ছবিঃ গৌতম মাহাতো
ভারতী বন্দ্যোপাধ্যায়–এর কবিতাগুচ্ছ
মূলত লিটল ম্যাগাজিনেই তাঁর বেশি বিচরণ।তবে বানিজ্যিক পত্রিকাতেও লিখেছেন।গদ্যও লেখেন।আজকের পাতায় তেমনই আরও এক নৈঃশব্দের কবি
একক হাওয়া একক কলম
সাতপর্ণীর ঘাটে এসে লাগে
নানাকবির মহামিলনমেলা
সে সব তােমার মনে আছে নাকি?
ঋষিকবির যুজ্ঞ মহলে সারা,
সেই যেবারে প্রথম হাওয়ার মাস
আমরা সবাই গ্রামের বাঁধাঘাট,
মােমের প্রদীপআঁচলআড়াল করে
হাঁটতে পারি কয়েক যােজন মাঠ।
লিখতে হলে সেই কথাটাই লিখাে
সেই যেবারে প্রথম মধুমাস,
এসব কি আর বুঝবে অন্য লােকে?
বুঝিয়ে বলার দায় আমাদের নেই।
একক কলম একটি কথাই লেখে।
সারাজীবন ধরে।
নির্জন
এখন আমার বেড়ার গায়ে অপরাজিতার গুচ্ছ ধরুক
ভালবাসা চিনতে শিখুক জগতের সব দুষ্মন্ত্য
তালাবন্ধ চিঠির বাক্স খুলবনা আর প্রথামত
টেলিফোনে ধূলাে জমুক ঘরটা থাকুক এলােমেলাে,
এবার আমার কুয়ােতলায় সকালবেলার আলাে পড়ুক
সােনাঝুরির পাতায় পাতায় প্রতীক্ষা থাক বিধিমত
মােবাইলটা বেজে চলুক কাগজ কলম লণ্ডভণ্ড
যাবার সময় শরীর জুড়ে কবিতা থাক কয়েকপ্রস্থ।
দ্রৌপদী এখন
এখন আমার একা থাকার পালা
মাঝে মাঝে প্রদীপ জ্বালাও তুমি,
বাকী সময় ঝড়ের হাহাকার
অন্ধকারে কাঁপায় অলিগলি
সেসব কিছু মনে আছে নাকি?
সেই যেবারে প্রথম বৃষ্টি এলাে
ভেসে গেলাে ঘরের ভাঙা ছাদ,
প্লাবন-মাখা নৌকাখানি বেয়ে
একা তুমি, একক অভিসার
এখন সেসব ভুলে গেছ নাকি ?
চিতাভস্ম শেখার অনেক কিছু
মশাল পােড়ায় মনের কথকতা,
মন্ত্রপূত হােমের আগুন থেকে।
জন্ম নিল নারী, অযোনিসম্ভূতা।
প্রিয়তমেসু
এখানে ঘর অন্ধকার
স্তব্ধ বারােমাস,
তুমি এখন রাধার সঙ্গে
কুঞ্জে কাটাও রাত।
ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে বসে
লিখছি চিঠি একা,
এই চিঠিটা কোনদিনই
ডাকে দেব না।
রুক্মিনীকে ভুলে গেছ
বস্ত্রহরণকালে,
তােমার স্বপ্ন সারারাত্তির
আমায় ঘিরে রাখে।
তােমার জন্যে খাগের কলম
ফুলদানীতে ফুল,
তােমার জন্যে সন্ধে হলে
আবার বাঁধিচুল।
বৃন্দাবনে পুজো পাবে
অনেক গােপীর মেলা,
সেই কারণে আমি হলাম
প্রােষিতভর্তৃকা।
বৃষ্টিভার
সেই আষাঢ়ে প্রথম দেখা প্রথম বৃষ্টিজল
একই ছাতায় তুমি আমি ঝড় বাঁচিয়ে চল
তােমার চোখে আলাে ছিল, বাতাস সর্বনেশে
আমার ঘরে বাদল নামে শিকড় গেছে ভেসে
কচুর বনে বৃষ্টি এল, কেয়ার বনে মেঘ
বাঁশের বনে মর্মরিত ঝােড়াে হাওয়ার বেগ
সেই আষাঢ়ে বর্ষা আসে সােহাগী সুখ গায়
এই আষাঢ়ে বন্যা এলে উঠোন ডুবে যায়
সেই আষাঢ়ে বকুলগন্ধ ইছামতীর পাড়
এই আষাঢ়ে তুমি আমি মধ্যে পারাবার।
★★★