ব ন শ্রী রা য় দা স-এর কবিতাগুচ্ছ

বনশ্রী মূলত কবি কিন্তু গদ্যের প্রতিও তাঁর ইদানিং অপার ঝোঁক।এই কবিতা চর্চাতেই কবি নিজের মুখোমুখি হন।সম্প্রতি বনশ্রীর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে।লিখেছেন নানান লিটল ম্যাগাজিনে। শুধু এপার বাংলায় নয় ওপার বাংলাতেও তাঁর কবির অনুরণন উচ্চারিত হয়।তাই বাইফোকালিজমের আজকের কবি বনশ্রী।

           ব ন শ্রী রা য় দা স

অঙ্গীকার 
               

হৃদয়ের স্রোত থেকে কয়েকটি ঢেউ তুলে 
দিলাম তোমার করতলে ,
পারলে রোধ কোরো সমূহ ক্ষয়রোগ।

মন-উপনগরীর বিজ্ঞাপনের মোড়ক খুলে 
খানিক উর্বর জমি ও লিখে দিলাম 
জীবনের শ্রেষ্ঠ বীজ রেখে দিও উত্তর’এর কাছে ।

ভূগোলের শ্রেষ্ঠ শরীরী মানচিত্রে রাখলাম 
স্নায়ু- লোকের জলোচ্ছ্বাস ।
পারলে পোষা পাখিটির স্বর চিনে এসো
জীবন পেরিয়ে মৃত্যুর নবজেন্মে।

           প্রেমের উপন্যাস

রাত্রির নীড়ে মরীচিকা বন্দি করে 
পারুলবন থেকে খুঁটে এনেছি নক্ষত্র ,
পৃথিবীর ছাদ আলোজলে ভাসিয়ে 
অন্তিম প্রেমের উপন্যাস লিখতে 
                          বসেছে পেঙ্গুইন ।

নৌকোর পাটাতনে যেটুকু জল অবশিষ্ট 
তা দিয়ে সহজ স্নান কেন 
একটা মৃত্যু সাঁতার ও অসম্ভব নয়।

মেঘের হিমকুচি মেখে টাটকা পলাশ 
তুমি এলে গায়ে মহাকালের গন্ধ ,
                           এলেই যখন অসময়ে 
যেটুকু আমাদের  মাটিমময় উঠোন 
চলো জ্যোৎস্না চাষ করি নদী-গর্ভে ।

     নীতিমালা

মনের মায়া হরিণ গলে জল হলে 
বসন্ত রঙিন ঘোমটায় কোকিল ডেকে ওঠে ,
সূর্য চোখ ধুয়ে ঝুলে থাকে কৃষ্ণচূড়া অন্তরে ,
বাউল রঙের হৃদয়ে আমার 
তুমি তন্নতন্ন করে খোঁজ বিস্ময়ের আদি অন্ত ।

সুক্ষ্ম কোণের চুলচেরা দূরত্ব রেখে 
তুমি নিজেকে জয়ী হিসেবে ঘোষণা করলে
বিপর্যয়ের কথা ভেবে ,
ভবিষ্যতের জন্য আমি তুলে রাখি
ছেলেবেলা-আয়না ও ঈশপের নীতিকথা ।

       জলের আলাপ 

দেহ মনে জমে থাকা আবর্জনা প্রত্ন
হালকা হয়ে যায়
এলে নদীর কাছাকাছি ।
ইচ্ছে মতো মোচড়গুলো টুকরো করে 
নদী বেঁধে ফেলে তার
                  হিরণ্ময় আঁচলে ।

ফেঁপে ওঠা পিপাসা, হেঁটে যাওয়া মার্গ
শাসন করে এলোমেলো ঢেউ – ঝুঁটি।

      
        থাবা

এখন সময় অঢেল, হাওয়া অনিকেত 
অনামী ফুলের নেশাতুর ঘ্রাণে 
নৃত্য করে আদিমতা ,
মৃত্যু মাপে রোজ অদৃশ্য থাবা ।

জামগাছের জুনি আলোর সংলাপে 
রাতবিরেত লিখি রং লিখি 
গান ধরি ঘুঘুর ফাঁদ – – –
নদী লিখে ছুঁড়ে ফেলি কালের গর্ভে ।

           আলোড়ন 
           

মাঝে মাঝে ভাবি এই বেশ নির্জনে ,
বিজনের সঙ্গে সুখ দুঃখ বলি ,
অন্তর থেকে ওথলানো মায়াবী হরিণ ।
অশ্রু আঁকি  নগরজোছনায় ,
আগুনে আত্মিক দহন উপুড় করি
আলোড়িত করি নিজেকেই ।

প্রশ্ন করি উত্তর ও আসে 
ঘৃণা করতে করতে ভালোবেসে ফেলি
                               নিজেকেই  । 

        ফিরে আসা

শিশির পড়ছি তখন আশ্বিনের পাতা খুলে
ঝাউবনের শিরায় নাক্ষত্রিক আলো।
ফুটে উঠল জন্মান্তরের কাদম্বরী হাওয়া ,
অগভীর জলের বিভীষিকা থেকে 
নিরূদ্দেশের গান হয়ে গেল 
একটি দহন কালের প্রজাপতি ।
ঠোঁটের সুর থেকে খসে পড়ছে 
হাজার স্বরলিপি ।
আমি সঞ্চারী থেকে ফিরে আসি অন্তরায়   ।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *