রা জী ব   দ ত্ত-র কবিতাগুচ্ছ

পরিচিতিঃ জন্ম: ১৯৮১। পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক। শূন‍্য দশক থেকে লেখালেখি শুরু হলেও এই শতাব্দীর প্রথম দশেকর শেষের দিকে ‘একতারা নদী’, ও ‘পাখিপুরাণের গান’ নামে তাঁর দুটি কাব‍্য পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। মূলত লিটিল ম‍্যাগাজিনই তাঁর লেখালিখির ঘরবাড়ি ও সাতরঙা রামধনু মহল। আত্মীয়তা প্রকাশ দাস সম্পাদিত স্বকাল নামে এই সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য ছোটো পত্রিকার সঙ্গে। ‘কবি’ অনেক বড় ও বিশুদ্ধ শব্দ তাঁর কাছে। তাই নিজেকে শব্দশ্রমিক ভাবতেই পছন্দ করেন। পছন্দ করেন শিশুদের সঙ্গলাভ আর পাখিদের খুঁটে খাওয়া। বাইফোকালিজম্-র পাতায় আজ ‘সিন্ধু-কাবুল কথা’ শিরোনামে তাঁর একগুচ্ছ কবিতা

 

রা জী ব   দ ত্তর কবিতাগুচ্ছ

 

সিন্ধু-কাবুল কথা

এক

আহা কত ভালোবাসা ছড়ানো ছিটানো
স্পর্শে ও গন্ধে রেণু রেণু
তবুও তো, কাঙালীর পথে পথে
তুই তো কাঙাল
ঘুরে ঘুরে বাজালি
এ কার বিজন…

দুই

না চলা পথ, তুমি কেমন?
দু পাশে কি তোমার রংবেরং আছে?
উড়ে কি আসে সেখানে অশ্রুপাখির পালক?

না চলা পথ, তোমার গল্প সাজাবো আজ
আর বকুল ঝরে পড়বে আর
সে ছুটে আসবে…

সে, ছুটে, আসবে তো
না চলা পথ?

তিন

এই যে ভয় ও অস্পৃশ‍্যের দেশ
জেনো, এ আমারই কুহেলিকা।
উতলা হইয়ো না, শান্ত হও
চেনো স্পর্শ

থিরথির কাঁপে পাতা
আলোর গভীরে ছায়ার প্রলেপ
দুপুর খেলায় ভিরুল নাচন,
খিলখিল হাসে।
খোঁজে
একটি মুগ্ধবোধ

চার

যতবার পালাতে যায়, টেনে ধরো হাত।
কী করে জন্ম দেবো, বলো,
আঙুল ঠুকে ঠুকে পাথরের ফুল,
রেণুতে বুদ্ধসোহাগ?

চাঁদ ভেঙে পড়ে, চাঁদ
বুড়ি হয়; দক্ষিণে, পূবে, পশ্চিমে আর
আমাদের উত্তরমালায়।

পাঁচ

গতকাল তাঁর জন্মদিন এসেছিল।
আজ চলে গেছে। অথচ, আমি
শুভেচ্ছা জানাই নি তাঁকে।

সে কি অপেক্ষা করে ছিল?
সে কি, অপেক্ষা করে?

চৈত্রের শেষ দুপুরে ঘুরপাক খায় পাতা।
হু হু বাতাস, হু-হু, হু-হু ওড়ে…

 

ছয়

তবুও সিন্ধু জাগে বিন্দুতে বিন্দুতে
প্রিয় সুর বেনোজলে ভেসে আসে।
হৃদয়, সেই কবেকার কোন প্রেমিক কাবুল এক
একা একা লহু লুহান, মূর্তিমান ঘাটের পাথর।
চেয়ে দেখে দশমীর বিগলিত চাঁদ
সিন্দু়র সোহাগে তোমার
চির অচেনা, চির অচেনার মতো ডুবে যায়
অশ্রুসজল ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ে…

সাত

এ রূপ লইয়া কী করিবে বলো?
বলো, বলো, জাগাবে কাকে?
কোন সে নাগর?

যে দেখতে জানে সে তো
অন্ধ ফকির। রামকানাই।
একতারাতে তাঁর টুংটুং
হাওয়ায় হাওয়া। শূন্যে শূন্য।
তারই গহিনে
তোমারই প্রতিমা,
প্রজ্বলিত। বিমূর্ত।

 

আট

এ জীবন বড় সুন্দর, তবু–
গোয়েবেলস সরণিতে,
এ পৃথিবী হেলে গেল খুব।
দক্ষীণায়ণে সরযূর তীরে
আমিও হেলে গেছি সাঁঝের বেলায়।
সংক্রান্তির সংক্রমণে
কী আর তবে বলি প্রভা?

থেমে থেমে কুলোপানা ফনা
হিস্ হিস্ নাকের পাতা

নয়

অপেক্ষা বড় কথা নয়;
বড় নয় ধিক ধিক আলোর ফুরিয়ে যাওয়া।
যদি, ফুলগুলি ঝরে পড়ে,
পাখিগুলি উড়ে যায়, আর
পাতাদের মর্মর উড়িয়ে নিয়ে যায় হাওয়া–
শেষবারের মতো, তখন
এইসব মলিনগাথা, ছোটোমানুষের গান
রাধা নামে
কে শোনাবে তোমায়?

লেখা পাঠাতে পারেন
Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *