স র্বা ণী রি ঙ্কু গো স্বা মী-র ছোটগল্প
বিকিকিনি
কথায় বলে টাকাই হলো যতো অনর্থের মূল, অন্ততপক্ষে দীয়ার ক্ষেত্রে তো বটেই। জীবনের প্রতিপদে বাবার কম মাইনে ওর পথ আগলে দাঁড়িয়েছে, ভালো ইস্কুল ভালো টিউশন কিছুই জোটেনি… সখ আহ্লাদের কথা তো ছেড়েই দিলাম। এতো সুন্দরী এতো গুণী হয়েও মাঝারি প্রাপ্তিতেই খুশি হতে হয়েছে বরাবর। সেলাই গান সবেতেই ওস্তাদ সে, কিন্তু ঐ… শেখাটুকু এর দেখে ওর শুনে। মাস্টার রাখবে কি, স্কুলের মাইনে আর খাতাপত্র জোটাতেই বাবা হিমসিম। দাদার যদি লেদ মেশিনে কব্জি থেকে হাতটা না কাটা যেত, এতটা কষ্ট বোধহয় হতো না ওদের। যদিও এখন একহাতেই দাদা সাইকেলের পেছনে বোর্ড আটকে লটারির টিকিট বিক্রি করে, কিন্তু তাতে ক টাকাই বা আর! বাবারও তো রিটায়ার করার সময় চলে এলো, মায়ের চোখের নীচে কালির পোঁচ ক্রমশই গাঢ়।
দীয়ার বান্ধবী অঙ্কিতার পিসতুতো দাদার নাকী দীয়াকে খুব পছন্দ, সেবার কলেজে ছাড়তে এসেছিল বোনকে তখনই দেখেছে। কিন্তু পিসির আবার ধনুর্ভঙ্গ পণ, ছেলের বিয়েতে মেয়ের বাড়ি থেকে চারচাকা না নিলেই চলবে না। এতো খরচাপত্র করে ছেলেকে সেরা কলেজ থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো, এদিনের কথা ভেবেই তো না! ছেলে করুক না পছন্দসই মেয়ে বিয়ে, কোন মেয়ের বাবা না বিয়ের জন্য টাকা জমায়। না হলে এমন হীরের টুকরো ছেলে এমন হাভাতে ঘরে জামাই করাই বা কেন বাপু!
দীয়া জানতো সে ছেলে যতোই তাকে দেখে হাবুডুবু খাক না কেন, আসল সময়ে মা বাবার কথা অমান্য করবে না। মায়ের একটা ছোট্ট সখ বলে ক্রমাগত চাপ বাড়াবে তার ওপর হয়তো বিয়ের পরও। শেষমেশ ওটাই ডিভোর্স বা আরো কপাল খারাপ হলে হয়তো মৃত্যুর কারণই হয়ে দাঁড়াবে.. কে বলতে পারে! অঙ্কিতাকে সে বলেও ছিল সেকথা, তো অঙ্কিতা পাত্তাই দিলো না। মিচকে হেসে বললো, “দাদামণি বলেছে, একটা ব্যবস্থা করবই মাকে ম্যানেজ করার। তুই খালি একদিন কফিশপে দেখা তো কর। ভয় নেই আমিও থাকবো সঙ্গে বৃন্দাদূতি হয়ে।”
তো প্রচুর পিড়াপিড়ির পর একদিন হলো সেই দেখা, আবেদন ছিল দোপাটিরঙা সালোয়ার কামিজটা পরে যাওয়ার। হাসিই পেয়েছিল শুনে, ইঞ্জিনিয়ার ছেলের তো রঙের ধারণা সাঙ্ঘাতিক! দোপাটির তো কতো রঙই হয়, আন্দাজেই ধরলো হাল্কা গোলাপিটাই হবে। বকবক অঙ্কিতাই করলো বেশিরভাগ, তারপর একসময় বাজে একটা অজুহাত দেখিয়ে একটুখানি কেটেও পড়লো ঠিক। একা হতেই রাজ্যের লজ্জা ঘিরে এলো দীয়ার, কি কথা বলবে বুঝতে না পেরে সবচেয়ে আশঙ্কার কথাটাই বলে ফেললো..”আপনার মা কি …”
কথা শেষ করতে না দিয়েই ওর চোখের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকালো অনিকেত, “গাড়ি বুক করে দিয়েছি, মা জানবে ওটা আপনার বাবা দিচ্ছেন। খালি ওনাকে কথাটা উঠলে রাজি হয়ে যেতে বলবেন, বাকি দায়িত্ব আমার!” চোখ প্রায় কপালে ওঠার উপক্রম দীয়ার, এ ছেলে বলে কি? এমনও হয় আজকের দুনিয়ায়, এমন হীরের টুকরো ছেলে নীলামে চড়বে সেটাই তো স্বাভাবিক, যতো উঁচু দর তত নিশ্চয়তা। এমন গল্প সিনেমাতে রাখতেও সাহস পাবে না তো কোনো ডিরেক্টর, আজগুবি বলে দর্শক তুলোধোনা করবে যে!
“কি ভাবছেন, আমি যে বিক্রি হয়ে গেছি আপনার চোখের দিকে তাকিয়ে। গাড়িটা মায়ের সখ, কে দিলো কি আসে যায় তাতে। হয়তো অপূর্বদার হাতটা ঠিক থাকলে তিনিই জানপ্রাণ লড়িয়ে দিতেন কিম্বা হয়তো অপূর্বদার মতো আমিও …!” আর শুনতে পারে না দীয়া, চোখের জল সামলাতে সামলাতে অনিকেতের মুখে হাত চাপা দেয়। বিক্রি তো ওই হয়ে গেল আজীবনের জন্য ,বিক্রি হতেও যে এতো ভালো লাগে সত্যি ওর কোনোদিন জানা ছিলো না, কোনোদিনও না।