কবি মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়-এর একটি অমূল্য সাক্ষাৎকার

কবি মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে কোনও পরিচিতিই আর যথেষ্ট নয়।তাঁর লেখাই তাঁর আসল পরিচিতি।বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে তাঁর ছড়া সকলের পাঠ্য।আজ তাই সেই কবিরই সাক্ষাৎকার রইল বাইফোকালিজমের পাতায় পাতায়।
মোহিনীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

জন্ম – ১৩৪৪ বঙ্গাব্দের ২৪শে কার্তিক । ইংরেজি ১o।১১। ১৯৩৭। পুরুলিয়ার শিয়ালডাঙ্গা গ্রামে ।
পিতা মাতা – প্রয়াত রাখহরি গঙ্গোপাধ্যায় ও প্রয়াতা খুদুবালা দেবী ।
লেখাপড়া – ম্যাট্রিক পাশ
পেশা – শিক্ষকতা থেকে অবসরপ্রাপ্ত ।
নেশা – কবিতা লেখা ও কেতকী সম্পাদনা
বিবাহ – ২৩ এপ্রিল ১৯৬৬
সহধর্মিণী – শ্রীমতি গীতা গঙ্গোপাধ্যায়
সন্তান – এক কন্যা রিন্টু আচার্য । তিন পুত্র – বিপ্লব , নীলোৎপল ও দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় ।
বাসস্থান – শিয়ালডাঙ্গা , পোস্ট- মণিহারা , জেলা – পুরুলিয়া ।
সাহিত্যচর্চা – মণিহারা স্কুলে ছাত্র থাকাকালীন লেখার সুত্রপাত । ১৯৫৫ সালে সাপ্তাহিক সংগঠন পত্রিকায় প্রথম কবিতা মুদ্রিত হয় । এরপর হিন্দুবানী , মৌচাক , শিশুসাথী পত্রিকায় লেখা প্রকাশ হতে থাকে । প্রবাসী, ভারতবর্ষ , বসুমতী, পরিচয়, সত্যযুগ, নন্দন, গনশক্তি, সন্দেশ, শুকতারা ,অনুস্টুপ, কিশোর ভারতী, রামধনু, কৃত্তিবাস , বর্তিকা , যুবমানস, অমৃতলোক থেকে শুরু করে দুপার বাঙলার এমনকি সুইডেনের উত্তর দেশ বা লন্ডনের বাংলা মাসিক সহ অজস্র পত্রপত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হয় ।
সম্পাদিত পত্রিকা – কেতকী , ৪৯ বছর ধরে চলছে ।
অন্যান্য সম্পাদনা – বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে পাক্ষিক মর্মবীণা , সাপ্তাহিক নীহার , সাপ্তাহিক মুগবেড়িয়া, শ্রীলেখা মাসিক পত্রিকা সম্পাদনার সাথে যুক্ত থেকেছেন ।
সম্পাদিত সংকলন – এক নদী দুটি মন (১৯৬৫ ) , আঞ্চলিক ভাষার কবিতা ( কবিতা পাক্ষিক , ১৯৯৯ )
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ – ১। নক্ষত্র পুরুষ ( ১৯৭৬ ),২। জ্যোৎস্নার নাবিক (১৯৮২ ) ৩। প্রতিবাদী সময়ের মুখ ( ১৯৮৩) ৪। অর্জুনের চোখ (১৯৮৩) ৫ ।অবাক পৃথিবী (১৯৮৪ ) ৬ । বুকের গোপনে অস্ত্রগুলি (১৯৮৪ ) ৭। বিষ পাথর (১৯৮৪) ৮ । রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে (১৯৮৫) ৯। মাড় ভাতের লড়াই (১৯৮৫ ) ১০ । শস্যের মলাট (১৯৮৬ ) ১১। আমি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বলছি (১৯৮৭ ) ১২ । কাচঘরে আগুন (১৯৮৯ ) ১৩ । রক্তের উজান ঠেলে ( ১৯৯০ ) ১৪ । চাঁদে এককাঠা জমি ( ১৯৯২ ) ১৫। সেই মানুষ ( ১৯৯৩ ) ১৬ । কাঞ্চন শস্যের বীক্ষা ( ১৯৯৮ ) ১৭ । সময় ও সূর্যের কাছে (২০০১) ১৮ । মাঠ খসড়া ( ১৯৯৯ ) ১৯। মেধাবী নীলিমা ( ২০০২ ) ২০ । সেই আগুনের বিষুবরেখায় (২০০৭ ) ২১ । বাঁক নিচ্ছে নদী ( ২০০৬ ) ২২। THE TYPHONIC HARPOON ( 2005 ) ২৩ । শ্রেষ্ঠ কবিতা ( ২০০৯ )
যেসব ডাইরেক্টরী তে কবির পরিচিতি আছে – ১। বাংলার লেখক অভিধান ( সম্পা – মৃত্যুঞ্জয় সেন ) ২। পুরুলিয়া পরিচিতি ( ছত্রাক মানভুম সংস্কৃতি ) ৩। রেফারেন্স এশিয়া ৪ । WHO S WHO INDO AMERICAN MAN AND WOMEN ACHIVEMENT.
পুরস্কার , সম্মান ও সম্বর্ধনা – ১। পাঞ্চজন্য পত্রিকা , কলকাতা ২ । মৈত্রী সাহিত্য , বর্ধমান ৩ । শিক্ষা সেমিনার , রামচন্দ্রপুর পুরুলিয়া ৪। বঙ্গীয় তরুণ লেখক সম্মেলন , শ্যামনগর ৫ । সাহিত্য সংস্কৃতি হাওড়া ৬ । নজরুল পুরস্কার ( শেখ প্রকাশনী ) ৭ । জসীমুদ্দিন পুরস্কার ৮। জীবনানন্দ স্মৃতি পুরস্কার , উত্তরবঙ্গ ৯ । রাইটার্স গিল্ড ও মুক্তগঙ্গা ১০। অসীমানন্দ পুরস্কার , পুরুলিয়া , ১১। মল্লিক একাডেমী পুরস্কার, মেদিনীপুর ১২। শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক ( কলকাতা থেকে গ্রাম ) ১৩। অমৃতলোকের যাত্রী , মেদিনীপুর ১৪। উপত্যকা পুরস্কার , মেদিনীপুর ১৫। অনিল চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার কলকাতা ১৬ ।শ্রেষ্ঠ কবি ( সীমায়ন পত্রিকা ) ১৭ । শ্রেষ্ঠ কবি (দূরের খেয়া পত্রিকা ) ১৮ । মল্লভুম সাহিত্য পরিষদ ১৯ । মুর্শিদাবাদ সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ ২০ । উমাশশী পুরষ্কার ( তারাশঙ্কর সাহিত্য পরিষদ ) ২১ । হরেন ঘটক সাহিত্য পুরষ্কার ( শিশু সাহিত্য সম্মেলন ) ২২। টুকলু রজত জয়ন্তী পুরস্কার , আদ্রা , পুরুলিয়া ২৩। বোধি সাহিত্য পুরস্কার পলাশী, নদীয়া ২৪। বাঁকুড়া সাহিত্য আকাদেমি , বাঁকুড়া ২৫। পুরুলিয়া হরিপদ সাহিত্য মন্দির ২৬। দুঃখভঞ্জন স্মৃতি পুরস্কার বাঁকুড়া ২৭। আলোর জোয়ার পত্রিকার তারকদাস স্মৃতি পুরস্কার ২৮। বিশ্ববাংলা কবিতা উৎসব (২০০৮ ) ২৯। সারাবংলা সাহিত্য সম্মেলন ( গোধূলি মন পত্রিকা ) ৩০। সেই সন্দীপন বৈদ্যবাটি হুগলী ৩১। সারাবাংলা লিটল ম্যাগ সম্মেলন (কোরাস কণ্ঠ ) বীরভুম ৩২। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন রানীগঞ্জ ৩৩। পশ্চিমবঙ্গ গনতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘ , বলরামপুর পুরুলিয়া ৩৪। ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ , আদ্রা ৩৫। ফিনিক্স পত্রিকা সম্বর্ধনা ৩৬ । তিতলি পত্রিকা সম্বর্ধনা ৩৭। রণভূমি পত্রিকা সম্বর্ধনা ৩৮। সাহিত্য সেতুর রোপ্য ফলক (রজত জয়ন্তী উৎসব ) ৩৯। পরত সাহিত্য পত্রিকা, কালনা, বর্ধমান ৪০। ছড়াক্কা পত্রিকার শিশু সাহিত্য সম্মেলন (২০০২ ) দুর্গাপুর ৪১। ঝড়ো হাওয়া পত্রিকা সম্বর্ধনা ৪২। কফি হাউস পত্রিকা সম্বর্ধনা ৪৩। পশ্চিমবঙ্গ বাঙলা আকাদেমি ( ১৯৯৮ ) কলকাতা ৪৪ মিলন সাহিত্য আকাদেমী , কলকাতা ৪৫। পদ্মা গঙ্গা পুরস্কার , কলকাতা ৪৬ । মানবাজার সাহিত্য পরিষদ পুরুলিয়া ৪৭। সোনালী রোদ ( নন্দনপুর , হুগলি ) ৪৮। বাইদ বহাল পত্রিকা , পুরুলিয়া ৪৯। শিক্ষা সমাচার ( বর্ধমান জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ ) ৫০ । বয়েজ ফ্রেন্ডস ক্লাব, পুরুলিয়া (২০০৫ ) ৫১। দাসপুর সাহিত্য সংসদ , মেদিনীপুর (২০০৫ ) ৫২। দুষ্টু পত্রিকা স্মারক সম্মান খড়গপুর (২০০৫ ) ৫৩। পূর্ব মেদিনীপুর সাহিত্য সম্মেলনী স্মারক সম্মান তমলুক ৫৪। চোখ পত্রিকা সম্মাননা কলকাতা ৫৫। শ্রেষ্ঠ লিটল ম্যাগ সম্পাদক, সিউড়ি , বীরভুম ৫৬। পুষ্প প্রভাত পত্রিকা সম্মাননা , মালদা ৫৭। ছোট নদী পত্রিকা , নাদনঘাট , বর্ধমান ৫৮ । পুরুলিয়া সমাচার সম্মাননা ৫৯ । সারাবাংলা প্রতিবাদী কবি সম্মেলন , মেদিনীপুর ৬০। মালিবুড়ো স্মৃতি সম্মান , মেদিনীপুর ৬১। সৃজন সম্মান , মেদিনীপুর ৬২। নয়ন পত্রিকা ৬৩। অনামী পত্রিকা, কোতুলপুর, বাঁকুড়া ৬৪। অভিযাত্রী পুরস্কার দুর্গাপুর ৬৫ । আনন্দহাট হাওড়া ৬৬। মনি কৌস্তভ , বাঁকুড়া ৬৭। আদ্রা যুক্তিবাদী সমিতি , পুরুলিয়া ৬৮। রাঢ় বাঙলা কবিতা উৎসব , আসানসোল ৬৯। জন্মভূমি দেশরত্ন সম্মান (২০০৬ ) ৭০। উতল হাওয়া সম্বর্ধনা , কলকাতা ৭১। প্রগতি পত্রিকা , মেচেদা, মেদিনীপুর ৭২ । জিরাফ ও অনিকেত পত্রিকা , পুরুলিয়া ৭৩। সুধা সাহিত্য সম্মান, চিরাগ সাহিত্য সংস্কৃতি , পান্ডুয়া ৭৪ । ঐকতান সম্মাননা (২০০৭ ) , বাঁকুড়া ৭৫। চিত্রসাথী শ্রেষ্ঠ কবি শিরোপা ৭৬। পান্ডুরাজা স্মৃতি পুরস্কার , সংজ্ঞা পত্রিকা (২০০৭ ) ৭৭। মহাদিগন্ত পুরস্কার (২০০৮ ) ৭৮। সিরাজুল হক স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার (২০০৮ ) , সাধনা পত্রিকা, পুরুলিয়া ৭৯। আদিত্য কুমার ঠাকুর স্মৃতি পুরস্কার ( চাঁদের হাসি পত্রিকা ) , কলকাতা ৮০। পুরুলিয়া জার্নালিস্ট ক্লাব পুরুলিয়া ৮১। নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি , বাঁকুড়া জেলা কমিটি ৮২। ছোটদের কথা শারদ সম্বর্ধনা (২০১৩), বর্ধমান
কবিকে নিয়ে বিশেষ সম্মাননা সংখ্যা –
১। অমৃতলোক ( ১৯৯৮৬ ) সম্পাদক – সমীরণ মজুমদার, মেদিনীপুর
২। সেই সন্দীপন ( ২০০৬ ) সম্পাদক- কাশীনাথ ঘোষ , হুগলি
৩। অক্সিজেন – (২০০৫ ) সম্পাদক- সুবর্ণ রায়, কলকাতা
৪। অনুভাব – (২০০৭ ) সম্পাদক- অশোক ঘোষ , পুরুলিয়া
৫। বর্ধমান জাগরণী ( ২০০৯ ) সম্পাদক- বিকাশ বিশ্বাস , বর্ধমান
যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন – সম্পাদক – কালিদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৮০-১৯৮৮)
সম্পাদক- মণিহারা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৮৫ -১৯৯২ ) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় । সম্পাদক- শিয়ালডাঙ্গা গ্রামীন গ্রন্থাগার । আহ্বায়ক – পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘ পুরুলিয়া, এবং সদস্য – ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ পুরুলিয়া ।
যেসব প্রতিনিধি স্থানীয় কবিতা সংকলনে কবিতা স্থান পেয়েছে –
১ বাংলা কবিতা সমুচ্চয় ( সাহিত্য আকাদেমী , দিল্লী ) সম্পাদনা – ডঃ অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
২। পঞ্চাশ বছরের বাংলা কবিতা সম্পাদনা- ডঃ শুদ্ধসত্ত্ব বসু
৩। তিন ভুবনের কবিতা সম্পাদনা – সাগর চক্রবর্তী
৪। আধুনিক প্রজন্মের কবিতা –সম্পাদনা ডঃ উত্তম দাশ
৫। নির্বাচিত কবিতা – কিরণ শঙ্কর সেনগুপ্ত
৬ । দুই শতকের শ্রেষ্ঠ কবিতা – সম্পাদনা- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
৭। শতাব্দীর বাংলা কবিতা পরিচয় – সম্পাদনা – মৃত্যুঞ্জয় সেন
৮। ভালো লাগা কবিতা – সম্পাদনা – সুভাষ মুখোপাধ্যায়
৯। দু বাংলার নির্বাচিত শ্রেষ্ঠ কবিতা – সম্পাদনা – অন্নদাশংকর রায়
১০। দু বাংলার ষাটের দশকের কবিতা ( ঢাকা , বাংলাদেশ ) সম্পাদনা – মাহমুদ কামাল
১১। ষাটের দশকের কবিতা – সম্পাদনা – কমল চক্রবর্তী
১২। ষাটের দশকের কবিতার দিনগুলি – সম্পাদনা – সুব্রত রুদ্র
১৩। আঞ্চলিক ভাষার কবিতা – সম্পাদনা ডঃ উত্তম দাশ
১৪। দু বাংলার দেড়শত বছরের প্রেমের কবিতা – সম্পাদনা – অজিত বাইরী
১৫। রেখো মা দাশেরে মনে – সম্পাদনা – সুব্রত রুদ্র
১৬। পোড়া মাটির এসরাজ – সম্পাদনা – কমলেশ সেন
১৭। হাজার কবির হাজার কবিতা – সম্পাদনা – শ্যামলকান্তি দাশ
১৮। বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ কবিতা – সম্পাদনা শ্যামলকান্তি দাশ ও প্রমোদ বসু
১৯। বাংলার ছড়া –নিখিল ভারত শিশু সাহিত্য সম্মেলন
২০। ছোটদের আবৃত্তির কবিতা- মডেল পাবলিশিং হাউস ।
রাজনীতি – ১৯৭২ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্ক্সবাদী ) র সদস্যপদ লাভ করেন । ১৯৭৪ সালে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির দ্বারা আক্রান্ত হন । তাঁর সর্বস্ব লুঠ হয় । গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার অপরাধে আক্রান্ত হওয়ার সময় বহু পাণ্ডুলিপি নষ্ট হয় । শিশু পুত্র কন্যাও ছাড় পায়নি । ১৯৮৫ সালে কবিকে খুনের চক্রান্ত করে ঘাতকবাহিনী । যদিও সেই চক্রান্ত ব্যর্থ হয়, পরিস্থিতি অনুকুল থাকায় ঘটনাচক্রে বেঁচে যান কবি । ১৯৯০ সালে ফের কবিকে খুনের চেষ্টা হয় এবং অপরাধী মনিহারা ক্যাম্পের পুলিশের হাতে ধরা পড়ে । ২০০৮ সালের ২৩শে আগস্ট কবি সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হন । বর্তমানে কবির শরীরের ডানদিক অচেতন । অল্পস্বল্প হাঁটাচলা করতে পারেন । কথা জড়িয়ে যায় । লিখতে পারেন না । তবু অক্লান্ত সাহিত্য সৈনিক এখনও কবিতা পড়েন সম্পাদনা করেন পত্রিকা । উৎসাহিত করেন তরুন কবিদের। কবি চিকিৎসাধীন ।

কবি মো হি নী মো হ ন গ ঙ্গো পা ধ্যা য়-এর সাক্ষাৎকারটি বাইফোকালিজমর পক্ষ থেকে নিয়েছেন তাঁরই সুপুত্র বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়

প্রথম লেখালিখির প্রতি আগ্রহ জন্মাল কবে থেকে?


লেখালেখির সূচনা ছোটবেলা থেকেই মূলত মায়ের উৎসাহে। কবিতা লিখেই প্রথমে শোনাতাম মাকে। মা আমার ছন্দ ঠিক করে দিতেন। কোন শব্দ বদলের দরকার হলে তাও বলে দিতেন। এভাবেই শুরু। বাড়িতে আসত অনেক পত্রপত্রিকা। জেলার এবং জেলার বাইরের। পড়তাম। কিন্তু পত্রিকায় লেখা পাঠাতে ইচ্ছে করত না। একদিন দুম করে সংগঠন পত্রিকায় লেখা পাঠিয়ে ফেললাম। মানভূমকেশরী বিপ্লবী অন্নদাপ্রসাদ চক্রবর্তী ( পরে স্বামী অসীমানন্দ সরস্বতী নামে সর্বাধিক পরিচিত হন ) তিনি ছিলেন নেতাজীর স্নেহধন্য । সংগঠন পত্রিকার সম্পাদক। লেখা ছাপা হয়ে গেল পত্রিকায় । সদ্য স্বাধীন হয়েছে ভারত।সেই প্রেক্ষিতেই লেখা একটি কবিতা

চাই না মোরা এমন স্বাধীনতা

চাই না ওরে চাই না মোরা এমন স্বাধীনতা
থাকতে যেথা পারি না তাই উচ্চে তুলে মাথা
উচিত কথা বলবে যবে
জেলের মাঝে পুরবে তবে
স্বীকার তখন করতে হবে ওদেরই বশ্যতা-
চাই না ওরে চাই না মোরা এমন স্বাধীনতা ।
খুব সম্ভবত এরকমই ছিল প্রথম প্রকাশিত কবিতার ভাবনা।
এরপর ধীরে ধীরে কবিতার জগতে পা রাখা।

আপনার ব্যক্তিজীবন সম্বন্ধে কিছু বলুন।


এ তো এক কথায় বলা মুশকিল।
আমার ব্যক্তিজীবন অত্যন্ত সংগ্রামমুখর। তীব্র প্রতিকূলতার মধ্যে কেটেছে কৈশোর আর যৌবনের দিনগুলি। বাবা ছিলেন আদর্শবাদী শিক্ষক। মানভূমের মানুষের উপর যখন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছিল হিন্দি। তখন বাংলার বদলে হিন্দি পড়াতে অস্বীকার করায় চার বছর বেতন বন্ধ হয়ে যায় বাবার। দিনের পর দিন শাসকের দমন পীড়ন নীতি। এই পরিস্থিতি আমাকে আকৃষ্ট করে কবিতার দিকে। মানভুমের ভাষা আন্দোলনই আমার ভেতর কবিতার বীজ বুনে দেয়। একদিকে বিদ্রোহ অন্যদিকে নিজস্ব ভাষার প্রতি ভূখন্ডের প্রতি ভালোবাসা। কবিতা লেখার জন্য বারবার নেমে এসেছে আক্রমণ । যেহেতু সামন্ততান্ত্রিক বিরুদ্ধে উচ্চারিত হয়েছে আমার কবিতা তাই বারবার প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির শিকার হতে হয়েছে আমাকে। হাত ভেঙেছে পা ভেঙেছে বারবার। মৃত্যুর মুখ থেলে ফিরে এসেছি তিনবার। আজ অসুস্থতা আমাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছে যে এখনও লড়াই করেই বেঁচে আছি
জীবন জীবন নয়কো জীবন ভাগ্যের ক্রীতদাস
আমি লিখে যাই নবজীবনের নির্মম ইতিহাস।
আমিই লিখেছিলাম কবিতায় একসময়। এই কবিতার মধ্যেই ধরা আছে আমার জীবন।

কোনও বিশেষ স্মৃতি যা আপনাকে আন্দোলিত করে আজও..

স্মৃতি এখম আর ততখানি সক্রিয় নেই তবু যতদূর মনে পড়ছে ১৯৬৪ -৬৫ সালে রামচন্দ্রপুরে নিখিলবঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র সহ এক ঝাঁক উজ্জ্বল নক্ষত্রের সাথে পরিচয় হয়েছিল। তখন সামান্যই লেখালেখি করি। কোন বইও হয়মি। আমার কবিতা নিয়ে প্রেমেন্দ্র মিত্র প্রশংসা করেছিলেন। তারাশঙ্করবাবু আশীর্বাদ করেছিলেন। তরে তাঁরা কয়েকটি চিঠিও লিখেছিলেন। বিয়েতে শুভেছাপত্র পাঠিয়েছিলেন। এঁদের আশীর্বাদ আমাকে আজও আন্দোলিত করে।

কিছু কিছু খারাপ লাগা যা আমাদের বহন করতে হয় আজীবন।এমন কিছু খারাপ লাগার কথা বলুন যা আপনি বহন করছেন..

খারাপ লাগার স্মৃতি সে তো প্রচুর। অনেক জ্বালা আছে। যা ভোলা যায় না। খুব কম বয়স থেকে কবিতা লিখতাম। যেহেতু অজ পাড়া গাঁয়ে থেকে সেই সময় লিখতাম। তাই অনেকে একে বাঁকা চোখে দেখত। এমনকি অনেক শিক্ষক মশাইও তাচ্ছিল্য করতেন বিদ্রুপ করতেন। ফলে স্কুলে যাওয়া আমার কাছে একসময় হয়ে উঠেছিল বিভীষিকা । এই দিনগুলো আজও বহন করি রক্তাক্ত হই।

একজন সফল ছড়াকার (বর্তমানে সরকারি পাঠ্য পুস্তকে আপনার ছড়া পড়ানো হয়)হিসেবে আপনার অনুভূতি..

ছড়া দিয়ে আমি শুরু করেছিলাম কিন্তু শেষ অবধি কবিতাই হয়ে ওঠে আমার আশ্রয়। আজ মনে হয় শুধু ছড়া লিখলেই ভালো হত। ছোটদের জন্য হাজার খানেক ছড়া আমি লিখেছি শিশুসাথী, রামধনু, মৌচাক, সন্দেশ, কিশোরভারতী, শুকতারা, ডানপিটেদের আসর, হোমশিখা, সহ অজস্র ছোটদের কাগজে তা গ্রন্থভূক্ত হল না বলে আফসোস আছে। শিশুমনের রঙ ও অনুভূতি আজও আমাকে আকৃষ্ট করে।

অদ্যবধি আপনি যা পেয়েছেন তার একটা তালিকা করা হলে (কম বেশির নিরীখে) কি ভাবে সাজাবেন??

পাওয়া বলতে সরকারি বেসরকারি বেশ কিছু পুরস্কার জুটেছে প্রায় আড়াইশোর মতো সেসব আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেক গুণিজনের সান্নিধ্য পেয়েছি। সারা বাংলার যেখানেই গেছি প্রচুর মানুষ আনন্দে জড়িয়ে ধরেছে বুকে। আজও যখন কোন তরুণ কবি মুগ্ধ হয়ে জানায় আমার কাব্যপাঠের অনুভূতি তখন মনে হয় এই টুকরো টুকরো ছবিগুলোই মানুষের প্রাপ্তি।

আপনার না পাওয়া কি কিছু আছে?? থাকলে সেটা কি??

প্রত্যেকেরই অপ্রাপ্তির তালিকা দীর্ঘ। আমারও। যা লিখতে চেয়েছিলাম সেই মনের মতো লেখাটি যেন অধরাই থেকে গেল। যে সমাজের স্বপ্ন দেখতে দেখতে বড় হলাম যৌবনের দিনগুলি ক্ষতবিক্ষত হল সেই স্বপ্ন তো স্বার্থক হল না। রূপ পেল না। তার মানে এই নয় যে জীবন অসফল। যারা আর্থিক স্বচ্ছলতার বদলে রোদ্দুরের স্বপ্ন দেখে অমলকান্তি হতে চায় তাদের স্বপ্ন এক প্রজন্মে সফল হওয়ার নয়।

সরকারের পক্ষ থেকে আপনার পাশে কি দাঁড়িয়েছে?? দাঁড়িয়ে থাকলে কি ভাবে? আর না থাকলেই বা কেমন ভাবে বা কি ভাবে চান?

তার দরকারই তো হয়নি। ফলে দাঁড়ালো কী দাঁড়ালো না এ নিয়ে আমার কিছু যায় আসে না।

আপনার পাঠক কারা?


আমার পাঠক সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ। একদিকে কবি অধ্যাপক শিক্ষিত বিশিষ্ট জনেরা যেমন আছেন আবার আছে প্রান্তিক শ্রমিক কৃষকেরা। যেহেতু আমি মানচিত্রগত ভাবে প্রান্তিক পরিসরের তাই মাটির কাছাকাছি মানুষের কথাই লিখতে চেয়েছি যা মানুষকে স্পর্শ করেছে।

ছড়াকেই কেন মূল মাধ্যম হিসেবে আপনি বেছে নিলেন?


ছড়া আমার শিল্পচর্চার মূল মাধ্যম নয়। আমি কবিতাই লিখেছি। যদিও ছড়াও আমার কাছে শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ এক ধারা।

আপনার নজরে প্রিয় ছড়াকার, কবি,সাহিত্যিক।


প্রিয় ছড়াকার সুকুমার রায়
প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
প্রিয় সাহিত্যিক মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায়

কার বা কার কার লেখা আপনাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করে?

রবীন্দ্রনাথ থেকে আরম্ভ করে জীবনানন্দ বিনয় মজুমদার তারাপদ রায় রাণা চট্টোপাধ্যায় তো আছেনই। নতুনদের মধ্যে প্রচুর ভালো কবিতা পাচ্ছি। এরা কম বেশি সকলেই আমাকে পড়তে বাধ্য করে।

ব্যক্তিগত জীবনে আপনি কতটা প্রভাব অনুধাবন করেন একজন ছড়াকার হিসেবে?


ছড়া লিখলেও যেহেতু ছড়ার কোন বই প্রকাশিত হয়নি বরং ২৫টি কবিতার বই হয়েছে। প্রবন্ধের বই ছড়ার বই আর হয়ে উঠল না। প্রভাব ঠিক নয়। প্রচুর ছড়া যেমন পড়েছি। লিখেওছি সেভাবে। নিজস্ব স্টাইলে প্রকরণে।

আপনার পাঠকদেরকে কি কিছু বলার আছে?তবে বলতে পারেন।


পাঠকদের বার্তা দেওয়ার কিছু নেই। তাঁদের মেধা ও নির্বাচনের উপর সম্পূর্ণ আস্থা আছে আমার।

আপনার জীবন নিয়ে একটা সম্যক ধারনা দিন আপনার পাঠকদের সম্পর্কে

আমার জীবন নিয়ে পাঠক কী করবেন ? তাঁরা কবিতা যদি কিছু লিখে থাকি সেখানেই খুঁজুক আমাকে।

সুকুমার রায়ের ছড়া নিয়ে আপনার দৃষ্টি ভঙ্গী জানতে ইচ্ছুক। বিশেষত তাঁর ননসেন্স রাইম কনসেপসন বিষয়ে।

ননসেন্স রাইম একটা নতুন ধারা বাংলা ছড়ায়। তার আগেও অনেক সমৃদ্ধ ছড়া আমরা পড়েছি রবীন্দ্রনাথের যোগীন্দ্রনাথ সরকারের। তা উজ্জ্বল অম্লান। তবু ননসেন্স রাইম একটা বাঁক একটা নতুন ঢেউ। হাসি মজার পাশাপাশি একটা ধাক্কা যা আমাদের সচকিত করে।

বর্তমান সময়ে কোন কবি ছড়াকার সাহিত্যিক আপনাকে আলোড়িত করেন?


এখন ভবানী ভালো লিখছে। ভবানী তো ছড়ার জগতে একটা মাইলস্টোন । শ্যামলকান্তির ছড়া শিশুদের স্বপ্ন জগতের কথা তুলে আনে। দীপ ভালো লিখছে। অপূর্ব দত্ত ভালো লিখত। হাননান আহসান আনসার উল হক এরকম আরও অনেক নাম এই মুহূর্তে মনে আসছে না। এরা সবাই আমাকে আলোড়িত করে।

নতুন যাঁরা লিখতে আসবেন বা এসেছেন তাঁদের জন্য আপনার কিছু পরামর্শ?? (বিশেষত ছড়াকারদের প্রতি)

মন দিয়ে লিখুন। সৎ ভাবে লিখুন। কোথাও আপস করবেন না। নির্ভিক ভাবে লিখে চলুন হৃদয়ের শব্দ।

লেখার কথা তেমন ভাবে ভাবলেন না কেন?? (শিশু কিশোরদের ওপর)


ভেবেছি তো। হাজার খানেকের উপর ছড়া লিখেছি। তার কিছু হয়তো নষ্ট হয়ে গেছে।কিছু আছে। কিছু ছড়া সংকলন ভুক্ত হয়েছে। অনেকে পড়ে আবৃত্তি করে। আমার ভাবনা আমি ভেবেছি বাকি দায়িত্ব প্রকাশকের।

আপনার নজরে আপনার সবচেয়ে প্রিয় লেখা..
( তার ভেতরের কোনও স্মরণীয় ঘটনা?)

আমার সব লেখাই আমার প্রিয়। তবু মানভূমের লোকভাষায় লেখাগুলি আমার অধিক স্নেহের। এখানে আমি ব্যক্তিমানুষের চেয়েও হয়ে উঠেছি সামষ্টিক মানুষের প্রতিনিধি। এক আমির ভেতর অনন্ত আমির ছায়া। আত্মবৃত্ত থেকে বাইরে বেরিয়ে বিশ্বলোকের সাড়া অনুভব করেছি এইসব কবিতায়। ভালো থেকো গৌতম। তুমি প্রশ্ন করেছিলে কবিতা লিখে পাওয়া বা না পাওয়া নিয়ে। কবিতা লিখে একক মানুষের হৃদয় হয়তো এভাবে সমষ্টির বাসভূমি হয়ে উঠে। এক আমি হয়ে যায় অনন্ত আমি।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *