অঞ্জন ভট্টাচার্য-এর ছড়াগুচ্ছ

১৯৭১ সালে কলকাতায় জন্ম।পারিবারিক পরিবেশ ওর ভাবনা কে তরান্বিত ও লেখনী কে অনুপ্রাণিত করে। ওর প্রথম প্রকাশিত কবিতাগুচ্ছ ” পেন্ডুলাম ” পাঠক কে নিরাশ করেনি, বরং প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছিল। দ্বিতীয় কবিতাগুচ্ছ ” স্বপ্ন অনিকেত ” এবং তৃতীয় কবিতাগুচ্ছ ” শব্দ-চাষির প্রতিবেদন ” পাঠক হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ছোটদের জন্য ছড়ার বই ” আগডুম বাগডুম ” জয় করেছে ক্ষুদে পাঠকদের মন। লেখালেখির পাশাপাশি পালক ( শিশু কিশোর সাহিত্য পত্রিকা ) সম্পাদনার সাথে যুক্ত।

ভাবনা ছুঁয়ে

দূর আকাশে পুর্নিমা চাঁদ
মন আকাশে তুমি,
তোমায় ছোঁয়ার আবেশে যেন
চাঁদকে ছুঁলাম আমি।
নতুন ভোরের নরম আলো
চোখের পাতা ছুঁলে
তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে নিয়েই
হৃদয় ওঠে দুলে।
শেষ বিকেলে বনের পথে
বৃষ্টি নামে যখন,
মনের বনে তোমার ছোঁয়ায়
অঝোর ধারা তখন।
চাই না ছুঁতে পাহাড়চূড়া
চাই না ছুঁতে মেঘ,
ভাবনা ছুঁয়ে উচ্চতা পাই
উৎসাহ গতিবেগ।
সাধ জাগে না সাগর ছুঁতে
তুমি যে আছ তাই,
মন গভীরে তোমায় ছুঁলেই
ইচ্ছে নদী পাই।

ও শহরের বাবু

ও শহরের বাবু
এ মন করলি কেন কাবু?
তোর প্রেমেতেই
দিন রাত্তির খাচ্ছি হাবুডুবু।

তোর রোদচশমার কাঁচে
আমার প্রতিবিম্ব নাচে,
আমার গ্রাম্য আবেগ
যায় যে গলে অজানা কোন আঁচে।

দেখে রূপের চটকদারী
আমার আটপৌরে শাড়ি
জড়িয়ে যায় পায়ে,
আমি পথ ভুলে যাই বাড়ির।

তোর শহুরে কথার টানে
মাদল বাজে আমার প্রাণে,
মন পাখি যে
বেড়ায় উরে সুদূরে আসমানে।

মন শ্রাবণে ভিজে
আমি লাজেই মরি নিজে,
কিচ্ছুটি আর
ভাল্লাগেনা, এখন করি কি যে!

জানি ফুরোলে তোর কাজ
ফিরে যাবিই কাল বা আজ,
একলা ঘরে কাটবে
আমার সকাল দুপুর সাঁঝ।

ও শহরের বাবু
এমন করলি কেন কাবু?
নিজেকে যতই
বাঁধতে চাই, মন মানেনা তবু।

নয়তো শুধুই পুতুল

ঐ যে দেখ সারি ধরে
টুকটুকে লাল শাড়ি পড়ে
দাঁড়িয়ে আছে পুতুল বৌয়ের দল
ছোট বড় নানান মাপে,
ছোট্ট থেকেই ধাপে ধাপে
হয়েছে বড়, মাঝেতে নেই ছল।
অনেক কিছুই ভাবতে পারো
কিছুই আসে যায়না কারো
ঘোমটা মাথার যায়না তবু সরে,
ওরা চোখের কান্নাটাকে
বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখে,
ওদের মুখে শুধুই হাসি ঝরে।
ভাবোই যদি পুতুল কাঠের
নিছক দামে মিলবে হাটে
আনবে ঘরে, করবে খেলা বেশ
কদিন বাদে ফেলবে ছুঁড়ে
নয়তো সরে থাকবে দূরে
ফুরিয়ে গেলে ছেলেখেলার রেশ,
আবার কিনে আনবে নুতন
করবে খেলা ইচ্ছেমতন
তা হবেনা, বদলে গেছে দিন!
পুতুল ছিল কালকে যারা
বিশ্ব মাতায় আজ যে তারা
ওদের কাছেই অনাদিকালের ঋণ।

