চন্দ্রকোনা হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে
লিখেছেনঃ- শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী
(অনুলিখন-দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী)
ছবিঃ গৌতম মাহাতো
মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা
পর্ব-১৫
বিদ্রোহ বহ্নি
গড়বেতার স্বাধীন নৃপতিগণের বিদ্রোহ
তখন শিলাবতী নদীর তীরে গড়বেতার স্বাধীন
রাজন্যবর্গের একটি পরিখাবেষ্টিত দুর্গ ছিল। এই
দুর্গের চারিদিকে চারটি সিংহদ্বার শোভা পেত। তাদের নাম উত্তরে ‘লাল দরজা’ দক্ষিণে ‘পেশা
দরজা’, পূর্বে ‘রাউত দরজা’ ও পশ্চিমে ‘হনুমান
দরজা’। আর তখন ঐ দুর্গের পূর্ব দরজায় ‘সন্ন্যাসী’,
পশ্চিম দরজায় ‘গোরা খাঁ’, উত্তর দরজায় ‘বারো
ভূঞা’ ও দক্ষিণ দরজায় ‘অলাইচণ্ডী বা ওলা বিবি’
সর্বদা পাহারা দিতেন। এ সময় ইঁদকুড়ি ভূমি শিলদাতে এই ভূঞ্যা জাতিরই মাথা কেটে দেওয়া
হয়েছিল বলে প্রবাদ আছে। ‘চূড়ায় বিদ্রোহ ওকলে
সাহেব দমন করেন’। আজও ইঁদকুড়ি ভূমি ইন্দ্র পূজার একটি বিখ্যাত স্থান। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য
১৭৬০ খ্রীস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে মেজর জনস্টন
সাহেব মীর কাশিমের নিকট হতে মেদিনীপুর জেলার ভার পান। ১৭৮৩ খ্রীস্টাব্দে দশশালা বন্দোবস্তের পর খাজনা বর্দ্ধিত হয়ে যখন এই জেলার খাজনা ৬০ লক্ষ টাকায় পৌঁছে তখনই
সমগ্র মেদিনীপুরে বিদ্রোহ বহ্নি প্রজ্বলিত হয়।
বগড়ীর রাজা যাদব চন্দ্রের রাজত্ব কালের ১৭৬৯
খ্রীস্টাব্দে বাংলার সর্ব্বগ্রাসী ছিয়াত্তরের মন্বন্তর
হয়েছিল। ইতিপূর্বে মগ জলদস্যুদের অত্যাচার
ও ১৭৪১ খ্রীস্টাব্দে বর্গী হাঙ্গামায় দেশবাসীর
বহু ধনরত্ন লুটপাট হয়ে যায়। এক কথায় শাসন,
শোষন অত্যাচার ও নিপীড়নে এই অঞ্চল যখন
জর্জরিত হতে থাকে তখনই ইতিহাস প্রসিদ্ধ
নায়েক বিদ্রোহ শুরু হয়। বগড়ীর ইতিহাসের
লেখক সুপন্ডিত তারা শঙ্কর ভট্টাচার্য মহাশয়ের
মতে “বগড়ীর রাজা যাদব চন্দ্র সিংহই ছিলেন
বিদ্রোহের প্রাণ স্বরূপ । সিমলা পালের রাজা ও
ময়ূরভঞ্জের রাজাও বিদ্রোহের সহিত যুক্ত ছিলেন। ” এই সময় নায়েক বা লায়ের নামক দুগ্ধ জাতি এইবিদ্রোহের সহিত যোগ দেওয়ায় বিদ্রোহ বহ্নি ভীষনাকার ধারণ করে এবং সমগ্র জঙ্গল খন্ডে
ইহা ছড়িয়ে পড়ে।
ইতিপূর্বে মধ্য বগড়ীর সুবিস্তীর্ণ প্রান্তরে সাহেব ডাঙা নামিত জায়গায় ইংরেজদের শিবির স্থাপিত
হয়। আর রাজা যাদব সিংহ ইংরাজ সৈন্য কর্তৃক
বন্দী হয়ে ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে স্থানান্তরিত হন।
কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত: ১৭৭২ খ্রীস্টাব্দে নির্দোষী সাব্যস্ত
হয়ে মুক্তি লাভ করবার পূর্বেই তিনি দেহত্যাগ করেন। উল্লেখ না করে থাকতে পারিনা ১৭৮৩ খ্রীস্টাব্দে জুলাই মাসে পাঞ্চেৎ পরগণার দক্ষিণার্ধে
যে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল তারই ঢেউ আসে বগড়ীতে। মি: জিল সাহেবের সৈন্য দলের প্রচেষ্টায়
এই বিদ্রোহ কিঞ্চিৎ শান্ত হয়। (From letter to captain Gill, 22nd Sept. 1783) এরপর ১৭৯৭
খ্রীস্টাব্দে্ যাদব সিংহের পুত্র ছত্র সিংহ বগড়ীর
সনদ প্রাপ্ত হন। তিনি ও এই আন্দোলনের সহিত
যুক্ত সন্দেহে ইংরাজগণ তাঁকেও বন্দী করেন।
ইতিপূর্বে ছত্র সিংহকে ধরিয়ে দেবার জন্য পুরস্কার ও ঘোষিত হয়েছিল। (Letter from the committee to the Collector of Midnapur 13th October, 1783)
ঐদিকে সিমলা পালের জমিদারকে ধরে বিচারে
প্রেরণ করবার নির্দেশ পেলেন ক্যাপ্টেন হ্যামিলটন।
১৭৯২ খ্রীস্টাব্দে জুন মাসে কালেক্টর বাহাদুর
কতৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কোন আগ্নেয়াস্ত্র বা
যে কোনো যুদ্ধাস্ত্র বিক্রয় করেন। (Letter from
J . Fombelle, Sub Secretary of the Collector, 27th June 1792.)
ক্রমশঃ…