে রেখেছে কুয়াশাচাদর;
দূরে-নিরব বরস শিশির কাঁদে বুনো ঘাস ফড়িং; অপলোখ চোখে।
গ্রামময় সন্ধ্যারাতে বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি অথবা
সুমধুর সুর করে ডেকে ওঠে মাগরিবের আজান,
ধূপজ্বলে অন্তর জুড়ে, ধোঁয়া ছাড়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান ।

শীতে সবুজ অরণ্য ঢেকে রেখেছে কুয়াশাচাদর;
রাতভর জোনাকীর ছুটাছুটি; ছোটে-
কখনও হাওয়ায় ভাসে, কখ
সে আলো হয়ে ফোটে , করে লুটোলুটি

শীতের রাতে পাড়াগাঁর রঙ হলো কালো; তাতে
কার হলো ক্ষতি? সরিসৃপ আঘাতে সব হলো
এলোমেলো, ধর্ষিতা হলো কিছু প্রজাপতি।
নীল প্রজাপতি, পাখনায় মেলে না সাত রঙ, খেলে না
সে ওড়ে না , আর কভু আকাশে; ডালিমের
ফুল হয়ে- গোলাপের বুক ছুঁয়ে দুই পাখা
মেলে না বাতাসে ।

এই শীতের রাতে, শিয়ালের ডাক শুনে
জেগে ওঠে গ্রামময়; প্রজাপতির ঘুম তবু ভাঙে না,
জোনাকিরা দল বেঁধে আলো দেয় সহসা,
প্রজাপ্রতির মান তবু ভাঙে না ।

কোনো ফুল ফোটে না-কোনো পাখি ডাকে না।
জোনাকিরা ফিরে যায় গৃহে সব । শিশুগুলো
প্রজাপতি-প্রজাপতি শিশুশব আনন্দে তারা
আর হাসে না ।

এই শীতে … জীবন থেকে প্রজাপতি ওড়ে যায় দূরে..

 

অফিস ফেরত রিক্সা

 

সারাদিন অফিসের ব্যস্ততা, ব্যস্ততার সময়-
শুভ্র সকাল, ক্লান্ত দুপুর আর শ্রান্তবিকেল বেলা
পেরিয়ে যায় অবলিলায়।
সন্ধ্যায় রিক্সার নুপুর বাজিয়ে বাসায় ফেরা
সারি সারি রিক্সা- রিক্সার নগরী
ট্রাফিকজ্যাম সিটি বাসের জোরালো হর্ণ-
অগ্যতা সহনীয় প্রতিদিন।
বড় সড়ক বড় বড় মোড় পার হয়ে চলে যায়
রিক্সা সরু গলি পথ ধরে।
সোডিয়াম বাতি জ্বলে থাকে দূরে ,
আর সন্ধ্যার আলো-আধারীতে সুবাস বিলিয়ে দেয়-
এলাকার গলি মোড়ের শিউলী ফুল গাছ।
আহা শিউলী ফুলের ভেজা গন্ধ- আহা
মন ভরিয়ে দেয়। সারাদিনের ক্লান্ত মন
জেগে উঠে পূর্ণবার।
রিণঝিন নুপুর বাজিয়ে, গলির মোড়ে থেমে যায়
আমার অফিস ফেরত রিক্সা । আমি ভাড়া মিটিয়ে
নেমে পড়ি রিক্সা থেকে ।
এক পা দু পা করে এগিয়ে যায়
আমার প্রিয়মুখের ঠিকানায়, আমার পুত্র, আমার স্ত্রী
যারা বসে থাকে আমার আশায় ।

 

চুরি করা অধিকার

 

সহযাত্রীর জাল ছিড়ে বেরিয়ে আসা পথিক
বিষয়-ব্যকরণহীন জীবন কাটে
জীবনের দুপুর বেলায়।

পাখিদের দিগন্ত ছুঁয়ে ওড়াওড়ি
টেনে নিয়ে যায় আমার দুরন্ত সময়
কী আছে কাল সকাল বেলার তালিকায়
জানিনা তা; সারাটা জীবনতো
এরকম গেল, এবেলা ওবেলা, বিকেল সন্ধ্যে বেলা

বেঁচে থাকার হাজারও শব্দমালা
গুমরে কাঁদে বুকের ভিতর; প্রকাশ পায় না তা

পায়ে পায়ে ভয়ানক অন্ধকার নামে
রাত্রির শহরে। চোখে , বুকে, মুখে
তারই প্রতিচ্ছবি দেখি শতদল জনতার মাঝে

কী ভাবে এগুবে এখন এই চুরি করা অধিকারে ?

 

রঙ ছড়ানো ভাষা

 

এ যাবত যত কথাই হলো
কিছু তার মন্ত্র মন: মুগ্ধকর
যদি আমি তা ভাবি; কিছু সময় তার
আর না ভাবলে
থাকে না তার যথাযথ অধিকার

রঙ ছড়ানো সূর্যের আলোয়
হাত বাড়িয়ে কৃষ্ণচূড়া
চোখ জুড়ানো ছড়িয়ে পড়ে সে রঙ

রঙ হারালো ভাষার খোঁজে
একা জেগে রয় আপনার মন।

 

শব্দে ও শপথে

 

দুপুরের র্নিজনে ক্লান্ত শহর
বাতাস নেই, ফুল নেই, পাখি নেই

কনক্রিট শরীরে দাঁড়িয়ে
থাকে পাশাপাশি ইমারত
সীমাহীন তৃষ্ণায় জেগে ওঠে কালোমেঘ

পেমহীন অবাক দুপুর
আমার ক্লান্ত করে শব্দে ও শপথে।

 

 

কতদিন আর

 

সাজানো শব্দের অন্তরীখে
জীবনের উচ্চারিত বর্ণমালা
কতদিন শাসন কোরে বন্ধ কর- অধিকার
কতদিন এইদিন অব্যাহত

আলো নেই
গান নেই
সুর নেই
শুধু রক্তে রাঙা করে দুই হাত
শবহারা জননীর কতদিন হাহাকার
অবিরাম কষ্টেরা
বেঁধেছে বাসা

এই অবেলায় ভাবি বসে একা একা
এই দিন কতদিন আর ?

 

 

আগামী সকাল

 

আমাদের গল্পগুলো আলমারির মধ্যে বন্দী করে রেখে
বাতাসে ভেসে বেড়ানো শব্দ সাঁতার কাটে,
সবুজ ঘাসের বুকে হেঁটে লাফিয়ে চলা খরগোশটা
ক্রমশ ক্লান্ত হয়ে যায়, তবু আলো ছড়ায় সোনালি দুপুর।
তোমাদের নদীর পাড়ে জলঘেসে অসংখ্য দাঁড়িয়ে থাকে
বাতাসে দুলতে থাকে হেলে পড়া কাশফুল,
মাটির শরীর, ক’ফোটা ক্লান্ত নিয়ে অলস পথিক
পাড়ভাঙা শ্রোতের শব্দে সূয্যি ডোবে পশ্চিমে।
আমাদের রাত্রি যাপন অন্ধকারের হরিণচোখে
জোছনার আলোগুলো দূরে বসে দেখে অপলক,
নিঃশব্দের কাতরায় ঘুম, জেগে ওঠি একা
ক্রমশ এগিয়ে আসে সন্তর্পণে আগামী সকাল।

আমার ঘুমচোখে

 

জানালার ফাক দিয়ে সূর্য ওঠে আরেকটা সবুজ সকাল
দূরের কার্ণিশে বসে দুপলক চেয়ে দেখে ভোরের কাক
ঘোলা ঘোলা আকাশে বিচ্ছুরিত কতক আলোক
বারান্দার গ্রীলে চড়ুই পাখির চঞ্চল ওড়াওড়ি মুখে ডাক
ছাদ থেকে নিচে ঝুলে আছে একগোছা মধুমন্জুরি
তেমাথার বাক দিয়ে গলিতে বেজে চলে রিক্সার নূপুর
ব্যস্ত মানুষের চলাচল বাড়ে এ মহল্লা জুড়ে, শহরেও
ঘুম ভাঙা চোখ মেলে ডেকে ওঠে আমার কবুতর।

 

কল্যাণ

 

সূর্যর দিকে হাত বাড়িয়ে দাও
এ ধরনী আলোময় হয়ে ওঠুক
বৃষ্টির দিকে হাত বাড়িয়ে দাও
এ অরণ্য সবুজময় হয়ে ওঠুক।
আকাশের নীল রঙের ছোঁয়া
মমে মনে তারই প্রশান্তি হাওয়া
ছড়িয়ে যাক মানুষে মানুষে।
আরক্তিম দিন যাপনের কালে
সদা জাগ্রত মনুষত্য সকল প্রাণ
আমাদের রাত্রি কাটুক আলোয়
দিন শেষে মানুষের হোক কল্যাণ।

 

বৃষ্টি-দোলা

 

বৃষ্টি, দোলা, বোন আমার
একুশের অক্ষরগুলো গায়ে জড়িয়ে
বিশ বাইশের মধ্যিখানে
কোথায় হারিয়ে গেলি বোন
কবিতার শব্দমালার স্পন্দনে
বুকের মধ্যে যে বীজ রোপিত ছিল
তা প্রস্ফুটিত হবার আগেই-
গোলাপের নির্যাসকে স্পর্শ
করার আগেই-
চন্দ্র আলোয় উদ্ভাসিত হবার আগেই-
কেনো ? কেনো ? কেনো ?

শহীদ মিনারের পাদদেশে আর
থাকবে না তোমাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি
কবিতার শব্দমালায় উচ্চকিত হবে না
তোমাদের কন্ঠস্বর
তবু শিমুলের লাল রঙের ভিতরে
শহীদ মিনারের কালো অক্ষরে অক্ষরে
তোমরা বেঁচে থাকবে
বোন আমার,
তোমরা বেঁচে থাকবে বাবাÑমায়ের
চোখের জলে, আর আমাদের হৃদয়ের
গভীরে। অক্ষম বাসনার অন্তরালে।

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *