২১শের গদ্য
আমার ভাষা- বাংলা
একটা আবেগ, স্বপ্ন। সে স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য সিড়ি চাই। চাই কাছে যাওয়ার পথ, শপথ, ভাষা। আমি ভাষা মায়ের কোলে ঘুমোই, জাগি, দোল খাই। স্বপ্ন কি, নাকি এই সত্য? আচ্ছা, চিরসত্য বলে কি কিছু আছে? হয়ত আছে কিংবা….। বিতর্ক নয় কৌতুহল। আসলে কৌতুহল মেটাতেও তো ভাষা মাকে প্রশ্ন করি। আমার মা হাত ধরে। চাঁদ দেখায়, সূর্য চেনায়, তারা, নক্ষত্র, ফুল, আলো, বাতাস। সুর শেখায়। এই যে মেটে সুর, বাউল, ঝুমুর, সারি, জারি, পাঁচালি কিংবা মঙ্গল গান, শয়্যাল গান, কবিগান, তরজা। আমি হাল্কা হই, উড়ি, ভাসি, মেঘ হই, বৃষ্টি হই, সোঁদা মাটির গন্ধ আঁকি শরীরে। প্রেম ফুল ফোটে, পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, বকুল, শিমূল, সোঁদাল।
তবে কি এই ভাষাই হিজল কথা বলে? আম মুকুল আলো হয়ে যায়। লিচুর ডালে জাগে খুশি খুশি ঘ্রাণ। তবুও তো একটা শোক ক্রমশ শ্লোক হয়ে বুকে ঘাই দেয়। যন্ত্রণায় মুচড়ে উঠি। কেঁপে উঠি থত্থর। ভয়, যন্ত্রণা, কষ্ট, বেদনা। আমার বুকের ভেতর একুশের যন্ত্রণা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। ব্যাথা। বেহালায় কেঁদে কেঁদে ওঠে। সাতচল্লিশের টুকরো হৃদয়ে টান পড়ে। ব্যাথা ওঠে। চাপিয়ে দেওয়া উর্দু ভাষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে রাঙা হয়ে যায় ঢাকার রাজপথ। একটা সকাল। মায়ের চোখের অশ্রু রক্ত হয়ে বয়ে যায়। কেননা…..! সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউর। স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত, সব-সব্বাই; বাংলার জন্য বাংলাভাষার জন্যই। বুলেট উপেক্ষা করেই।
গর্জে ওঠে কয়েকটা শব্দ। তাজা রক্তে আলপনা হয়। লাল ফুল ফোটে পাথুরে রাজপথে। হাহাকার। যন্ত্রণা। বিশ্ববাসী কি সাক্ষি হলোনা, একটা ভাষার জন্য, একটা স্বপ্নের জন্য প্রাণও….! কেউ কি বুঝবে ১৯ মের যন্ত্রণা? যারা এ ফর অ্যাপেল, বি ফর বল, সি ফর ক্যাট। কি জানি অ-এ অজগর, আ-এ আমের সাধ? ‘আমাদের ছোট নদী’র সুর, ছন্দ, চিত্র! খাঁচার অচিন পাখির কথা? কিংবা সত্যিই কি সোনার গৌর বাংলা ভাষাকে চিনবে তারা? বুঝবে আবেগ? এই বাউলের একতারার কথা, ঝুমুরের সুর, ভাসান গান ; সারি, জারি, কেত্তন? কি জানি!!!
আমি গর্ব করি – আমি বাঙালি। আমার মন্ত্র বাংলা, আমার স্বপ্ন বাংলা, আমার ইচ্ছে বাংলা, প্রেম, বিরহ, বিলাপ, শোক সব সবই। যাবোও শেষ যাত্রায় হরিধ্বনির বাংলা সুর কানে নিয়েই। চিতা চিতা বাংলার আম, জাম, নিম, কাঁঠাল আগুনের ভেতরই।
★★★