ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস– “চোরাবালি”(পর্ব-১১)

পরিচিতিঃ ইন্দ্রনীল বক্সী,জন্ম – নকশাল পিরিয়ডে ..৭৩ এ দুর্গাপুরে , উচ্চতা মাঝারি, গায়ের রঙ মাজা, গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল টাইপ। লিখছি সেই কিশোরবেলা থেকে, দুর্গাপুর বেলা থেকে বর্তমান নিবাস – বর্ধমান। কি লিখছি ছাই নিজে তো জানিই না অন্যরাও জানে বলে মনে হয় না। হাবিজাবি করে চারটি বই প্রকাশিত।” বাইফোকালিজম্-এ তাঁর আজ ধারাবাহিক উপন্যাস ‘চোরাবালি‘-র একাদশ পর্ব

ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস

চোরাবালি(পর্ব-১১)

কিছু লোককে দেখলেই বোঝা যায় বেশ হোমড়া চোমড়া! গদাই ঘোষকে দেখেও দেবুর সেরকমই মনে হলো। দেবু ,মাস্টার আর খোকন। সেদিন মাস্টারের দোকানের কথার পর দেবু অনেক ভাবনাচিন্তা করল, ভেবে দেখল দেখাই যাকনা একবার কথা বলে! যে সুযোগ আসছে তাকে হাতছাড়া করলে পরে আফশোস করতে হতে পারে , তাছাড়া লাইন চেনা একটা ব্যাপার। পরে নিজে কিছু ধান্দা-পানি করতে গেলে কাজে লাগবে। এসব সাত সতেরো ভেবে মাস্টারকে ফোন করে দুদিন পরে একটা সময় করল, নাঃ বাড়িতে কাউকেই কিছুই বলেনি, আগে কথা বলে দেখাই যাক তারপর নাহয়…
মিনিট আটেক হয়ে গেল ওরা সদর ঘাটের অফিসে এসেছে, অথচ অফিসে ঢোকার পর খোকনদা ওদের পরিচয় করিয়ে দেবার সময় একবার চোখতুলে দেখা আর ইসারায় বসতে বলা ছাড়া গদাই ঘোষের মুখে আর কোন শব্দ শোনেনি দেবু! কি যেন একটা কাগজ টেবলে মেলে একমনে দেখে যাচ্ছে সেই থেকে ,সামনে রাখা কাপের চাটাও সম্ভবত জুড়িয়ে গেছে অনেক্ষন… এবার একটু অস্বস্তি হচ্ছে দেবুর, একটু উসখুশ করতে লাগল ও। খোকনদার দিকে তাকাতেই হাত দেখিয়ে সে নিশ্চিন্তে চুপ করে বসে থাকতে বলল। খোকন জানে গদাই ঘোষের ধাত , একসঙ্গে একটা কাজই তিনি করেন , এবং ডুবে থাকেন তার মধ্যে।
এবার মুখ তুললেন গদাই ঘোষ, হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটায় এক চুমুক দিয়ে মুখ বিকৃত করে নামিয়ে রাখলেন। “হ্যাঁ… বলো খোকন ,কি মনে করে?”
“সেই যে স্যার বলেছিলাম না! একটা ছেলের কথা… নিয়ে এসেছি, এই যে দেবু মানে দেবব্রত…”
“ ও…” অল্প ঘাড় ঘুড়িয়ে গদাই ঘোষ দেবুকে একপ্রস্থ জরিপ করে নেয়…
“তা কোথায় বাড়ি তোমার… বাবা কি করেন?”
দেবু একটু গলা খাঁকাড়ি দেয়, একটা চাপা উদ্বেগ রয়েছে ওর মধ্যে, খাতায় কলমে এটি ওর দ্বিতীয় ইন্টারভিউ বলা যায়। এর আগে একবার বি.এস.এফ এর জন্য গেছিল কয়েকজন বন্ধুর হুজুগে পড়ে , সে এক সাঙ্ঘাতিক অভিজ্ঞতা।
“বাবা টিচার, প্রাইমারী স্কুলের ,বাড়ি বাদুলিয়া…”
“টিচার বাবার ছেলে! তা হঠাৎ কাজের দরকার পড়ল কেন?”
কি বলবে বুঝে উঠতে পারেনা দেবু! …কি কারন বলবে? সত্যি করে ভাতের অভাব বলতে যা বোঝায় তা তো ওর নেই, থাকার মধ্যে রয়েছে একটা জেদ…
“নিজের জোরে কিছু করার ইচ্ছে তাই…” মুখ দিয়ে উত্তরটা যেন ফসকে বেড়িয়ে এলো!
কিছুক্ষণ স্থির তাকিয়ে রইল গদাই ঘোষ দেবুর দিকে, কি যেন একটা বুঝে নিতে চাইছে মনে হলো দেবুর। লোকটার দৃষ্টি বেশ তীক্ষ্ণ! যেন অনেকটা ভিতর পর্যন্ত দেখে ফেলছে…
“নিজের জোরে! …বেশ , তা খোকন ওকে বলেছো কি ধরনের কাজ আমার এখানে ওকে করতে হবে?” বাক্যের শেষ অংশ খোকনের দিকে তাকিয়ে বলে গদাই ঘোষ।
“হ্যাঁ স্যার, বলেছি ওই… খাদানের হিসেব নিকেশ আর একটু নজর রাখা টাখা…”
“হুম… তা তোমার কি মনে হয় দেবব্রত … তোমার পোষাবে? …টাইটেলটা কি যেন?
“সানা… না পোষানোর কিছু নেই, বাকিটা কাজের সুযোগ পেলে…”
হাত তুলে থামিয়ে দেয় তাকে গদাই ঘোষ… “বেশ… সামনের ১ তারিখ থেকে এসো আমাদের এই সদরঘাট অফিসে… মাইনে তোমার একমাস পর ঠিক করব” এতদুর বলেই চেয়ার থেকে উঠে পরে বেরিয়ে গেল গদাই ঘোষ। খোকনের চোখ চক চক করে উঠল, দেবুর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল “ব্যাস হয়ে গেল ওস্তাদ ! … এবার একদিন পার্টি চাই কিন্তু”
দেবুও বেশ অবাক হয়ে গেল! এক নিমেষে কেমন একজন ওর ভাগ্য ঠিক করে দিল …বেকার থেকে কয়েক মিনিটে সাকার হয়ে গেল ও!…ক্ষমতা থাকলে মানুষ কি না পারে।
দুজনে সদরঘাট অফিস থেকে বেরিয়ে এলো একটা চায়ের দোকানে চা খেয়ে সিগারেট ধরালো, খোকন দু’টান মেরে বলে উঠল “দেবুবাবু, তোমার মধ্যে কিছু আছে নিশ্চয়ই! না হলে গদাই ঘোষ কঠিন ঠাঁই… এরকম এক কথায় কাজটা তোমার হোতো না, কিছু তো আলবাত দেখেছে গদাই ঘোষ!”
দেবুর ভিতরে একটা তৃপ্তি জেগে ওঠে, ও নিজেও বিশ্বাস করে ওর মধ্যে কিছু আছে! কিন্তু অন্য কেউ সেটার মুল্য দিলে আলাদা তৃপ্তি হয়। মাস্টারকে খবরটা দিতে হবে আগে, সেও অধীর হয়ে বসে আছে আর বাড়ি যাবার সময়ে আজ সৌদামিনি থেকে মোচার চপ নিয়ে যাবে, মিনুটা খুব ভালোবাসে…
খবর শুনেই মাস্টার হই হই করে বেড়িয়ে এলো দোকান থেকে, জড়িয়ে ধরল দেবুকে। “আজ স্পেশাল চা দেবুবাবুর নামে, খোকনভাই তোমায় আর কি বলি! …একটা বড় কাজ করে দিলে হে…” চা সিগারেটের পর্ব মিটলে সেদিনের মতো আসর ভেঙে দেবু একবার কলেজের দিকে গেল , ওকে সৌদামনি হয়ে ফিরতে হবে।
বাদুলিয়া মোড়ে বাস থেকে নেমে কাঁধের ব্যাগটায় হাত দিয়ে একবার দেখে নেয় দেবু, নাঃ এখনও গরম রয়েছে! মিনু আজ খুব খুশি হবে! মাও পছন্দ করে নিরামিষ চপ …মনটা বেশ হাল্কা লাগছে দেবুর। মাস্টারের কথা অনুযায়ী বাড়িতে আগে থেকে কিছুই বলেনি, আজ গিয়ে বলবে। মা বা মিনুকে নিয়ে ওর চিন্তা নেই কিন্তু বাবা কিভাবে নেবে ব্যাপারটা সেটা নিয়েই চিন্তা! ওই এক লোক! কোনো কিছুতেই যেন খুশি করতে পারেনা দেবু তাকে! …
হেলতে দুলতে বাড়ি পৌঁছে ব্যাগ থেকে প্যাকেটটা মায়ের হাতে ধরায় দেবু। মা একটু অবাক হয়েই তাকিয়ে থাকে দেবুর দিকে কিছুক্ষণ।
“ কি রে কি ব্যাপার আজ হঠাৎ?…কোনো রেজাল্ট টেজাল্ট বেরিয়েছে নাকি!”
দেবু নিঃশব্দে ঘাড় নাড়ে, হাল্কা একটা হাসি মুখে ঝুলিয়ে রেখে মায়ের কাঁধে হাত রাখে…
“একটা ভালো জায়াগায় কাজ পেয়েছি…”
“কি! চাকরি? … সেকিরে!…কোথায়?”
“বলছি বলছি, আগে মিনুকে ডাকো… মোচার চপ দেখে একটু ধেই ধেই করে নাচুক…”
“আর কলেজ! …ছেড়ে দিবি?” মা ঠোঙা হাতে বিহ্বল তাকিয়ে থাকে দেবুর দিকে। একটা আনন্দ ও উদ্বেগ মিশ্রিত ছায়া খেলে যায় মায়ের মুখে।
“না গো …ফাইনাল ইয়ারে কেউ কলেজ ছাড়ে!… ও ঠিক ম্যানেজ করে নেব …”
ওদের কথার মাঝেই মিনু এসে পড়ে, মায়ের হাত থেকে ঠোঙাটা ছিনিয়ে নেয়… মোচার চপ জানতে পেরে সত্যিই দুপাক ফালিয়ে ওঠে “মা ও মা ওসব কথা পরে হবে আগে মুড়ি নিয়ে এসো দেখি…আর দাদা এসব চপে চলবে না! এতো ইন্ট্রোডাকশান, পুজোয় পালাজো চাই বলে দিলাম “
“আরে দাঁড়া আগে জয়েন করি… কত মাইনে দেয় দেখি!”
“বাবা! …আজ কি ব্যাপার বাবু সকাল সকাল বাড়িতে? …বিশেষ কিছু ঘটেছে নাকি!”
সবাইকে চমকে দিয়ে বাবা উঠে এলেন উঠোনের বাঁধানো চাতালে। সাইকেল রাখতে রাখতে একবার চকিতে দেখে নিলেন দেবুকে।
“ওমা! তুমি চলে এসছো? আজ তোমাদের আসর জমেনি তেমন মনে হচ্ছে… হাত পা ধুয়ে বোসো আমি আসছি” বলেই মা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায়।
“কেন! আমি তাড়াতাড়ি আসায় তোমাদের আড্ডায় অসুবিধা করে দিলাম মনে হচ্ছে!” বাবার এ কথায় মা কোনো উত্তর দেয় না, ভাই-বোন দুজনেই পরস্পরের দিকে নীরব দৃষ্টি বিনিময় করে চুপ করে থাকে। বাবার এরকম ছোঁড়া ছোঁড়া কথায় ওরা সবাই অভ্যস্ত।
হাত পা ধুয়ে বারান্দার রাখা বেতের মোড়ায় এসে বসতেই মিনু এক গ্লাস জল এগিয়ে দেয় বাবাকে, একটু পরেই মা মহামায়া একবাটি মুড়ি আর চপ নিয়ে এসে দাঁড়ায়।
“ কি ব্যাপার? চপ কোথা থেকে এলো!”
“ আর বোলো না! দেবু এনেছে বদ্দমান থেকে… মোচার চপ…”
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বাটিটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে এক টুকরো চপ ভেঙ্গে মুখে দিয়ে বেশ প্রসন্ন মুখে চুপ করে বসে মুড়ি মাখতে থাকেন বাবা।
“তা হঠাৎ…কি ব্যাপার?”এবার প্রশ্ন সরাসরি দেবুকে লক্ষ্য করেই করা।
“বলছি…তুমি আগে খেয়ে নাও না…”
কিছুক্ষণ সময় চারজনেই বেশ হাল্কা মেজাজে চপ মুড়ি সহযোগে ঘরোয়া গল্পগুজবে মেতে ওঠে। সব সময় এমন চারজনে বসে মুড়ি খাওয়ার সুযোগ হয় কোথায়!
“এবার বলো” মুড়ি শেষ করে চায়ের কাপ হাতে তুলে নিয়ে বলে ওঠেন বাবা কার্তিক সোনা।
“ বাবা … আজ হঠাৎ করেই একটা কাজের সুযোগ পেয়েছি… মানে চাকরী…”
“কি! চাকরী? কোথায়? কিসের কাজ?” বাবার হাতের চায়ের কাপ মুখ অবধি উঠে আবার নেমে আসে। বেশ একটু চমকে গিয়েছেন এমনি মুখের অভিব্যক্তি। দেবু বাবার মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করে খবরটা শুনে বাবা খুশি হলেন কি না!… বুঝতে পারে না।
“বালি খাদানে …ওই হিসেব পত্তর দেখতে হবে আর কি”
“কি? খাদানে! … সে আবার কেমন কাজ!… ওখানে তো বিহারী মুটে মজুররা কাজ করে বলেই শুনেছি। আর পড়াশুনা? কলেজ!… ”
“হ্যাঁ মুটে মজুররা করে তো বটেই… কিন্তু অত টাকার হিসেব নিকেশ আর ওদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য ম্যানেজারও লাগে…”
“সে না হয় বুঝলাম কিন্তু পড়াশুনা? …কে তোমায় বলেছে যে এখনই তোমায় রোজগার করতে হবে! কেন আমার রোজগারে সংসার চলছে না বুঝি!”
“ পড়াশোনার সঙ্গেই করা যাবে…“
“সে আবার হয় নাকি!… ওভাবে পড়াও হবে না কাজও হবে না… না না ওসব করতে হবে না… আগে গ্র্যাজুয়েশান… তারপর অন্য কথা।”
“কোনো অসুবিধা হবে না বাবা… আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব…”
“ওই তো! …সবই ম্যানেজ করতে শিখেছো আজকাল …ম্যানেজ করে পড়াশোনা হয় না দেবু, ওদের বারণ করে দাও কালই“ বলেই ঠকাস করে আধ খাওয়া চায়ের কাপটা নামিয়ে বাবা উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন, দৃশ্যতঃই বেশ উত্তেজিত লাগছে তাঁকে।
“তোমারও বলিহারী …ছেলে পড়া ডকে তুলে কোথাকার কি কাজে ভিড়বে বলে আনন্দে চপ নিয়ে এসেছে আর তোমারাও তার সঙ্গে মেতেছো …ওসব হবে না একদম বলে দিলাম”
“ওদের কথা দিয়ে দিয়েছি আমি…” দেবু শীতল কন্ঠে বলে ওঠে । দেবু যা আন্দাজ করেছিলো ঠিক তাই ঘটছে। বাবা ভালো ভাবে নেয়নি কাজের ব্যাপারটা। কিন্তু ওরও জেদ চেপেছে, এবারে এ সুযোগ ও হাতছাড়া করতে পারবে না কিছুতেই।
“কি! কথা দিয়েছো? …কাকে জিজ্ঞেস করে দিয়েছো? ওরকম কথার ক্যাঁথায় আগুন”
বাবা বেশ রেগে গেছেন বোঝাই যাচ্ছে। এ রকম অবস্থায় কোনো কথা বলেই আর লাভ নেই। পরিস্থিতি সামাল দিতে মা এগিয়ে আসেন, মিনু টুক করে কখন ভিতরে পালিয়েছে।
“আহা … চটছ কেন!…বোসো বোসো …শোনই না কি বলছে দেবু …”
“কিচ্ছু শোনার নেই… দু পয়সার বাবুগিরির জন্য ওসব থার্ডক্লাস কাজে ঢোকা হবে না …ব্যাস”
বাবা কার্তিক সানা নিদান দিয়ে ভিতরে চলে যান। বারান্দার দাওয়ায় চুপ করে বসে থাকে দেবু। কয়েক মুহূর্তে বাড়ির পরিবেশ থমথমে হয়ে ওঠে। বড় মুড়ির গামলাটায় তখনও কিছুটা মুড়ি মাখা আর গোটা দুই চপ পড়ে থেকে থেকে ঠান্ডা হয়ে গেছে, আর কেউ ওগুলো খাবে না।
রাতে ওরা দুই ভাই বোন একসঙ্গে বসে রাতের খাওয়া খেয়ে নেয়। মা কেমন গুম মেরে গেছেন। ওরাও অন্য দিনের মতো নিজেদের খুনসুটি না করে চুপচাপ খেয়ে যে যার ঘরে চলে গেছে। বাবাকে দেখা যাচ্ছে না, সম্ভবত ঘর থেকেই বেরোননি। দেবু রোজকার মতোই খেয়ে দেয়ে ছাদে উঠে যায়। একটা সিগারেট ধরিয়ে ছাদের পাঁচিলে এসে ঝুঁকে দাঁড়ায়। দূরে কোথাও জেনারেটর চলছে। উত্তর দিকের মিলের ধোঁয়া এসে জমেছে আকাশে, ছেঁড়া মেঘের ফাঁকে ফাঁকে চাঁদটা মাঝে মাঝে লুকিয়ে পড়েই আবার বেরিয়ে আসছে। দেবু একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে থাকে। দেবু নিজেও যে একটু দ্বিধায় ছিলো না কাজের ব্যাপারটা নিয়ে তা নয়, কিন্তু বাবা সরাসরি না করে দেওয়ায় যেন জেদটা চেপে বসেছে ওর। বাবার সঙ্গে সব ব্যাপারেই আজকাল বিপরীত অবস্থান যেন দেবুর রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাঃ, ওকে এর থেকে বেরোতেই হবে, বাবার ছাঁচে বাবা ঢালতে চায় তাকে, কিন্তু ওর তো নিজেরও কিছু চিন্তাভাবনা আছে! উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে… নাঃ ও কাজে ঢুকবেই। বাকি পড়াশোনার ব্যাপার ঠিক ম্যানেজ করে নেবে। যা হয় হবে , বাবা প্রচন্ড রেগে গেলেও কিছু করার নেই। আজ আর বাসবীবৌদিদের ঘরের দিকে যেতে মন টানল না, মেজাজটা খিঁচড়ে রয়েছে। কেন যে বাবাটা এমন! সবাইকে কি একরকম হতেই হবে? দেবু দেবুর মতো এটা যে কেন বুঝতে চায় না বাবা!
সিগারেট শেষ করে কিছুক্ষণ আরো কাটিয়ে নেমে আসে দেবু নিজের ঘরে। মিনু আর মা শুয়ে পড়েছে। বাবার ঘরে এখনও আলো জ্বলছে , নিশ্চয়ই কিছু পড়ছে বাবা ।দেবু নিঃশব্দে বিছানায় ঢুকে পরে। আজকের দিনটা কাটুক, কাল বরং ফ্রেশ মাইণ্ডে আবার চিন্তা করা যাবে। জানালার বাইরে দিয়ে দৃষ্টি যায় কিছু দূরে রাস্তার ওপারে ইলেক্ট্রিকের পোলটার দিকে। একটা বাল্ব ঝুলিয়ে দিয়েছে ওখানে পঞ্চায়েত থেকে, আলোটা মাঝে মাঝেই দপ দপ করছে …এভাবে বেশীক্ষণ আলোটার আয়ু নেই দেবু জানে, নিশ্চয়ই কোথাও লুজকানেকশান হচ্ছে!

ক্রমশঃ…

লেখা পাঠাতে পারেন

আগের পর্বটি পড়তে নিচের লিংকে ক্লিক করুন

ই ন্দ্র নী ল   ব ক্সী-র ধারাবাহিক উপন্যাস– “চোরাবালি”(পর্ব-১০)

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *