পূর্ব মেদিনীপুর এর ডায়েরি (প্রথম কিস্তি)–লিখছেন রাকেশ সিংহদেব

পূর্ব মেদিনীপুর এর ডায়েরি (প্রথম কিস্তি)

      লেখা ও ছবি- রাকেশ সিংহদেব

প্রকৃতি প্রেমের আরেক নাম।ভালোবাসার কোনও বাটখারা হয় না তা লেখকের সাথে না যাপন করলে বোঝা বড্ড দায়।মূলত রাকেশ একজন ছবিওয়ালা।আর তার চর্চার আধার সেই সব অবলা জীবজন্তু পশু পাখি।নিয়মিত লেখেন বিভিন্ন বানিজ্যিক পত্রিকায়।এই মুহূর্তে কাজ করছেন হাতি নিয়ে।বিভিন্ন “পরিবেশ বাঁচাও” সংস্থার সাথে জড়িয়ে ফেলেও তিনি নিরঙ্কুশ।একক।তিনি জানেন ভালোবাসতে ফেরৎ পেতে নয়।ইনি বাইফোকালিজমেরও অন্যতম সদস্য।

পেটুয়া ঘাট

ছবিঃ রাকেশ সিংহদেব

বিকেলে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি। গন্তব্য পেটুয়া ঘাট মৎস্যবন্দর। ভাঙ্গা পিচের রাস্তা দিয়ে চলেছি। পথের দুপাশে ঝাউ গাছের বাগিচা, চিঙড়ি মাছ চাষের পুকুর, নোনা জলের খাল আর মাঝে মাঝে ছড়ানো ছিটানো ঘরবাড়ি। এক জায়গায় দেখলাম নৌকা মেরামতের কাজ চলছে। এভাবে প্রায় 5 কিমি চলার পর বামদিকের মোড়ে ঘুরে সামনেই পেটুয়া ঘাট। এ শুধুমাত্র ঘাট নয় আস্ত এক জনপদ। পুলিশ স্টেশন, স্কুল, হাসপাতাল, বাজার কি নেই এই কমপ্লেক্সে!! খবর পেলাম এই বন্দরকে এশিয়ার সবচেয়ে বড় মৎস্যবন্দর হিসেবে প্রজেক্ট করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার নাকি 6000 কোটি টাকা দিবে!! ঘাটের সামনে দিয়ে রসুলপুর নদী গিয়ে পড়েছে বঙ্গপোসাগরে। কি টলমল উত্তাল রূপ তার! আমাকে নদী পেরিয়ে ওপারে যেতে হবে। টিকিট কেটে বাইক সহ চেপে পড়লাম নৌকায়। ঢেউয়ে দুলতে দুলতে পৌঁছে গেলাম পাড়ে।

ছবিঃ রাকেশ সিংহদেব


সেখান থেকে মোরাম রাস্তা ধরে এগিয়ে চললাম। দুপাশে অসাধারণ সব পাবলিক পিকনিক স্পট। কিছুদূরেই আছে বাবা সাহেবের কোঠগড়া, হিজলি শরীফ।মোহনার ধারে অসাধারণ মিউরালের কারুকাজ করা মসজিদ। ভক্তেরা তাদের মনস্কামনা নিয়ে আসছেন। ভেট দিচ্ছেন গোলাপ জল, চাদর, ধুপ আর ময়দা চিনি দিয়ে তৈরী এক বিশেষ মিস্টান্ন ” খুরমা “। কোলাহলহীন শান্ত পরিবেশ। মন চায় থেকে যেতে। এদিকে দিন ফুরিয়ে আসছে। আঁধার নামছে।
ফেরার পথে গ্রামের এক জায়গায় রাস্তার ধারে দেখলাম ঠাকুর গড়ার কাজ চলছে। কৌতূহলী হয়ে সেখানে গেলাম। দেখলাম জলের দেবী মা গঙ্গার মুর্তি তৈরী হচ্ছে। আসলে এখানকার প্রায় সব পরিবার সমুদ্রে মাছ ধরার পেশায় যুক্ত। তাই মরশুমের আগে মায়ের পূজা দিয়ে জলে নৌকা ভাসাবে। এবার তীরে এসে তরীর অপেক্ষা। মাঝি আমারে লইয়া চল……. দূর বহুদূর ……. বহুদূর

পূর্ব মেদিনীপুরের ডায়েরি ( দ্বিতীয় কিস্তি)

হিজলি শরীফ

ছবিঃ রাকেশ সিংহদেব

বাবা সাহেবের কোঠগড়া সত্যি খুবই সুন্দর একটা জায়গা। কিছুক্ষণ এখানে থাকলে মন প্রান জুড়ে এক স্বর্গীয় প্রশান্তি নেমে আসে। প্রতি বছর চৈএ মাসের প্রথম সপ্তাহে এখনে এক বিশাল মেলা ও ধর্মালোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বহু দুর দুরান্ত থেকে কাতারে কাতারে মানুষ এখানে আসেন, এসে থাকেন মাজারে। সেসময় প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের দেওয়া হয় মাংস ও ভাত মাখিয়ে তৈরী ( ঠিক বিরিয়ানি নয় টাইপ ) এক সুস্বাদু পরমান্ন। পাশের বালুকাবেলায় বসে এক জমাটি মেলা। এখানকার ফুলের ছবি আঁকা ফাইবারের প্লেট খুব সুন্দর ও সংগ্রহের উপযোগী। বালিয়াড়ি ধরে কয়েক পা গেলেই মোহনা।হালকা নীলাভ সাগর এখানে শান্ত।দূরে দেখা যায় ঝাউবনের রেখা।পায়ে পায়ে হেঁটে জলের বুকে চলে যাওয়া যায় অনেক দূর।এর এক পাশেই আছে এক টুকরো ম্যানগ্রোভের আবাদি ভূমি। এখন যদিও কয়েকটি গাছ বেঁচে আছে। নরম কাদা বালি মাটির উপর শ্বাসমূল উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শ্বাসমূলের ফাঁকে ফাঁকে কাঁকড়ার লুকোচুরি। এই ঈশ্বরীয় প্রশান্তির মাঝে সময়ের বালুকনা কখন যে মুঠো ফস্কে পালিয়ে যায় তা বোঝাই যায়না।

ছবিঃ রাকেশ সিংহদেব

★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *