শহীদ চানকু মাহাতকে নিয়ে লিখছেন- অ রূ প   কা টি আ র

পরিচিতিঃ অরূপ বেশ কিছুকাল যাবৎ বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন সহ নানান পত্রিকায় লেখালিখি করছেন। বহু সামাজিক কাজ ও সমাজ সংগঠনে নিয়োজিত একটা প্রাণ। তিতকি পত্রিকার সহসম্পাদকের পদ অলংকৃত করছেন। কবিতা লিখতেই তিনি বেশি আগ্রহী। কিন্তু আজ বাইফোকালিজম্-র পাতায় লিখলেন বীর শহীদ চানকু মাহাতকে নিয়ে।

বীর শহীদ চানকু মাহাত

লিখছেন- অ রূ প   কা টি আ র

১৮৫৬ সালের আজকের দিনে, অর্থাৎ ১৫ ই মে শহীদ হন বীর শহীদ চানকু মাহাত। বর্বরোচিত কায়দায় সর্বসমক্ষে বর্তমান ঝাড়খন্ডের গোড্ডা জেলার এই বীর সন্তানকে ফাঁসিতে ঝোলান অত্যাচারী ইংরেজ শাসকরা। তাঁর অপরাধ, ভূমিপুত্রদের জল-জমিন-জঙ্গল বাঁচানোর লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া।

কুড়মি সামাজিক কাঠামোর পরগণা প্রধান “পরগণায়েৎ” চানকু মাহাত। চোখের সামনে দেখেছিলেন বহিরাগত ‘দিকু’দের দ্বারা ছোটনাগপুরের জল-জমিন-জঙ্গল লুন্ঠন। ইংরেজ ও ‘দিকু’দের মিলিত শক্তির ভূমিপুত্রদের উপর চালানো অত্যাচার বিচলিত করেছিল তাঁকে। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে হাতে তুলে নিলেন চিরাচরিত হাতিয়ার তীর-ধনুক, টাঙি-বল্লাম। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে একত্রিত হলেন ভূমিপুত্ররা। অন্যদিকে, একই সময়ে রাজমহল পাহাড় জুড়ে সিধু-কানহুর নেতৃত্বে চলছে হুল বিদ্রোহ। চানকু মাহাত নিজের নেতা হিসেবে মেনে নিলেন সিধু-কানহুকে। আন্দোলনকে যুক্ত করলেন হুল বিদ্রোহের সঙ্গে। তীব্র গতিতে আছড়ে পড়লো আন্দোলনের রেশ। তীরের নিশানায় তখন দিকু মহাজন ও ইংরেজ অফিসাররা।

১৮৫৫ সালে আন্দোলনের চরম পর্যায়ে গোড্ডা জেলার সোনারচকে এক বিশাল সভার আয়োজন করেন বিদ্রোহী ভূমিপুত্ররা। নেতৃত্বে চানকু মাহাত, রাজবীর সিং প্রমুখ। গোড্ডার নায়েব প্রতাপ নারায়ণের মাধ্যমে এই সমাবেশের খবর আগাম পৌঁছে যায় ইংরেজদের কাছে। সভা শুরু হলে সভাস্থল ঘিরে ফেলে বিশাল পুলিশ বাহিনী। শুরু হয় নির্বিচারে গুলিবর্ষণ। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় সমগ্র এলাকা। সভাস্থলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন রঘুবীর সিং সহ বহু আন্দোলনকারী। সেই অবস্থাতেও লড়াই চালিয়ে যান চানকু মাহাত। চানকু মাহাতর নেতৃত্বে আন্দোলনকারীরা তীর-ধনুক নিয়ে সামনে এগোতে থাকেন। গুলির লড়াইয়ের পাল্টা জবাব দেন তীরের ফলায়। অবশেষে নায়েব প্রতাপ নারায়ণকে হত্যা করেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু ধরা পড়ে যান চানকু মাহাত। সভাস্থল থেকে ২ কিমি দূরে বড়িডিহা গ্রামে তাঁকে গ্রেফতার করে ইংরেজ বাহিনী।

প্রহসনের বিচারে ফাঁসি হয় চানকু মাহাতর। অত্যাচারী ইংরেজরা ১৮৫৬ সালের ১৫ ই মে, প্রকাশ্য দিবালোকে গোড্ডার মেঝিয়া নদীর তীরে শহীদ চানকু মাহাতকে ফাঁসি দেয়। ভূমিপুত্রদের জল-জমিন-জঙ্গল রক্ষায় ছোটনাগপুরের এই বীর সন্তানের আত্মাহুতি ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছে।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *