অ ম লে ন্দু চ ক্র ব র্তী-র একটি আখ্যানচর্চা
নির্জলা মেস
পড়ে পাওয়া ষোল আনা
একেবারে আমি কানা।
কেন জানেন! আমি যে অপরাধী আমার অপরাধের শেষ নেই। এক্কেবারে দরিদ্র পরিবার থেকে বিলং করি যে ভীষণ খিদে সর্বগ্রাসী ক্ষুধা আমাকে পাগল করে দিত। কেউ আদর করে দুটো খেতে বললেন গোগ্রাসে গিলতাম থালা হাতের আঙ্গুল মাঙ্গুল চেটেচুটে সাফ। লাইব্রেরী থেকে বইপত্র,রাত রাত জেগে কারণ যাঁরা লাইব্রেরীর সদস্য ছিলেন তাঁরা সাহায্য করতেন। খিদেটা আমার বরাবরই রাক্ষুসে। বই হোক আর খাদ্য সামগ্রী।
ম্যাট্রিক পরীক্ষা স্কুলের বহু ফিস্ বাকি, হল না সেবার পিছিয়ে পড়েছি কেবলই। পরের বছর বন্ধুরা বই দিয়ে সহযোগিতা করলে হৈ হৈ করে ম্যাট্রিক দিলাম। বেরিয়ে গেলাম। ম্যাট্রিক পাস না দিলে তখন তেমন টিউশনি ও জুটতো না। ম্যাট্রিক পাস দিয়ে আমি যেন বিশ্বজয় করেছি। আর ক্ষমতাও নেই ইচ্ছা ও নেই। সব্বাই কলেজ ফেরত খেলার মাঠে। আমি তখন খড় সুতলি দড়ি মাটিকাদা বিশ্বকর্মা কালী সরস্বতী র মুর্তি বানাতে ব্যাস্ত। গোটা দশবারোটার মতো বিক্রিবাটা করে কিছু রোজগারের ধান্ধা। সামনের এক রেল কোয়ার্টারে অনেকগুলি মাস্টার মিলে একটি মেস চালাতো। বাঙালি সকলে একত্রিত হলে যা হয় গান গল্প বাজনা কবিতা অভিনয় নাটক। টিউশন করি তাই ওঁরা আমাকেও সঙ্গে চাইছেন। গুড়িগুড়ি পায়ে একদিন হাজির হলাম। হৈ হৈ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। যেন আমাকেই খুঁজছিলেন। আমাকে নাটকে অভিনয় করতে হবে। পাড়ার নাটকে কাজ করেছি, কিন্তু এরা তো নাট্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। আমি কি পারব? তবুও পিছিয়ে যাইনি, ভিড়ে গেলাম। সমস্ত সিনিয়র দাদারা আমাকেও আপনি আপনি করেই বলতেন। নাটক নিয়েও প্রচুর পড়াশোনা সেক্সপিয়োর থেকে শুরু করে উৎপল দত্ত, মুন্সীপ্রেমচাঁদ। দেশি বিদেশি নাটক নাট্যকার ক্রমশ এসব থেকে সমৃদ্ধ হচ্ছিলাম। রঙ্গমঞ্চ আলো সাজ পোশাক সংগীত শব্দ যন্ত্র সেটিং এলাহী দক্ষযজ্ঞ। জাতি সমাজ-সংস্কার ভালোবাসা। সমস্ত কিছুই নাট্য জগতের অংশ বিশেষ। শিক্ষকগণ ছিলেন সব বেসরকারী স্কুলের শিক্ষক সময় মতো মাইনেপত্র পেতেন না
তাই মাঝেমধ্যেই আর্থিক সমস্যা তখন এই নাটকের তামঝাম বাড়াবাড়ি মনে হত। অবাক বিস্ময় ওঁদের ভেঙে পড়ার কোন লক্ষণ আমার চোখে পড়েনি । আমার পরিশ্রমের অহংকার মাটিতে মিশে গেছিলো।
সাধনা র দিবারাতি হর তবে শ্রান্তি
নবজাগরণ শব শব্দের যন্ত্রণা ক্লান্তি।
আমারও মাসিক আয় ও টিউশনি ভরসা। চাঁদা দেওয়ার মত অবস্থা ও নেই মনে হত এই বুঝি সব শেষ হয়ে গেল। নাহ্ শেষ হতে হতে ও ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ইঙ্গিত সবটাই অদ্ভুত ভাবে। মূর্তি গড়ার পয়সা এসে যেত তারপর হৈ হুল্লোড় যৌথ খামার যেন বা। খিচুড়ি আলুভাজা ডিমের মামলেট বেগুনভাজা।
সিদ্ধান্ত হল দল চালনার খরচ নাটক করেই তুলতে হবে যেমন ভাবনা তেমনি কাজ কল সো বুকিং স্টার্ট হয়ে গেল। হল ভাড়া নিয়ে টিকিট বিক্রি করে। পুশ সেলিং। নাটক নাটক নাটক সবসময় ঘিরে কেবলই নাটক সময় তখন নাটক।পৃথিবী জুড়ে নবজাগরণ ইয়াংকি কালচার দূর হটাও সুন্দর সুস্থ সংস্কৃতির প্রসার বাড়াও। ইচ্ছা আমদের মধ্যগগনে। এসব সত্ত্বেও ঈশান কোণে এক কালো মেঘ।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছিল। তারপর হুংকার ছাড়লে বজ্রানল তছনছে বাতাসে ছিটকে গেল সব। যে যার ভালো ভালো চাকরি ব্যবসা ঘর গৃহস্থালি।
“অবেলায় হাট শ্যামা কি নিয়ে ঘরে ফিরি…
ভবের হাটের তরি যারা …
একে একে গেল তারা…
আমি একা রইনু পড়ে… অবেলায়…