সুতপা চক্রবর্তী-র কবিতাগুচ্ছ
ফসল
এতোটাও নিঃস্ব নই
আমাদের পরস্পরের সম্মুখ
অচেনা হয়ে গেলে বুঝতে পারি
হংসগ্রীবা আসলে অদৃশ্য
দড়ি
জলজ কুমীর, প্রাক্তন
নারীর মতো
যার গর্ভ একদিন ভরে উঠবে
অবাঞ্চিত ফসলে…সখ্যে…
হবিষ্য
একটা গোপন অঙ্গ কোথাও যেন
নিঃস্ব হয়ে পড়ছে
হবিষ্য, শ্রাদ্ধে,
লোলিতদাগ,খিদে!
মৃত শরীর ভোরের প্রার্থনার মতো আগ্রাসী
তার মুখে তুলে দিই সোহাগ অন্ন
মোক্ষম চালের।
তিলকাঞ্চন
মাঝরাত পেরিয়ে যায়।
অমাবস্যার আকাশ এখন আপাতসম্ভোগে।
জনতা জানে না তিলকাঞ্চন পরব
আর দ্বাদশীর মধ্যের ফারাকটুকুর মাত্রা!
তুৃমি থিতু হতে গিয়ে পিছলে পড়;
রাতের প্রহরে মায়া বাড়ে। অলক্ষ্যে হেসে ওঠেন সে
প্রপাতে দাঁড়ান তাঁরা…
রাষ্ট্র নামে…সামনে ধর্ম
মানুষেরা পিষে যেতে থাকে
নির্বৃত্ত
মরদেহ ভেসে চলেছে জলে
সন্নিকটে নগ্ন তান্ত্রিক
বিচারাধীন দেহকবজ; কলকল
ছন্দে হেঁটে চলছেন
একা
তাকানো বারণ!
আমাদের শরীরে বিষ,ধুতরো নয় অসুখ বাসা বেঁধে আছে।
প্রসাদ
বাঁকা প্রেতের মুখ যোনিগন্ধা
নারী; জানে সে কিভাবে আগলাতে হয় বৈধব্য।
প্রেমে তফাত হলে ধরা দেয় নরদেহ….আদেশ!
আমাদের মৃত্যুদণ্ড লাগু হোক।
স্নান সেরে পাটভাঙা কাপড় জড়িয়ে আমরা চলেছি মঞ্চে
চন্দন…..ধুপকাষ্ঠে…অগ্নি
পেছনে পুরোহিত কণ্ঠ
জলে অস্মিন সন্নিধিং কুরু!
অহৈতুকী
মাঠের বনজ গন্ধ আর টাটকা মাংসের
পুরুষেরা তখন হেঁটে যাচ্ছিলেন গান্ধর্বের দিকে।
একদল ঋষি অকূল অহৈতুকী
জলে চাঁদ ফেলে উত্তাপ
মাপছিলেন জীবনের।
এরকম একটি দৃশ্যের ভিতর থেকে
তুমি গার্হস্থ্যধর্মে আড়মোড়া ভেঙে উঠলে।
ভাঙা ভাত
এমন পরিক্রমা আগে কেউ দেখেনি
দংশনে নুনস্বাদ ফাঁপা খুলি
নিশ্চল পাথরের মতো মুখ
ফেরারি আসামী;জলরঙা ঘামে তাদের শরীর
পিচ্ছিল
স্বপ্নদোষে জারিত পুরুষ, নিজস্ব
পোষ মানে না
শূন্য উদরে বাক্স…মুখশুদ্ধি
কাঁধে পুত্র ; আড়াই হাত।
একটি তীব্র রেতঃপাত হে
অন্ধকারে; কেউ একটি থালা এগিয়ে দেয়
ভাঙা ভাতে লেগে থাকে অলীক সিঁড়ি…আশ্চর্য তক্ষকঘ্রাণ।
আভূমি ব্রহ্ম জুড়ে…উল্লাস…চৌচির
মেছোভাত ভর্তি অশ্রু
আত্মফুল
এক পা ওয়ালা শালিকটি রোজ আসে
তার দ্বিতীয় পায়ে এক অন্ধ বোঝা বেঁধে
ভারি বোঝাটির গায়ে দু তিনটে আঁচড়
মলিন মতো কাপড়ে জড়ানো অসুখ
দেখে মনে হল আত্মফুল
নিভন্ত দিনে একমুঠো অন্ন, শাক
চিতা সাজানোর গন্ধ পাচ্ছি
বোধহয় শালিকটিও…।
এবার
চোখাচোখি হতেই ঘুরে গেল
আমাদের আরোগ্যনিদান
★★★