সামান্য চাওয়া

চাইনা বেশি তোমার কাছে প্রিয়
রোজ সকালে একটু দেখা দিও,
ঠিক দুপুরে জানালার কাচ খুলে
একটু নাহয় বসলে খোলাচুলে,
বিকেলবেলায় সময় পেলে হাতে
দাঁড়িও নাহয় ব্যালকনি বা ছাতে,
সন্ধ্যাবেলা লাইব্রেরী হলঘরে
দিলেই নাহয় দেখা সুযোগ করে,
গভীর রাতে স্বপ্নে দেখা দিও
চাইনা বেশি তোমার কাছে প্রিয়।

তফাত

তোমার আকাশছোঁয়া বাড়ি
আমার মাটির কাছে ঘর
তুমি স্বপ্নেতে দাও পাড়ি
আমি কুড়াই কুটো-খড়।

তোমার আকাশছোঁয়া বাড়ি
তোমার অলিন্দ কাঁচ ঘেরা
তাই রোদের সাথেও আড়ি
কাছে আসেনা মেঘেরা।

আমার মাটির কাছে ঘর
আর বুকের কাছে নদী
আমার অসীম চরাচর
জীবন বইছে নিরবধি।

তোমার ছাদবাগানে ফোটে
কত রংবাহারী ফুল
তোমার সুখ নেই যে মোটে
মনের ভিতর হুলুস্থুল।

আমি মেঠো পথের বাঁকে
দেখি ঘাসের ফুলে নীল
সাঁঝ নামলে ঝিঝির ডাকে
পাই আনন্দ অনাবিল।

তোমার আকাশছোঁয়া বাড়ি
আমার মাটির কাছে ঘর
তুমি আদতে আনাড়ি
আমি মুক্ত কবুতর।

প্রথম দেখা

চুপকথাদের বাঁধ ভাঙলো
সন্ধ্যা রাতে
বিনা চুমুকে জুড়ালো কফি
রেস্তোরাঁতে,
অগোছালো আবোলতাবোল
শব্দ রাশি
বিরক্তিকর! তবু প্রশ্রয়
চোখের হাসি।
কাটলো সময় ঝড়ের বেগে
ঘন্টাখানেক,
শুনলে বেশি বললে যে কম
তবুও অনেক
রইলো বাকি, সুযোগ হলে
অন্য সাঁঝে
চুপকথারা মেলবে পাখা
বুকের মাঝে।
শব্দরা আজ সাজুক কাজল
কুমকুমে
স্বপ্ন নামুক দুচোখ জুড়ে
রাতঘুমে।

কি যায় আসে

মেঘের সাথে ভাব করেছি
গড়বো বসত তার পাশে,
ঝোড়ো হাওয়ার হিংসে হলেও
কার তাতে কি যায় আসে!

করবো পীরিত যেমন খুশি
হাজার অযুত নিযুত বার,
মিলন আলোয় পুড়লে চোখ
রুখবে এমন সাধ্য কার!

মেঘ জঠরে বুনবো বীজ
দূরে দাঁড়িয়ে দেখবে রোদ,
অসহায়তায় কাঁপবে তার
সাজিয়ে রাখা মূল্যবোধ!

উঠবে বেড়ে জলদ ভ্রুণ
পূর্ণ মাসে পড়লে মেঘ,
ভাঙবে সুখের আকাশ বাড়ি
পড়বে ঝরে কান্না বেগ।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *