রে জা উ দ্দি ন স্টা লি ন

রে জা উ দ্দি ন স্টা লি ন

করমর্দন

কবিতার শত্রু সমবেত শহরে
তাদের ছবিতে সয়লাব সমস্ত সরণি
ক্ষমতার বিভীষিকাময় যাগযজ্ঞ
বুড়িগঙ্গা বিমূঢ়
শহরের প্রধান ফটক সাজানাে হয়েছে নক্ষত্রে
ঐতিহ্যের অতীত-হাতির দাঁতের তোরণ
শুড় দোলাচ্ছে গৌতমের মায়ের গর্ভনিঃসৃত সাতটি শ্বেত ঐরাবত
মেঘ রাজ্য থেকে ধরে আনা ময়ূর গুলো ডানা
সোনার পানিতে ধােয়া হচ্ছে।
পথে পথে কাশ্মিরী কোমল গালিচা
পলিশ করা হচ্ছে প্রতিবাদীদের রক্তে
অভ্যর্থনায় পরিবেশিত হচ্ছে বেহুলাদের উদ্দাম নৃত্য।

অশ্বারোহী ও পদাতিক গান পতাকা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে
সম্মিলিত বাহিনী সালাম গ্রহণ করেছে কবিতার শত্রু
এদের মধ্যে কেউ হত্যা করেছিল শহীদ সাবের ও মেহেরুন্নেছা
এদের কারো নির্দেশে ক্রসফায়ারে সামনে দাঁড়িয়েছিলেন

কায়সার ও রায়হান

রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় ধোঁয়া উঠছে
ঝাড়বাতির কৃপায় পানীয় রূপ নিয়েছে পান্নায়
সুকান্তের মোরগ রোস্ট প্লেট থেকে দৌড়ে পালাতে চাইছে।
কালা ভুনা কড়াই থেকে শরৎচন্দ্রের মাহেশের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে
অতিথিদের জিহ্বা দীর্ঘ হতে হতে স্পর্শ করেছে
শহরের সবকটি থালা
আর মাননীয় গণ অনবরত করমর্দন করছেন
কবিতার বিখ্যাত শত্রুদের সাথে
কি অভূতপূর্ব

দুঃখ এক নৈঃশব্দের নদী

দুঃখ এক নৈঃশব্দের নদী
হাজার বছরব্যাপী দুঃখের ক্রুশ
প্রবাহিত গলগাথা দিকে।
পবিত্র গ্রন্থের ভুল নির্ঘণ্ট কত নিরপরাধীকে
ভাসিয়েছে অগ্নিশিখায়

দুঃখ পেতে পেতে চোখ পরাজিত করেছে পাথর
অভিযোগ দিতে দিতে কষ্ট অতিক্রম করেছ ধৈর্য
যদিও সাফল্য ও ব্যর্থতার সব দায়িত্ব নিজের
এবং বাঁচার যুদ্ধে এক সময় জীবন ও মৃত্যু অর্থহীন
মূলত মানুষ স্মৃতির শেকলবন্দি কৃতদাস
বারবার ষড়যন্ত্রের রাজধানী থেকে উথিত
বিনাশকে ক্ষমা করেছে
আর জয় করেছে হৃদয়ের রাজধানী
স্বীকৃতি দিয়েছে দৃশ্য-অদৃশ্যমান
আলোর খোঁজে পাড়ি দিয়েছে প্রার্থনার পাতাল
আর ক্রমাগত জিতে নিয়েছে নিজেকে – জগতের

অনুভব উজ্জীবিত হলে প্রেমের পুনর্জন্ম হয়।
আদম ও ইভ জানে মিলনের জন্য
বিরহ অনিবার্য কেন
আর সৃষ্টির জন্য সংঘাত

দুঃখের সর্বোচ্চ শিখরে উঠে
মহাযুদ্ধের বিশাল প্রান্তরে দাঁড়িয়ে
আনন্দের ব্রহ্ম মুহূর্তে পৌছলে
আমরা যুক্ত হই ভালোবাসার ইতিহাস
ইতিহাসের মহত্তম বাণী :

‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।
আমি তােমাকে ভালােবাসি না

আর ভালােবাসলে ক্ষমা করা কঠিন

অস্তিত্ববাদ

স্বর্গ আর পৃথিবী মিলিত হয় ঝড়ের মাধ্যমে
সে প্রমত্ত মিলন ধ্বংস করে শতাব্দীর জ্যেষ্ঠ বৃক্ষদল
প্লাবিত হতে পারে মাইল মাইল শূন্যতা
জগতের উপসংহার

বজ্রপাত ঈশ্বরের সাবধান বাণী
সুমহান যােব যেমন শুনেছিলেন স্রষ্টার প্রাণের আওয়াজ
প্রতিটি পরিবর্তন খুলে দেয় জীবনের অলৌকিক স্বর
মৃত্যুর আগ মুহূর্তে আমরা জানতে পারি
সত্যিকার অস্তিত্ব আমাদের।
এবং তখনই জন্ম নেয় স্বর্গ ও নরক

প্রতিধ্বনির পথ

কোথাও থামার সুযোগ নেই
মানুষ নামের অর্থ-বহুদূর
শুধু স্রষ্টার আলাে পড়ে জীবনজয়ী মানুষের ওপর
যারা পার হয় প্রতিধ্বনির পথ

জগতে কী ঘটছে জানলে সহজ হয় নিজেকে জানাও
অসীম সমুদ্র কিংবা পর্বতে
আমরা আত্মার মুখোমুখি হই
আর অগস্ত্য যাত্রায় পাপ থেকে পরিত্রাণ পেতে
নিজেকে ক্ষমা করে পরিশুদ্ধ
পবিত্র বেদনা ঝরে পড়া চোখের জলেতে আমার রক্ত

এগোনোর পথ কোন ফ্রেমবন্দী ফিতে নয়
সামনে পেছনে টানা যাবে।
মহাবিশ্ব সমান্তরাল
দ্বিতীয় যাত্রায় কখনো এক থাকে না পথ
হেরাক্লিটাস জানে এক নদীর স্রোতে
দুবার স্নান অসম্ভব কেন

ভালাে না বাসলে এগুনাে কঠিন
বৃষ্টিকে ভালো না বাসলে কি করে পাবো রঙধনুর স্বাদ।
কোথাও থামার সুযােগ নেই
থামাতে মহান হানিবলের ঘটেছিল পতন
আর মুছে গিয়েছিল কার্থেজ

সেবাধর্ম

সেবাধর্ম উঠে গেছে মানুষ নিয়েছে নানা সংঘের শরণ
ক্ষুধা ও দৈত্যের দেশে সেবা পায় সুদখোরের প্রভুর চরণ
বােধের উদ্যোগ নেই সমিতি বিভূতি আর বিদেশী বাহানা
কত পথে অর্থ আসে দৃশ্যে শুধু বস্তিবাসী কুমিরের ছানা

নদীবর্তী মানুষের আতঙ্ক ভাঙন নয় সেবকের ঋণ
ক্ষুধা ও খাদ্যের দ্বন্দ্বে দাতাদের নীতিমালা কুয়াশা কঠিন
করোনার লেশমাত্র নেই কারো ধর্মে অধিক তারা সাধু
প্রান্তিকে রক্তের রান্না বাংলার ব্যাঞ্জন বড়ই সুস্বাদু।
খেয়েছে ইংরেজ আর্য পর্তুগীজ জলদস্যু ফরাসি বণিক
এখনো ভুলেনি তার সেই স্বাদ লেহনের ইচ্ছে অনধিক

কেউ আসে খনিজের খোঁজে কেউ ঘন সবুজ গ্যাসের
চোখের জলের খনি কারা কারা উপজীব্য উপন্যাসের
স্বর্গের সড়ক খোঁজে কোনাে কোনাে মুনিঋষী মূষিক দেবতা
মানব শক্তির চেয়ে বড় কিছু নেই বুঝে বলেন – নেবে তা

প্রযুক্তির কলি যুগে অগণিত ইতিহাস অলিখিত থাকে
সরল হৃদয় যাকে মিত্র ভাবে সেও খায় সবুজ বাংলাকে
মুগ্ধ কোন দৃশ্য নেই মাঝে মাঝে ঈশা খাঁর অশ্বের হ্রেষা
আর আর্তের সেবায় ঘরে ঘরে জেগে আছে মাদার তেরেসা

বাতাসের ঘর

কিভাবে যে দিন যায় রাত্রি চলে আসে,
আতঙ্ক কবলিত ভীত ক্যানভাসে।

সন্দেহ অধ্যুষিত চম্পক নগরে,
সর্বনাশ হানা দেয় বাতাসের ঘরে।

মৃত্যুদূত-হেডিসের পাতাল পুরীতে,
গিয়েছে প্রয়াতদের সংবাদ দিতে।

অদৃশ্য অণুজীব মেডুসা কি ফের
জন্ম নিয়ে ছিড়ে খাবে কণ্ঠ জোসেফের?

অভিধান ছিন্ন করে আশা আছে চাঁদে,
নির্মম মৃত্যু দেখে গ্রন্থের কাঁদে।

শব্যাত্রার গাড়ি নৈঃশব্দ কাঁধে,
বধ্যভূমিতে গেলে অশ্রু বাদ সাধে।

ভবিষ্যৎ-অবরুদ্ধ প্রার্থনাগার,
কে কোথায় অস্ত যাবে ইচ্ছা ব্রহ্মার ।

নিউইয়র্ক প্যারিস রোম পিকিং হ্যানয়,
স্বেচ্ছা নির্বাসনে কেউ কারো নয়।

বিজ্ঞান ব্যর্থ হলে কে কাকে বাঁচায়,
বাড়ির বিমান ভেঙে পায়ে হাঁটতে চায়।

আঙুলে আকাশ পেলে অন্য দাবি নেই,
করােনা উড়িয়ে নেবে কাল বােশােখেই।

পরিব্রাজক

বিশ্বয়কে পরাজিত করেছে যে মৃত্যু।
বাতাসে ভেসে আসা সাদা কাফনে মােড়ানাে মৃত্যু

আমাদের হৃদয় এখন তাদের সমাধিক্ষেত্র
তালি দেয়া পথে পদচিহ্ন খুঁজে কি লাভ
নিজেদেরই মেরুদণ্ড যাদের পথ
বাতাসও হাঁটতে ভয় পায় যেখানে
শেষ আশ্রয় ঘরবাড়ি দরজা জানলা
প্রাতঃ ভ্রমণ থেকে আর ফিরতে পারেনি
শ্বাসতন্ত্র বিকল করা সেই পথে
বিস্ময় কাঁধে হাঁটছে পৃথিবী
আর মানুষ কখনো প্রণয় দুর্গের চূড়ায়
কখনাে আত্মার সেতুর উপর দাঁড়িয়ে
দেখছে অপরাধের দেশ

তারা ভুলে গেছে কিভাবে বাতাস পিষে
বের করতে হয় অম্লজান
কী কৌশলে প্রতি সৌরবর্ষে
বদলে নিতে হয় চোখ দুটো
শুকিয়ে যাওয়া আকাঙ্ক্ষা পাঠাতে হয় নির্বাসনে
কৈশােরে কজ্জ্জ করা প্রজাপতি পরিশােধ
রতে হয় বধ্যভূমি
করতল থেকে ঝেড়ে ফেলতে হয় শঙ্খচিল

যে দেশ তার সন্তানদের দিয়েছিলাে স্বপ্নের প্রমােদ তরী
আজ তা অভিশপ্ত মেফিস্টোফেলিস
আরব্য জিনের গল্পের গোলকধাঁধা
ন্যায্যমূল্যের শিশির
ছেড়া রুটির আকাশ
আর জীবনের অনির্দিষ্ট বই

প্রতিটি পৃষ্ঠার তীরে একচক্ষু সাইক্লোপস
খুলে দিচ্ছে কর্মজীবী বৃক্ষের মাথা থেকে পাতার বিনুনি
সম্পূর্ণ নগ্ন কিশলয়।
তাদের শ্রোণীর শৈবালে আটকে আছে সময়

কোথাও কোনো ভবিষ্যৎ নেই-অতীত না
সব দীর্ঘ বর্তমান
সময় দুর্বার মুখ খুলে – প্রেমে ও সংকটে
বলে দেয় – প্রকৃত প্রেম মৃত্যু নয় আত্ম-অন্বেষণ
ঘুম মৃত্যুর স্বরূপ স্তব্ধ আগামী

মৃতদের মেঘ আত্মা ভেসে বেড়ায় আকাশে-আকাশে
তবু জীবনকে ভালােবাসলে চোখে চাঁদ ওঠে
জন্মের গন্ধ নাকে এসে লাগে
তখন স্বপ্ন দ্বিতীয় জীবন ফিরে পায়।
আমাদের ভেতরের শিশুরা ভিড় করে দাঁড়ায়
তাদের সমানে পোশাকের মূল্য কি
মৃত্যুই-বা কি অর্থ।

মানুষের এই বিপন্নতা দেখুক বৃক্ষ-নদী
পাখি ও পর্বত
অনুতাপ সবাইকে ক্ষমার যোগ্য করে দিন
এবং কান্না পবিত্র

প্রার্থনা পথে নীরবতা অনিবার্য উত্তর
ঐতিহাসিক অভিযানে আমার ধন কেহেতি হাওয়াকল।
প্রত্যেকের নিজস্ব ঈশ্বর কান পেতে
জন্ম-মৃত্যুর পদধ্বনি শুনে।
আমরা প্রত্যেকে আত্মার পরিব্রাজক।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *