বাঙালীর মৎস্য পুরাণ ( তৃতীয় পর্ব)-ঃন্যাদোস মাছের গপ্পো –লিখছেন রাকেশ সিংহদেব

প্রকৃতি প্রেমের আরেক নাম।ভালোবাসার কোনও বাটখারা হয় না তা লেখকের সাথে না যাপন করলে বোঝা বড্ড দায়।মূলত রাকেশ একজন ছবিওয়ালা।আর তার চর্চার আধার সেই সব অবলা জীবজন্তু পশু পাখি।নিয়মিত লেখেন বিভিন্ন বানিজ্যিক পত্রিকায়।এই মুহূর্তে কাজ করছেন হাতি নিয়ে।বিভিন্ন “পরিবেশ বাঁচাও” সংস্থার সাথে জড়িয়ে ফেলেও তিনি নিরঙ্কুশ।একক।তিনি জানেন ভালোবাসতে ফেরৎ পেতে নয়।ইনি বাইফোকালিজমেরও অন্যতম সদস্য

বাঙালীর মৎস্য পুরাণ ( তৃতীয় পর্ব)

  • লেখা ও ছবিঃ রাকেশ সিংহদেব

 

ন্যাদোস

ন্যাদোস মাছের গপ্পো

নামে ম্যাদামারা হলেও এই ন্যাদোস বা ভুলসা মাছের স্বাদ অনেকেই পছন্দ করে। এদের রূপ তো মাশা আল্লাহ! তাইতো বাজারে গিয়ে নধরপানা ন্যাদোসের রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রবাদপ্রতিম চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু পকেটে থাকা পোস্টকার্ডে এঁকে ফেলেছিলেন সেই জলপরীর ছবি। দুপাশ থেকে চ্যাপ্টা পাতার মতো দেহাকৃতি। মুখ ছুঁচলো। পিঠের দিক ধনুকের মতো বাঁকানো কিন্তু পেটের দিক সোজা, লেজের দিকে দেহ সরু হয়ে গেছে। পিঠের পাখনা কাঁটাযুক্ত এবং লেজের পাখনা গোলাকার। সবুজাভ বাদামী দেহের উপর তিনটি কালচে মোটা ডোরা দাগ বা ছোপ থাকে। স্থানীয়ভাবে এই মাছটি ন্যাদোস, ভ্যাদা, নয়না, মেনি, ভুলসা নামেও পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Nandus nandus (Hamilton)। পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪ সে.মি. থেকে ৭ সে.মি. পর্যন্ত হতে পারে। এদের মুখের হাঁ নীচের দিকে তেরছা ভাবে অনেকটা গভীর হয়। তেলেপিয়া মাছের সাথে আকারগত সাদৃশ্য থাকলেও তেলেপিয়া মাছের মুখ ন্যাদোস মাছের মতো এত ছুঁচলো হয়না আর ন্যাদোসের মতো এত বড় মুখের হাঁ তেলেপিয়ার হয়না।
ন্যাদোস মাছ পুকুর, খাল-বিল, নদী-নালা সহ সকল ধরনের মিষ্টি জলের জলাশয়ে পাওয়া যায়। বর্ষাকালে এরা ধানের জমিতেও ঢুকে পড়ে। এরা শিকারি মাছ এবং স্বভাবতই একলা থাকতে পছন্দ করে। জলের উপরের স্তর এবং নীচের স্তর থেকে খাদ্য গ্রহণকারী এই মাছটি পোকামাকড়ের শূককীট, ছোট আকারের পোকামাকড় ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। শিকারি মাছ হলেও এরা অত্যন্ত ভীতু এবং লাজুক প্রকৃতির। এরা ভয় পেলে জলের তলায় নুড়ি বা আগাছার মাঝে নিশ্চল অবস্থায় লুকিয়ে থাকে। এই সময় মাছ শিকারিরা হাত দিয়েই এই মাছ ধরে থাকে এছাড়া ঠেলা জাল, মশারি, ধর্ম জাল, পাতলা কাপড় ইত্যাদি দিয়ে এই মাছ ধরা হয়।
আবাসস্থল নষ্ট, অবৈধ মাছ ধরার সরঞ্জাম ব্যবহার করে মৎস্য আহরণের ফলে বর্তমানে এ মাছের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। আমাদের রাজ্যের অধিকাংশ স্বাদুজলের নদ নদী, পুকুর নালা, খাল বিল নগরায়নের কবলে পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে বা বিভিন্ন ভাবে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে চেলা মাছের সংখ্যা দ্রুত কমে আসছে। মেদিনীপুর সংলগ্ন কংসাবতী, শীলাবতী, সুবর্ণরেখা সহ অন্যান্য নদ-নদীগুলো শিল্পবর্জ্য এবং কীটনাশকের মারাত্মক দূষণের শিকার হওয়ায় ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে এই মাছ। রুই, কাতলা, পাবদা, ভেটকির জোগান থাকলেও ধীরে ধীরে বাঙালির পাত থেকে হারিয়ে গিয়েছে চাঁদা, খলসে, বেলে, ন্যাদোস, ফলুই, কাঞ্চন পুঁটি, কইয়ের মতো জীব বৈচিত্র্যের দিক থেকেও তা গুরুত্বপূর্ণ অসংখ্য দেশি মাছ৷

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *