অ রূ প র ত ন হা ল দা র–র কবিতাগুচ্ছ
শবরী
বিরহের ধাতু পড়ে আছে বনে
জল তার মূল্য পেরিয়ে নিম্নগামী আরও
ছুঁয়ে আছে শবরী তোমাকে
বিদ্যুৎ, সাপের দেহরেখা ধুলো মাখে বেহাগে
পাতকীর মতো তুমিও বোতামঘরে বারুদ রেখেছ
যে ছায়া রুদ্ধ করে আমাকে সোনার শেকলে
তার গায়ে বাঁশিটির স্তব্ধতা এলিয়ে পড়েছে
অবুঝ আয়নায় স্মিত হাসি ভেঙে গেলে
লুপ্ত দোতারার মেঘ আসে
বৃষ্টির রেখারা সরু, প্রণয় শেখেনি তত
আমার দেহরেখা ধরে বল্লরী ভেজে
গৃহতাপ জ্বলে ওঠে অস্থির জাতকের মতো
চতুর্দোলা পুড়ে যায়, হাঁটুর উপর তোমার চিবুক
আমার সব প্রান্তদেশ বিষণ্ণ লালায় ভরে আছে
আনন্দী
নীলনবঘন চাঁদটি ডুবে যায় পলাশের বনে
ছায়াগুলি গোপন নথির মতো ভিড় করে
ভয়ার্ত বাগানে
যেন হাওয়ার কেন্দ্র থেকে দূরে তুমি শুনেছ
আঘাটায় যতিচিহ্নরা অস্থির, আর
দূরের নহবত থেকে এসেছে জল, জলের উপকথা
ছাই আঁকে তোমার কপালে
এমন আনন্দী লুপ্ত হয় যে মীড়ে
তারা শিশিরের জীবন জেনেছে
জেনেছে তার দেহে রাত্রি লব্ধ করে জ্ঞান ও নিয়তি
পাখির গান থেকে দূরে যে সম্রাজ্ঞী রয়েছে
গহনাবতী আলোর মতো সে মূর্ছিত আজ
হারানো নদীটির কাছে এসে
আয়াত
আমি যতদূর হারাতে চাই তোমাকে
তারও পরে ওই বিষুবরেখা, মন্ত্রণাহীন
ক্ষয় উৎসন্ন আলোটিতে নীরব
অস্ত্রলেখা ধোঁয়ার কুসুম নিয়ে
ঘুমিয়ে পড়েছে অন্ধকারে
দূরস্থিত প্রদীপটি ফেলে আরও দূরে যাওয়া
শেফালিবনের ভেতর পাথরের চাতক বসে আছে
অশ্রুগীতিকার মতো হাওয়া দেয়
আলাহিয়া বিলাবল পড়ে আছে শান্ত চাতালে
তোমার মধ্যমায় যে ক্ষরিত স্বাদ আঁকাবাঁকা
তার মনে পড়ে করবীরেখাটি
রক্তের নাড়ি ধরে চলে গেছে সূর্যের বাগানে
ধৈবত
যে দুপুর আমার অগম্য নীল
তার ফেনা ও বুদ্বুদ, পায়ের বিষণ্ণ রোদ নিয়ে চলে যায়
পিঁপড়ের বাসায়, চিরহরিতের কাছে, লুপ্ত ডানায়
সেখানে অবদমন ঘটে আগুনের
মধুদার চায়ের দোকানে ছায়ারা শব্দ শোনে ভেরীর
মাটির লোহা ও মরিচা খুলে যায়
আমি বুকে নিয়েছি তোমায়
শূন্য গানের আলোয় শব্দের শব পড়ে আছে
আমি খুলে ফেলি আমাকে
তোমার চোখের ভেতর জানলার রক্ত ক্রমাগত
যে নিঃশব্দ বাড়ি, বাড়ির ভেতর শেকড়ের ধৈবত
দেওয়াল এঁকেছে, দেওয়ালে তোমার চুম্বন
কৃত্তিকার মদের মতো ঝরে
বালিয়াড়ি ঘিরে কবন্ধরা ঘোরে
চিত্রার্পিত আমি, ভুলে গেছি লাগাম
এই সীমান্ত
ক্ষতের অবকাশ পাকেচক্রে যে জেগে ওঠা চর
তার লব্ধ ভূমি আমাকে ভারাক্রান্ত করে
পরবাস
আমার জন্মান্ধ প্রহরে তোমার শ্বাস খুলে যায়
অনেক দিনের ধান পরিতাপ ছেড়ে
শিশিরে মৃত্যু চেয়েছে
যেমন খেলাঘর দেখে চিত্রল কাচ বেয়ে আলো
তাকে লুপ্ত করে দেয় হঠাৎ অবকাশে
পরবাস নিরন্ন থাকেনা আর
জলের পাথরে আলোকবর্ষ লেগে আছে
মেথিশাক, আমার সকাল ও শব্দরা ঊর্ধ্বরেতা
তেমন হরিণ-চোখ পেয়েছে তোমাকে
অববাহিকার নিচু স্বাদ
অহৈতুকী, শ্যাওলাপ্রবণ রাতটিকে কোমরে জড়িয়ে
নেমে গেছে বীজে
ঈশ্বরী জানেনা তার শাঁসের ভেতর
কতদূর শূন্যতা ছেয়ে আছে
গৃহ
কাহ্ন আমার উপবাসী আজ
ঠোঁটে তার নীল রাত্রি আসে
তেমন সৌষ্ঠব পেলে জরতীও একদিন
বন্ধ নগরী ফেলে আমার হাত ধরে নিয়ে যাবে
যে অবশেষে
সেইখানে তোমার কলস্বর
আমার শরীরে নিঃশব্দ চিতাটির মতো
ফলত, এই গৃহ মূর্ছাতুর
স্বপ্ন পার করে ভেসে গেছে
প্রণম্য নয়, হীনযান সে প্রাকার
ভেঙে পড়ে আমার মরিচাবাগানে