পর্ব-২১ মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথাঃ শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী

  
পর্ব-২১

  শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী-
চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে                         
           মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা

                                                                                                ছবিঃ গৌতম মাহাতো

                                পর্ব-২১

                              বিদ্রোহ বহ্নি


নীল কুঠি, নীলের টুসু গান, চন্দ্রকোণার তাঁত  শিল্পের অবস্থা ও নীল বিদ্রোহ।
             শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী             

১৮৫০ খ্রীস্টাব্দে উক্ত দুই ইংরেজ ছত্রগঞ্জ নামক স্থানে তাদের সদর কুঠি স্হাপন করে। তখন নীলের মূল্য অত্যাধিক ছিল, তাই তারা বগড়ী পরগণার
উর্বর মাটিতে নীল চাষের প্রবর্তন করল। তার ফলে কৃষকেরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অন্যান্য চাষ বাদ দিয়ে কেবল মাত্র নীলের চাষ করতে বাধ্য হল। আরম্ভ হল ইতিহাস খ্যাত নীলকর সাহেবদের অত্যাচার। পূর্বেই বলেছি, ইতিপূর্বে শিলাবতী নদীর দুই পার্শ্বে
ইতস্ততঃ বহু নীলকুঠি স্থাপিত হয়। এ সময় কেবল মাত্র কেবলমাত্র পূর্ব বাংলাতেই যে নীলকর সাহেবদের অত্যাচার হয়েছিল তা ঠিক নয়; হয়েছিল পশ্চিমবাংলারও শিলাবতী নদীর দুই
নদীর দুইতীরের বহু গ্রাম জনপদে। কালের অতন্দ্র
প্রহরী ছত্রগঞ্জ ও চন্দ্রকোণা  শহরাঞ্চলের নীলকুঠি গুলি আজও তারই নীরব সাক্ষী।
            এতদঞ্চলে নীল চাষের প্রমাণ স্বরূপ আজ থেকে প্রায় ১২ বৎসর পূর্বে লেখক একটি নীলের টুসু গান সংগ্রহ করেছিলেন। সেই গানটি নিম্নে প্রদত্ত হল:-

               নদীর ধারে নীল বুনিলাম
                             নীলের শুঁটি ধরে না
               ঘরে আছে কেলতা-জামাই
                            নীল ধূতি বই পরে না। 
                 কাপড় কাপড় কর টুসু
                           কি কাপড়ের সাধারণ আছে? 
                ভাবে আঁকা বিচ্ছেদের পাড়
                          কুসুম ফুলের ছাপ আছে। 
সে যাহোক ;এইভাবে এতদঞ্চলের তন্তুবায় বা তাঁতীরা বৃত্তিচ্যুত হয়ে ক্রমশঃ কৃষি মজুর ও গতানুগতিকভাবে ভাবে চাষের উপর নির্ভরশীল
হয়। তখন অপরদিকে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে জর্জরিত হতে থাকে এখানকার গরীব
প্রজারা। তাই তারা আবার সাহেবদের বিরুদ্ধে
মরিয়া হয়ে রুখে দাঁড়ায়। প্রবাদ আছে যে, এই সময় বিদ্রোহী গণ  ইংরেজদের  চাটুকার নীলকুঠি দেওয়ান আনন্দ মাইতি ঢেঁকিতে করে কুটে মারে।
 (বিদ্রোহ বহ্নি – প্রথম প্রকাশন ইং ১৯৮৮ সাল) 

                                                              ক্রমশ…

                                      ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *