মৃণালকান্তি-র গুচ্ছ কবিতা

মৃণাল কান্তি
জন্ম ২৩নভেম্বর ১৯৮৩
বাবা- স্বর্গীয় মনোরঞ্জন দত্ত।
মা- প্রতিমা দত্ত
পেশা- চাকরি (বেসরকারি)
বেলদা থানার কাজিচক গ্রামে জন্ম।লেখালিখির আঙিনায় তাঁর নিরন্তর বসবাস।মূলত কবি,তবে গদ্যের প্রতিও নিশ্ছদ্র টান।তাই বাইফোকালিজমের আজকের কবি-মৃণাল কান্তি

পারাবার

সখ্যতা গড়ে ওঠে যদি
বানে তাের কি আসে নদী
কি আর নিবি?
ছাই চাপা খিদে ঘুন বাঁশ সাঁকো স্বপ্ন পাতা ঘর!

সখ্যতা গড়ে উঠেছে নদী
তুই জানলি না বা যদি
তাের ফেরা পথে পথ গড়ে ওঠে
গড়ে ওঠে আবার ও আশ্রয়!

আত্মণ্বেষন

ছুঁইনি কোথাও স্পর্শ মেখেছি
হাভাতে দুই হাতে
চোয়ানাে চাঁদে ক্ষয় জোৎস্না
পূর্ণ গ্রহণ রাতে

অসুখের সুখে জলে গলে জল
পাপ তাপ মােহ মায়া
আলাের ভেতর আলাে পুড়ে গেলে
নিজেকেই খোঁজে ছায়া

জ্ঞান

কতটা ভিজলে মাটি, তুমি সবুজ হবে;
এই আশায় কান পেতে; ফুরিয়েছে বেলা…

ফেরার পথে সরলা বৌদির, ঘােমটার নিচে
নগ্ন নবান্ন লজ্জা চোখ ছুঁয়ে,
সুড়সুড়ি এঁকেছি সারারাত বিছানায়…

এ গ্রামে কোনাে ফসল হামার ঘরে ওঠে নি এযাবৎ

এ গ্রামে কোনাে সবুজ স্বপ্ন এ নত হয়নি,
নগ্ন নবান্ন চোখ…

বর্গীদের কলরবে , অকালে ঘুম ভেংগে গেলে
শুধু ভাবি, স্বপ্নে যদিও বা কবিতা দেখা দিল,
তবে কেন বর্ণমালা শেখাল না ঘুম…!

আজ মন খারাপ আজ বসন্ত

মনখারাপ এক গােপন সুখ কথা
বুঝলি তুই যখন চৈত্র শেষ
পলাশ ও তখন জীবাশ্ম অবশেষে
মােহচুল মায়াচোখে ভাসে

চুল আজ তাের দখিনা পরম্পরায়
মনখারাপ যে পথে গেছে চলে
মােহচুল মায়াচোখ ছুঁলে
বুঝলি তুই যখন বসন্ত অন্তরায়

গােপন সুখের ও গােপন কথা থাকে
ছুঁই নি কি ঠোঁট অন্য জীবাশ্ম ঠোঁটে!

স্বপনের ও ত ফুরােয় মায়াচোখ
ঘুমফুরােলে মােহচুল শুধু হাসে ৷

কর্ম

কোথাও পুরােপুরি দোষ বর্তায় কর্তার…

আমি গল্পে না থাকলে ও, কিছু দোষ চেয়ে নিয়ে
দোষী হই স-বিস্তারে

তারপর আমার গল্পটা শুরু…

যেহেতু কর্ম আমি! কাঠগােড়ায় দাঁড়িয়ে
বানানাে কথাই উচ্চারণ করে চলি!

যাহা বলিব সত্য বলিব সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না!

না গীতা ছুঁয়ে মিথ্যা বলি না কখনও!

অসুখ

সূর্য ডােবেনি!তবু অন্ধকার আশ্রমপুকুরে
ছায়ামাছ চোখের ভেতর স্বপ্ন রেখে
পেরিয়ে যাচ্ছি আলাে আলাে তরংগ কথা

কথা গুলাে তরংগ…
নাকি তরংগ আলাে বৈভবে
পেরিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার অসুখ

সূর্য ডুবে গেছে কখন
আশ্রমপুকুর ছায়ামাছ চোখে
চিকচিক স্বপ্ন আলাে পেরিয়ে যাচ্ছে
অন্ধকার অসুখ কথা…!

জীবাশ্ম ছায়াকথা

কতরাত পুড়ে গেছে,তন্দ্রাহীন!

একটাও স্বপ্ন দেখা হয়ে ওঠে নি বলে
কোনও রজনীগন্ধা ফোটে নি অভিমানে!

অথচ রাত কত নি:স্পাপ ছিল
ডােমেদের পাড়া থেকে হরতাল সহযােগে ,চাড়ালবউয়ের
মুখের হাসি
অন্য সমান্তরালে, একটা মৃত্যু অন্যরকম নব্বান্ন
ফিরিয়ে আনে শশ্মান উঠোনে!

এসব শ্মশানসুখ যদিও তােমার জানবার কথা নয়!

অসুখ

যতটা কলঙ্ক দিয়েছাে
তারও বেশি জোৎস্নায়
ভেজাতে চেয়েছিল সে
তুমি শুধু চোখের ভেতর
রাতকালাে দেখে ভেজালে শেকল!
বুঝলে না সুখও অসুখের পরিপূরক

যতটা ধোঁয়া দিয়েছাে তুমি
তারও বেশি বৃষ্টি তে
ভেজাতে চেয়ে ঝরেছিল সে
তুমি ছাতা মাথায় পেরিয়ে গেলে জীবন

অলীকমায়া

এ এক নির্মম মােহ
সারাদিন নিজেকে বিক্রি করে
জমানাে জীবন সঞ্চয় হিসেব রাখতে ভুল
দেবহাসি চোখের চোখ স্পর্শ মায়ায়!

মিথ্যা ও এক অলীক সত্য জেনে
প্রখর রােদুরে ও ঘামকে বাষ্প হতে দিই
বৃষ্টি সান্ত্বনায়….

ক্লান্ত তবু পিতৃচোখ এক নিপুন অভিনেতা
কোন ঘাম বৃষ্টি হয় না জেনে
রােদুর মােহে তবু
নিজেকে বিক্রি করে রােজ
দেবহাসিচোখের চোখ অলীক মায়ায়!

আবার এক মৃত্যু দিন ও বৈতরনী কড়ি

প্রখর নিরবতায় ঘুম ভেংগে গেলে দেখি
আশ্চর্য রকমে শুয়ে আছে সব
করুণা প্রেম মােহ অহংকার!
বছরের শেষ রােদ ঢেকে দিয়েছে মুখ পরম মােক্ষে,

প্রত্যেকটা আলাে নতুন- প্রত্যেক আধাঁরও!

দিনজীবনের প্রজাপতি আর যাপনের গিরগিটি রং রেখে, পৌঁছেছি সেই নদীর কাছে….

যাকে পেরােতে হবে বলে এতদিন সাঁতার শিখেছি!

★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *