![](https://www.bifocalism.com/wp-content/uploads/2022/05/2022-05-19-11-24-19.jpg)
স ন ৎ কু মা র ব ট ব্যা ল-র জীবনীচর্চায়
যে জন থাকে প্রানের মাঝে
আজ বরং আপনাদের ভারতবর্ষের
এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর জীবন কাহিনীর উল্লেখ করি। ভারতবাসীর মনের মণিকোঠায় যাঁর নাম সোনার অক্ষরে লেখা আছে। তিনি আর কেউ নন–
বীর বিপ্লবী দীনেশচন্দ্র মজুমদার
ভূমি স্পর্শঃ– ১৯ শে মে ,১৯০৭ সাল( ৫ ই জৈষ্ঠ,১৩১৪ বঙ্গাব্দ)
বসিরহাট, উত্তর চব্বিশ পরগনা।
ব্রিটিশ ভারত।
আত্মহূতীর দিন– ৯ ই জুন, ১৯৩৪ সাল
বাবা – পূর্ণচন্দ্র মজুমদার
তিনি ছিলেন একাধারে অসীম সাহসী, অকুতোভয়, ব্রিটিশ বিরোধী, স্বাধীনতা যুদ্ধের অগ্রণী সৈনিক।উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব এবং অগ্নিযুগের শহীদ বিপ্লবী। প্রতিবেশী বিপ্লবী অনুজাচরণ সেনের মাধ্যমে’ যুগান্তর’ বিপ্লবী দলে যোগাযোগ করেন এবং পরে যোগদান করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঘা যতীন ( যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়)এর নেতৃত্বে বিপ্লবী অভ্যুত্থানের সময় বালেশ্বরের গুপ্ত ঘাঁটির পরিচালক শৈলেশ্বর বসু যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হলে অনুজাচরণের সঙ্গে রাত জেগে তার সেবা করেন। এরপর দলনেতার নির্দেশে তিনি বগুড়া ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় বিপ্লবী সংগঠনের কাজে হাত লাগান। ছোরা খেলা, লাঠি খেলার শিক্ষক হিসেবে “ছাত্রী সংঘ” প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেন। ১৯২৮ সালে দীনেশচন্দ্র মজুমদার সালে বি.এ. পাশ করে আইন পড়া শুরু করেন। আই.এ. পড়ার সময় যোগাভ্যাস করতেন, পরে সিমলা ব্যায়াম সমিতিতে লাঠি ও ছোরা খেলা শিক্ষা করেন। ১৯৩০ সালের ২৫শে আগস্ট,দলের নির্দেশে চার্লস
টেগার্ট হত্যার চেষ্টায় আক্রমণকারী তিনজনের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন।
আক্রমণ করার সময় তিনি ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। বিচারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ হয়। ১৯৩২ সালে মেদিনীপুর জেল থেকে অপর দুই বিপ্লবীসহ জেল ভেঙে পালিয়ে যান। পালাবার সময় পা ভাঙে যায় ।তা সত্ত্বেও আত্মগোপনে সমর্থ হন।
দেশকে স্বাধীন করার জন্য আত্মগোপনকালে কুলির কাজও করেছেন। অবশেষে চন্দননগরে তাঁকে আশ্রয় দেন বিপ্লবী শ্রীশচন্দ্র ঘোষ। ১৯৩২ সালে তার নেতৃত্বে দুবার ওয়াটসন হত্যার চেষ্টা হয়। চন্দননগরের পুলিস কমিশনার কুইনের নেতৃত্বে একদল পুলিস বিপ্লবীদের তাড়া করলে দীনেশের গুলিতে কুইন নিহত হন এবং তিনি বিপ্লবীদের নিয়ে আত্মগোপন করেন। ১৯৩২ সালে ব্রিটিশ পুলিসি অত্যাচার ও ব্যাপক গ্রেপ্তারের ফলে দলের অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন তিনি দলের পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করেন। গ্রিন্ডলে ব্যাংকের জনৈক কর্মচারীর সাহায্যে টাকা সরিয়ে সেই টাকায় অস্ত্র কেনার চেষ্টা হয়। এসময় তিনি কর্নওয়ালিস স্ট্রিটে নারায়ন ব্যানার্জীর বাড়িতে থাকতেন। ১৯৩৩ সালের ২৫শে মে পুলিস অনূসন্ধান করে বাড়িটি আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের গুলি বিনিময় হয়।
দীনেশ, জগদানন্দ ও নলিনী দাস শেষ বুলেট পর্যন্ত লড়াই করে আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। বিচারে তার প্রাণদণ্ডাদেশ এবং অপর দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ২৫শে আগস্ট, ১৯৩০ তারিখে অনুজাচরণ সেন ও দীনেশচন্দ্র মজুমদার অত্যাচারী কুখ্যাত চার্লস টেগার্ট সাহেবের গাড়ীতে বোমা ছোঁড়েন। টেগার্ট বেঁচে যান কিন্তু দীনেশ মজুমদার ধরা পড়েন। অনুজাচরণ ঘটনাস্থলেই মারা যান। বিচারে দীনেশ মজুমদারের যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর দণ্ড হয়। এই উপলক্ষে পুলিস বহু বাড়ি খানাতল্লাশ করে এবং বহু লোককে গ্রেপ্তার করে। এই ঘটনায় বিপ্লবী ( শোভারানি দত্ত, কমলা দাশগুপ্ত, শৈলরাণী দত্ত, ডা. নারায়ণ রায়, ভূপালচন্দ্র বসু, অদ্বৈত দত্ত, অম্বিকা রায়, রসিকলাল দাস, সতীশ ভৌমিক, সুরেন্দ্রনাথ দত্ত, রোহিণী অধিকারী) সহ অনেকে ধরা পড়ে।
বিচারে নারায়ণ রায় ও ভূপাল বসুর ১৫ বছরের দ্বীপান্তর, সুরেন্দ্রনাথ দত্তের ১২ বছর, রোহিণীর ৫ বছর ও সতীশচন্দ্রের ২ বছর কারাদণ্ড হয়। অন্যান্য বিপ্লবীরা সকলে মুক্তি পান। তারা সকলেই তরুণ বিপ্লবী দলের সদস্য ছিলেন( তাঁরা কেউ প্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন না)। ৮ই ফেব্রুয়ারী, ১৯৩২, মেদিনীপুর জেল থেকে পালিয়ে গেলেন দীনেশ। চারিদিকে সাড়া পড়ে গেল। দীনেশের নামে হুলিয়া ঘোষণা হল, ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার। এর মধ্যেই ধরা পড়ে গেলেন বক্সা, হিজলি ও মেদিনীপুর জেল থেকে পালানো বেশীরভাগ বিপ্লবীরা, শুধু ধরা পড়লেন না দীনেশ। পুলিশ পাগলের মত তাঁর খোঁজ চালাতে লাগল। এরমধ্যেই তিনি দলের হয়ে বেশ কিছু কাজ করে ফেলেছেন। একের পর এক ডেরা বদলে বদলে তিনি পুলিসের চোখে ধূলো দিয়ে বেড়াতে লাগলেন। ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।
অবশেষে ১৯৩৩ সালের ২২শে মে এক রক্তাক্ষয়ী সংঘর্ষের পর পুলিস তাঁকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়। শুরু হল বিচার। এক এক করে অনেক অভিযোগ আনা হল তাঁর বিরুদ্ধে। জেল পালানোর ষড়যন্ত্র, কুইন হত্যা মামলা, গ্রিন্ডলেজ ব্যাঙ্ক প্রতারণা ইত্যাদি। অবশেষে বিচারকরা রায় দিলেন প্রাণদণ্ড।বিচারের নামে প্রহসনে পরিনত হোল স্বাধীনতা সংগ্রামী দীনেশ মজুমদারের বিচার। ১৯৩৪ সালের ৯ ই জুন পরাধীন ভারতবর্ষের ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দিলেন ভারত মায়ের এক উজ্জ্বল প্রদীপ দীনেশ মজুমদার। আজ এই বিস্মৃত শহীদের আত্মাহুতীর দিন ।আসুন সবাই মিলে এই মহামানবের আত্মবলিদানের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আন্তরিক শ্রদ্ধা ও আভূমি প্রনাম জানাই ।তোমার স্থান চির অক্ষয় হয়ে থাকবে ভারতবাসীর মনের মণিকোঠায় ।
সহযোগিতা ও অনুলিখনঃ– হিমাদ্রি বর্মন
তথ্যসূত্রঃ– উইকিপিডিয়া
![](https://www.bifocalism.com/wp-content/uploads/2020/05/Logopit_1588335804373-4.jpg)