ছবিঃ গৌতম মাহাতো
সোনালী ব্যানার্জী-র কবিতাগুচ্ছ
কবি নিজের জন্য লেখেন,লেখার কাছে বসেন য্যানো কোনও পুণ্যতোয়ায় পা ডুবিয়ে স্বচ্ছ আরামের দিকে ঝুঁকে পড়া ক্লান্ত শরীর।আর সেই আরামের হাতে উপসম নিতে নিতে লিখে চলা কিছু স্বগোক্তি।কবি কোনও পত্রিকাতেই লেখেন নি,তাঁর বিচচরণ নিজের ভেতর নিজের গভীরে, বলা যায় আত্ম-খনন।
ইচ্ছে-ডানা
স্বপ্নের ভিতর সাতরঙা বুদবুদ
উড়ে যেতে গিয়ে উবে যায় নিমেষে
ইচ্ছেরা পালক কুড়োচ্ছে
অসংখ্য স্ফুলিঙ্গ
জমাচ্ছে বিন্দু বিন্দু ছাই
কিছু কিছু পুড়ে যাওয়া পালকের ফিনিক্স জন্ম থাকে ।
পাখিওয়ালা
বৃষ্টি এলো
চিলেকোঠা বন্দী ঘুড়ি,
আজ রঙচটা দেওয়ালেই রঙের কোলাজ
বরং ভাসিয়ে দিই
পাওয়া-না পাওয়ার হিসেব
কাগজের নৌকা
অর্ধেক আাকাশ ঝুঁকে পড়ছে জানালা গলে
বৃষ্টি ডানা মুছে দিচ্ছে সবটুকু নীল
জলন্যাকড়ায়
দরজায় ঝাপসা পর্দা, বৃষ্টির
ভিজতে চেয়েও মেয়েটা চৌকাঠ পেরোচ্ছে না।
ইয়ে লমহে..
ফুরিয়ে যায় সময় মুহূর্তের ডানয় ভর করে
এর পরও নিশ্চুপে থাকা আলফাজে,
সেই আলোকিত খামে হয়তো তোমারি ঠিকানা লেখা
উড়ে যেতে চাওয়া যত অক্ষরের গায়ে জ্বর
খুব চেনা লাগে সে সমস্ত রুহানি উত্তাপ
আর এই সমস্ত অনুভবের টুকরো কোলাজ
সায়ংকালীন ইবাদতে মেশে।
ফেরারী
বুনোহাঁসের ডানায় সূর্যঘড়ি
ছায়া নামলেই সময় স্থির !
ক্লান্ত উড়ান …
আনমনে শীতসন্ধ্যার হিম মাখে
নিষিদ্ধ সীমানা ছুঁয়ে ফিরে আসে বারবার
বাড়ানো হাতে দ্বিধার রেখা
থমকানো পা
তিরতিরে পালকে মুখ ডুবিয়ে মগ্ন উষ্ণতায়
রাত ভোর
প্রাত্যহিক শৈত্যযাপন
পাখি ,
এত দ্বিধা , এত ভয় নিয়ে কি পরিযায়ী হওয়া যায় !
কালবৈশাখী
মনে হচ্ছে এই প্রথম
ঝরা পাতা আদর দিয়েছে ভিজে চুলে
মনে হচ্ছে এই প্রথম
বৈশাখী ঝড়ে মেখেছি ধুলোর রূপটান
এই প্রথম
এই প্রথম এভাবে
মেঘরঙ ভালবেসে কাজল ধুয়ে গেছে …
মেরি ক্রিসমাস
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে খেলতে ছাড়িয়ে গেল মফস্বলী স্টেশনগুলো
স্লিভলেসে ঘুমিয়ে কাদা কিছু খালি দেশলাই বাক্স
তুমি বললে, এগুলো গিফ্ট বক্স
ক্রিসমাস ট্রির নিচে বসে গিফ্ট প্যাক করছে সবাই
কারও কাউকে কিচ্ছু দেওয়ার নেই-
একটা আয়নায় রাংতা মোড়াচ্ছি আর চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে
আয়নার আমিকে প্রশ্ন করলাম
তুমি শ্যাডো না রিফ্লেকশন?
আয়না বললো, শ্যাডো- দ্য রিফ্লেকশন
আমি পিছন ঘুরতেই কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর আয়না ভেঙে পশ্চিমে চলে গেল
উজান
অভিমানের ছাইগাদা পেরোলে খড়কুটোর সংসার
শীত বেড়ে উঠছে উত্তর-দক্ষিণের ঠোকাঠুকিতে
দেখো ঘুমিয়ে পড়ছে আদরের জোড়াতালি
আলসে রোদ্দুর মেখে
এবছর শীতে আগুন পোহাতে চেয়ে
পুড়িয়ে ফেলছি যাবতীয় অভিযোগ
নিঃশর্ত সকল শর্তাবলী
সে আগুনে আতপ্ত ভাতও রেঁধে দেবো আগের মতোই
শীতঘুম ভুলে স্নান সেরে এসো
এখানে ইচ্ছেনদী বয় না আজকাল
গতিপথ বদলে গেছে ভাঁটার টানে
আগুনরঙা এ নদীর নাম সর্ষেক্ষেত
অবগাহন হোক
কোকিলের ঠোঁটে বাঙ্ময় হয়ে উঠুক
আমাদের এতদিনের না-বলা কথারা
কার্ফু
মুখোমুখি সৈন্যদল…
কাঁচের চুড়িতে ঠিকরে পড়া আলো
আর ভাঙা বেলোয়ারী চুড়ির ক্যালাইডোস্কোপ
সায়ংকালীন যুদ্ধবিরতির নৈঃশব্দ
হিম পড়ছে
নিরাময় খুঁজছে ক্ষত
পায়ে পায়ে নিঝুম শহর একলা হেঁটে
★★★