ছবিঃ গৌতম মাহাতো
বৃষ্টি আগুন ও অস্তিত্ব
অ ল ক জা না
কবিতার সঙ্গে সংসার, পথ হাঁটা তা প্রায়
পঁচিশ বছর তো বটেই। পরিচয় দেওয়ার মতো কোন কিছু না থাকলেও”… আপনি কী করেন ?” এই পরিস্থিতিতে “কবিতা লিখি” বলে সামলে নিয়েছি। এর পরের প্রশ্নও ছিল “… কেমন পান টান ? ” বুঝতে বোধকরি কারো আর অসুবিধে নেই। মানে রোজগার পাতি। বিনম্র স্বরে বলেও ফেলি “…এই চলে যাচ্ছে।” কিন্তু আমি তো জানি বা সবাই জানেন আমরা কবিতা লিখে, সাহিত্য করে ঠিক কোন্ অর্থ বাড়ি বয়ে আনি।
মানস…গৌতম-নারায়ণ চৌবে মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত ২০০৫ খড়গপুর বই মেলার একটা স্মৃতি এখনো আমাকে নাড়া দেয়। পুঁজি ৫০ টাকা ভেঙে বইমেলায় কবিতা পাঠ করে এসে পরেরদিন বাসি ধানচারা পুঁতেছি, জমিতে সার না দিয়ে। এর জন্য উনি কিন্তু অন্তহীন আগুন বাক্য আমাকে বর্ষণ করা থেকে বিরত থাকেননি। সহ্যও করেছি। উনি মানে গিন্নী মিনু। এরকম বহু ঘটনা আমরা যারা লিখেসুখীজন তাদের আছে এবং তা গচ্ছিত সম্পদস্বরূপ। কবিতার জন্য একটা চাকরিও কপালে জুটলনা। এই ব্যর্থ শোক আমার মতো অনেকের আছে।
তবুও বিরামহীন এই পথ চলা।মৃত্যুই একমাত্র বিছিন্ন করতে পারে। আর কারো সাধ্য আছে নাকি ? কত লড়াই, কত মান-অভিমান, অবজ্ঞা উপেক্ষা সবই আজ সামলে নিতে শিখে গেছে আমার আমি। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস রাজনীতির রঙ অনেকটাই ফিকে করে দিয়েছে। সীমান্ত–কাঁটাতারের উত্তাপ ও তো এখন আহত জটায়ুর মতো বিকারগ্রস্ত। তবে রাষ্ট্র কিংবা পরিবার চালাতে আগে কোন্ টা বেশি দরকারি তা হাড়ে হাড়ে আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে এই বিভীষিকা করোনা। তো এদিক দিয়ে করোনার জন্য আমাদের তরফে একটা ধন্যবাদ তো পাওনাই থাকে। এই আতঙ্কিত ঘা সেরে ওঠার পর মানুষরতণ আর একবার ভাবুন না, আপনার রাষ্ট্র নেতার ভূমিকা ঠিক কেমন হওয়া উচিত।
আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের থেকে লিখেসুখীজন অবশ্যই আলাদা। চেতনায় কিংবা অভিরুচিতে। তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠ নেতার পদ লেহন করে রাষ্ট্রীয় সুবিধা উপভোগ করবেন এটা সাধারণ মানুষ কেন মানবে ? ভরসা বা বিশ্বাস রাখা ব্যাপরটাতো অনেক পরের কথা। সুতরাং সময়ের ঠোঁট অতীব ধারালো। সে আগুন হয়ে এলে আমাদের অস্তিত্ব কোথায়। আর যদি তুমুল বৃষ্টি হয়ে নামে তো সমস্ত রঙ যাবতীয় সীমানা মুছে দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয় কী ?
★★★