আহাম্মকের গদ্য(৪)

আহাম্মকের গদ্য(৪)

বাড়ি থেকে ঠেক অবধি যেতে আমায় প্রায় এক তৃতীয়াংশ পথ অতিক্রম করতে হয়।উড়ো পাইলটের বুড়ো জগদ্দল চলে গতর গতর.. গতর গতর..।পৈতৃকসূত্রে পাওয়া অনেককিছুর মধ্যে এটাও একটা।তার কোনও অভাব নেই আমারও কোনও অভিযোগ নেই।”দুই-এ মিলি থাকি মিলিমিশি”।সেই জগদ্দলেরর সাথে চলেছি, সকলেই আছে অথচ কেউ নেই এই ভিড়ের ভেতর একা হয়ে যাওয়ার মত যে তীব্র কৌশল আজকাল অনায়াসে রপ্ত করে ফেলি।হুঁহহু বাওয়া আমি কি আর আলবাল মাল?? আরিস্ততল বেঁচে থাকলে ফি সক্কালে আমার বাড়ি চা খেতে আসত।আসলে কি বলতে চাই নিশ্চয়ই বুঝে গ্যাছো!! মহান ব্যক্তিদের বুঝতে একটু দিমাগ আলগা করতে হয়।থাক আপাতত দিমাগটুকু করলেই হবে.. কোথায় ছিলুম য্যানো?? ও হ্যাঁ মনে পড়েছে জগদ্দলের জার্নিতে।তো,আমরা চলেছি নিজেদের মত করে একটা একটা করে ষষ্ঠীর পুজো প্যাণ্ডেল পেরিয়ে আসছি আর মনে হচ্ছে আমি আমরা সে তাহারা সবাই আটকে গেছি সেই Y2Kতে

উত্তরণ নেই অবতরণ আছে।যাওয়াটা নেই অথচ ফিরে আসাটা নিত্য।ঘট নেই কিন্তু ঘটাভাব চিরন্তন।কি শিল্প কি সংস্কৃতি সবই।আজও সেই শ্রীকান্ত থেকে গান য্যানো বেরোয় নি মণ্ডপের উৎকর্ষতাও তথৈবচঃ।না, আমি আমার মফস্বলের কথা বলছি।হয়তো আমাদের গ্রহণের ক্ষমতা কমে গ্যাছে অথবা পরিবেশনের দুটোর কিছু তো একটা বটে।কিছু বছর আগেও পুজোয় অ্যালবাম বেরোতো নামী অনামী শিল্পীর। ক্যাসেটের দোকান বেশ তাথৈ তাথৈ।আমি রেকর্ডের জমানা নাই বা গেলাম কিন্তু এটুকু পরিবর্তনের প্রবর্তন তো চেখেছি!! তার থেকেই মনে হচ্ছিল আজকালটা কোথায় জানি আটকে আছে।শুধু গান নয়,সিনেমা, শিল্প,সাহিত্য সবেতেই একটা গ্যাপ।য্যানো একটা মিসিং লিংক খুঁজে পাচ্ছে না কেউ।তবে কি পরিবর্তনটা মেনে নিতে পারছি না?? নাহহ তাও তো নয়।দিব্বি অ্যানড্রয়েডে লীন হয়ে আছি।অনয়াসে শিল্পের ভাঙাচোরা উদযাপন করছি।ফিউসনের ফোনেটিক আপ্লুত করছে অহর্নিশ।চেঞ্জ তো গ্রহণ করতেই হবে না হলে ডাইনোসর হয়ে যেতে হবে এটা আমরা হাড়ে হাড়ে জানিও, মানিও।তবে?? প্রসঙ্গত একটি পুরোনো কথা মনে পড়ে গ্যালো।একদিন জগন্নাথ স্যার ডারউইন পড়াতে পড়াতে ‘গামা'(ক্লাসের বন্ধু,এই নামেই পরিচিত) জিজ্ঞেস করে বসল

— তাইলে স্যার সব সিমপাঞ্জিগুলান কেনে মানুষ হল নি??

উত্তরে জগন্নাথবাবু বলেছিলেন

–যে কারণে তোর মধ্যে ফার্স্ট হবার সবগুণ থাকা সত্ত্বেও তুই এক থেকে দশের মধ্যে আসতে পারিস না সেই কারণে।
তাই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবি।পরে অবিশ্যি জেনে ছিলাম উনি আপাদ-মস্তক ইংরিজির লোক।
যে ভাবে বুকে ব্যুৎকার চাপা হয় তেমনই।অথচ এত দ্রুত রিভল্যুসন শিল্পবিপ্লবের সময়ও ঘটেছিল কিনা জানা নেই।তবে হ্যাঁ নব্বই এ দশকে একটা ভাটা পড়েছিল এটা অনস্বীকার্য। তাহলে অনেকেই বলবেন এ সময়কি ভালো কিছু হয়নি?? হয়েছে নিশ্চয়ই। তবে তার পরিমানটুকু দূরবীনীয়।তাই কোনও মতেই
“যৌবনের কোকিল ডাকে কুহু কুহু কুহু
সারা গতর করছে আমার উহু উহু উহু
মাপ কোরো কাকা ঠিক নিতে পারলাম না।হয়তো আমার অপারগতা হবে।
তবে এই পরিবর্তনটা বেশ প্রকট।রেকর্ড – ক্যাসেট-ফ্লপি – সি.ডি – ডি.ভি.ডি – মাইক্রোচিপ – সেলফোন হয়ে এখন অনলাইন ইউ টিউব। প্রায় প্রতি দুবছর অন্তর মাধ্যম পাল্টেছে গড়ে।আরও আশ্চর্যের বিষয় শিল্পী ও শিল্পও পাল্টেছে বইকি,পাল্টেছে নান্দনিকতা ও আমআদমির রুচিও।তবুও কোথায় জানি আটকে যাচ্ছে পুরোনো রেকর্ডের ট্র্যাকে।এখন তো আবার ফেসবুকের যুগ।যুগ না হুজুগ জানি না তবে যা বুঝেছি এই মাধ্যমটি ধর্ম হয়তো মুছে দিলেও দিতে পারে, কিন্তু লিঙ্গ বৈষম্যকে এগিয়ে দিচ্ছে বেশ কয়েক ক্রোশ।এখানে লাইকীয় উপদানের চেয়ে বড় ব্যক্তি।কে আপডেট দিচ্ছে সেটা ঢের জরুরি বিষয় নগন্য।এই লাইকীয় ভোটে অর্থনীতিরও সব্যবচ্ছেদ অনায়াসে করতে পারে আমার পাড়ার ঝুনঝুনি।ফেসবুকীয় ‘সাদা ফেস কালো ফেস’ নিয়েও অনেক কিছু বলার থেকে যায়।তবে সে যাক তা নিয়ে পরে কোনও একদিন ভাবা যাবে।
তো যাই হোক ছিলাম এই সময়ের সামনে যা এগিয়েছে কিন্তু এগোয়নি।একটা ফোর্সের অভাব অনুভূত হচ্ছে।হয়তো পুজোটা শাশ্বত ধরে অংকটা করলে মিলতে পারে।বোধহয় বর্তমান মাধ্যমটা পুজো নামক ন্যস্টালজিয়ার সাথে রিলেট হওয়ার সময়টা পায়নি।যেদিন এটা হবে সেদিন সেও ন্যস্টালজিক হয়ে উঠবে বাঙালির কাছে।
আমি তখনও চলেছি আমার জগদ্দলের সাথে গতর গতর.. মাইকে গমগম করছে তালাত মামুদ থেকে মনোময়।আমি জগদ্দল নিয় ট্রাফিক খাচ্ছি কেরানিতলায়।আমি জানি আমার পুজো ওই আট ইন্চি বাই ছ ফুটের বেঞ্চে।চায়ের গেলাসের ঠুংঠাং আর উৎপটাং এই সব ভাবনা নিয়েই আমার মুক্তি।আমি আসছি ঠেকে।

বিঃদ্রঃ –প্রামান্য তত্ত্ব বা তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন গুগলবাবা দরগায়।আমি মহান ব্যক্তি ওসবের ধারধারী না।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *