সি দ্ধা র্থ সিং হে র হাফ ডজন কবিতা

পরিচিতিঃ সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। ১৯৬২ সালে। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম ছড়া ‘শুকতারা’য়। প্রথম গদ্য ‘আনন্দবাজার’-এ। প্রথম গল্প ‘সানন্দা’য়। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়। মামলা হয় পাঁচ কোটি টাকার। ছোটদের জন্য যেমন লেখেন, তেমনি বড়দের জন্য লেখেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুশো আটানব্বুইটি। তার বেশির ভাগই অনুদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বেস্ট সেলারেও উঠেছে সে সব। একক ছাড়াও যৌথ ভাবে সাড়ে পাঁচশোর ওপর সংকলন সম্পাদনা করেছেন লীলা মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা দেবী, শংকর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভঙ্কর সিংহের সঙ্গে। তাঁর লেখা নাটক বেতারে তো হয়ই, মঞ্চস্থও হয় নিয়মিত। তাঁর শ্রুতিনাটক নিয়মিত করেন জগন্নাথ বসু থেকে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়রা। তাঁর কাহিনি নিয়ে ছায়াছবিও হয়েছে বেশ কয়েকটি। গান তো লেখেনই। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি বাংলা ছবিতে। তাঁর ইংরেজি এবং বাংলা কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কয়েকটি সিনেমায়। বানিয়েছেন দুটি তথ্যচিত্র। লিখেছেন বেশ কয়েকটি ছায়াছবির চিত্রনাট্য। আশির দশকের অত্যন্ত জনপ্রিয় এই কবির লেখা পাঠ্য হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে। আনন্দবাজার পত্রিকার এই প্রাক্তনী ইতিমধ্যেই পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, স্বর্ণকলম পুরস্কার, সময়ের শব্দ আন্তরিক কলম, শান্তিরত্ন পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, নতুন গতি পুরস্কার, ড্রিম লাইট অ্যাওয়ার্ড, কমলকুমার মজুমদার জন্মশতবর্ষ স্মারক সম্মান, সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, বিশ্ব মৈত্রী পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের ‘শ্রেষ্ঠ কবি’ এবং ১৪১৮ সালের ‘শ্রেষ্ঠ গল্পকার’-এর শিরোপা। আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত তাঁর ‘পঞ্চাশটি গল্প’ গ্রন্থটির জন্য তিনি সম্প্রতি ‘সৃজনী ভারত সাহিত্য পুরস্কার’ পেয়েছেন। আজ বাইফোকালিজম্-র পাতা জুড়ে রইল তাঁরই হাফ ডজন কবিতা।

 

 সি দ্ধা র্থ   সিং হে র  হাফ ডজন কবিতা

 

কেন বাড়ি ফিরব

কেন বাড়ি ফিরব?

এমন কি কেউ আছে

যে শুধু আমার জন্য অপেক্ষা করবে!

বাড়ি ফিরতে না-পারলে ফোন করে জানাতে যাব কেন?

না-ফিরলে কেউ কি সারা রাত জেগে বারবার ঘড়ি দেখবে!

নাকি মোবাইলের বোতাম টিপবে!

‘রাত হলে বাড়ি ফিরতে হয়’

শুধু সে জন্য আর বাড়ি ফিরব না।

যার নূপুরের শব্দে গোটা বাড়ি ঝনঝন করে বেজে ওঠার কথা

সে যদি চাবি দেওয়া পুতুল হয়

কেন বাড়ি ফিরব?

ফিরতেই যদি হয়

হাওয়ায় ওড়া কোনও আঁচলের কাছে ফিরব

অথবা ফিরব কোনও লাজুক ইশারার কাছে।

 

কী করে বলি

হাইকম্যান্ডকে কী করে বলি!

ও রকম দু’-চারটে খুন সবাই করতে পারে

কিন্তু এক কোপে কারও মাথা নামিয়ে

সেই মুণ্ডু নিয়ে কখনও কি ফুটবল খেলেছেন প্রকাশ্য রাস্তায়?

তবে?

ও রকম দশ-বিশটা ধর্ষণ সবাই করতে পারে

কিন্তু আপনার নাম শুনলেই

মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে যাবে মেয়েদের স্কুল, পাপড়ি গুটিয়ে নেবে ফুল

সে রকম বিভীষিকা কি ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন চারিদিকে?

তবে?

আপনাকে আসতে দেখলে

আশপাশের বাজার, চৌরাস্তার মোড়

কিংবা অফিসপাড়া

খরগোশ হয়ে যেতেই পারে

কিন্তু ওদের ভিতরের বাঘটাও যে মাথা নুইয়ে কোণে গিয়ে লুকোবে

সে রকম কুচকুচে কালো মেঘে কি ঢেকে দিতে পেরেছেন গোটা আকাশ?

তবে?

হাইকম্যান্ডকে আমি কী করে বলি

এ বার অন্তত ভোটে দাঁড়ানোর জন্য আপনাকে একটা টিকিট দিক!

 

মাঝখানে

মাঝখানে বাবি থাক, তুমি দেয়ালের দিকে

পড়লে না হয় আমিও পড়ব

খাটের পায়ে তো মাত্র ওই ক’টা ইট

সব ইটই তো মাথা তুলেছে আমাদের মাঝখানে।

কত দিন হয়ে গেল মুঠোতে বকুল এনে

বলি না আর— গন্ধ শুঁকে দ্যাখো

গলির বাঁকে মিলিয়ে যাওয়ার আগে দেখি

তুমিও দাঁড়িয়ে নেই আগের মতো…

মাঝখানে বাবি থাক, তুমি দেয়ালের দিকে

যত দিন না বাবিকে রং-তুলি দিয়ে বসিয়ে

পাশের ঘরে যাব

চুপিচুপি, তুমি আমি।

 

বিয়েবাড়ি

বিয়েবাড়িটা মাতিয়ে রেখেছিল সে।

ভীষণ ছটফটে, মিশুকে

কিছুক্ষণের মধ্যেই জেনে নিলাম তার বাড়ি, স্কুল

গানের স্কুল, এমনকী কোথায় টিউশনি নেয়, তাও।

ক্লাস নাইনে পড়ে

দল বেঁধে বেঁধে সব মেয়েরা চলে যাচ্ছে, সে কোথায়!

উলটো ফুটে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম

বন্ধ হয়ে গেল স্কুলের ফটক।

আধ ঘণ্টা আগেই বাণীচক্রের সামনে আমি হাজির

রবিবার ওর গানের ক্লাস

কিন্তু তিনটে তো বেজে গেছে

তবে কি ওর কোনও অসুখ-বিসুখ হল!

যেখানে ও টিউশনি নেয়

সেই গলির মুখে ঘোরাঘুরি করলাম ক’টা দিন

এত অন্ধকার কিচ্ছু দেখা গেল না।

ওর হাতে তো একটা মোবাইল ছিল!

ওহোঃ, কেন যে নম্বরটা নিলাম না

না-হয় একটু হ্যাংলাই ভাবত!

ক’দিন পরে আবার একটা বিয়ে

এবং সেখানেও যথারীতি সে।

প্রথমেই বললাম, আগে আপনার নম্বরটা দিন তো…

উত্তাল ঢেউ শান্ত হয়ে গেল। মৃদুস্বরে বলল—

বিয়েবাড়ি ছাড়া আপনি বুঝি আমাকে চিনতে পারেন না, না?

 

সতর্কীকরণ

বয়স্কদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন।

দেখবেন, ছেলেদের দিকে তেমন ভিড় না থাকলেও

লেডিজ সিটের সামনে মেয়েদের ঠিক পিছনে

কিংবা গা ঘেষে দাঁড়ানোর জন্য,

বাবা-জ্যাঠা-মামাদের সে কী প্রাণপণ লড়াই

কয়েক দিন খেয়াল করলেই টের পাবেন

গভীর রাতে উঠে শাশুড়ি কান পাতছেন

ছেলের ঘরের দরজায়

না না, ছিঃ, ও সব শোনার জন্য নয়,

কান পাতছেন, বউমা তাঁর ছেলের কানে কোন মন্ত্র দিচ্ছেন,

তা শোনার জন্য

বয়স হলে মানুষেরা ফুটপাতের এত ধার ঘেঁষে হাঁটেন যে,

নোংরা তাঁরা মাড়াবেনই।

বয়স্কদের থেকে একটু সাবধানে থাকবেন।

এমনকী, যখন আমার বয়স হবে, তখন আমার থেকেও

অবশ্য আমার বয়স কি আর বাড়বে!

 

ঢ়ঠজর

ভাগ্যিস, এতগুলো ভাষা জানতাম!

আমার আর‌ কোনও ভয় নেই

আপনি যে ভাষাটা জানেন না

আমি ঠিক সেই ভাষাতেই আমার মনের কথাটা আপনাকে অনায়াসে বলে দেব

আপনি না বুঝুন

তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।

আমি তো জানব,

আমি যা বলতে‌ চেয়েছিলাম, সেটা বলে দিয়েছি।ভাগ্যিস, এতগুলো ভাষা জানতাম!

না জানলে এক বুক সাহস নিয়ে কী করে না বলতাম–

উমঠদ্যভঢ়ঙ দথচঢভঢ়্য ঢ়ঠজর।

 

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *