চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে লিখছেনঃ- দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী
মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা
পর্ব-৮
ঐতিহাসিক চন্দ্রকোণা
শোভা সিং এর মৃত্যুর পর তদীয় ভ্রাতা হেমন্ত সিং বা হিম্মৎ হিম্ম সিংবিদ্রোহী দলের নেতৃত্ব ভার গ্রহণ করলেন কিন্ত১৬৯৯ খৃষ্টাব্দে বর্দ্ধমানের অনতি দূরে একটি স্থানেজবরদস্ত খাঁর সহিত যুদ্ধকালে বিদ্রোহী দলের অন্যান্য নেতা পাঠান সর্দ্দার রহিম খাঁ নিহত হলেন। মোঘল সম্রাটের পৌত্র আজিমুশ্বান এই যুদ্ধের সময় উপস্থিত ছিলেন।
এই সমস্ত ঘটনার কিয়ৎকাল পরে ১৭০২খৃষ্টাব্দে
বর্দ্ধমানাধিপতি জগৎ রাম রায়’কৃষ্ণ সাগর’ সরোবরে স্নান কালে জনৈক গুপ্ত ঘাতকের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এই শোচনীয় ঘটনার
পরে জগৎ রামের জ্যেষ্ঠ পুত্র সুবিখ্যাত কীর্তি
চাঁদ বাহাদুর সমস্ত পৈতৃক সম্পত্তির অধিকার
লাভ করেন।
শোভা সিং এর মৃত্যুর পরেও কিয়ৎকাল
বরদার রাজা হিম্মত সিং ও চন্দ্রকোণার রাজা
চন্দ্রভাণ সিং ও দ্বিতীয় রঘুনাথ সিং স্বাধীনভাবে
রাজত্ব করেছিলেন।
কীর্তিচাঁদ বর্দ্ধমানে প্রতিষ্ঠিত হবার পরেই স্বীয়
পিতামহের হত্যা ও স্বীয় বংশের অমর্যাদার প্রতিশোধ গ্রহণের অভিলাষী হলেন। কীর্তিচাঁদ
বিপুল সংখ্যক বাদশাহী সৈন্যের সহায়তায়
তুমুল যুদ্ধে হিম্মৎ সিং ও চন্দ্রকোণার রাজা
রঘুনাথ সিংকে পরাস্ত করেন। ১৭০২ খৃষ্টাব্দে
এই ভীষণ যুদ্ধ ‘ঘাটালে’ হয়েছিল। যুদ্ধে পরাস্ত
হ’য়ে হিম্মৎ সিং অরণ্যে আত্মগোপন করেন ।
(এই যুদ্ধের কাহিনী ‘ওমালী’১৮১পৃষ্ঠা ও ‘রাজা
শোভা সিংহের বিদ্রোহ ও শ্রী শ্রী বিশালাক্ষী মাতার
ইতিবৃত্ত’ ১৩ পৃষ্ঠাতে লিখিত আছে।)
চন্দ্রকোণা হ’তে ঘাটালগামী সরকারী রাস্তার দক্ষিণ
দিকে (সুপ্রাচীন বরদা গ্রামে) পরিখা ও গড়খাই
পরিবেষ্টিত ‘রাজার গড়’ নামক স্থানে বিখ্যাত রাজা
শোভা সিং-এর রাজ প্রাসাদের ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হয়।
‘ভিতর গড়’ ও ‘বাহির গড়’ এলাকায় বরদা রাজ্যের দ্বারা ‘চংদার দীঘি’, ‘রণ সাগর’ ‘সিং সাগর’ও ‘কাগজ কাটা’ দীঘি প্রভৃতি বহু বৃহদায়তন জলাশয়
আছে। শ্রী শ্রী বিশালাক্ষী মাতা ঠাকুরাণী বরদা রাজ বংশের প্রতিষ্ঠিত অধিষ্ঠাত্রী দেবী। পূর্বের দেবীর শ্রী মন্দির রাজভবনের সন্নিকটে অবস্থিত
ছিল।
————–
তথ্যসূত্র: “ভগ্ন দেউলের ইতিবৃত্ত”
লেখক: কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী
ক্রমশঃ ……..