রুমির কবিতা
অনুবাদ – তৌফিক হোসেন
সংক্ষিপ্ত কবি পরিচিতি : মৌলানা জালালউদ্দিন রুমি (1207-1273) ছিলেন শ্রেষ্ঠ ও কিংবদন্তিসম অতীন্দ্রিয়বাদী সুফি কবি। জন্ম আফগানিস্তানের বল্খে।স্থিতু হন এশিয়া মাইনরের কোনিয়ার তুরস্কে।তিনি লিখেছিলেন পার্সি ভাষায়।’মসনবি’ তাঁর শ্রেষ্ঠ তথা বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ।কবি ছাড়াও তিনি একজন সুফি ধর্মগুরু ছিলেন।
[ কোলম্যান বার্কসের ইংরেজি অনুদিত Bird Song কবিতার বই থেকে কবিতাগুলি অনুবাদ করা হয়েছে।]
তৌফিক হোসেন
মূলতঃ কবি।লিটল ম্যাগাজিনেই তাঁর যাপনভূমি।নিজেও “বিভাসা” নামের একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে থাকেন।তৌফিকের বরাবরের টান অনুবাদ সাহিত্যে।তাই তিনি বারবার ছুটে যান সেদিকে।এবার তৌফিক ডুব দিয়েছেন কবি রুমিতে।
একচল্লিশ
বন্ধুর কথা মতো যে চলে
তার কখনোই বন্ধুর প্রয়োজন হবে না।
এই দেউলিয়াপনাই বিশুদ্ধ প্রাপ্তি।
রাত্রিকে না এড়ালে
চন্দ্র উজ্জলই থাকে।
একটি গোলাপের বিরলতম সুবাস
তার কাঁটার মধ্যেই বাস করে।
বিয়াল্লিশ
পাহাড় বেয়ে নেমে আসছে এক হালকা বাতাস,
রাতের পাখির গান।
আমার প্রেমিকের দরজায়
এক নতুন লেখা পড়ি
সেই একই বার্তা
এখন উচ্চারিত হচ্ছে
ছাদের ওপর।
তেতাল্লিশ
তোমার মুখমণ্ডলের স্মৃতি
আমাকে তোমার মুখ দর্শনে নিবৃত করে।
বজ্র ঢেকে দেয় তোমার ললাট।
মনে করায় আমাদের চুম্বনের।
এখন তোমাকে চুম্বন করতে পারব না।
এত অপরূপ,এই মধুরতা
আমাদের দূরে দূরে রাখবে।
চুয়াল্লিশ
তৃণভূমি ভরে যায় তোমার সুবাসে।
লাল বনফুলে ফুটে ওঠে তোমার মুখ,
কিন্তু যখন ঐ অনুস্মারকগুলি চলে যায়,
আমার নিজের মুখ ফোটে
আর আমি যাই বলি
তার মধ্যে তোমার কণ্ঠ শুনতে পাই।
পঁয়তাল্লিশ
আর কতদিন বাজাবে আমাকে
মৃদঙ্গের মতো
কতদিন তোমার জন্য দীর্ঘশ্বাস পড়বে আমার
বেহালার মতো।
তুমি বলো – এসো।তোমাকে ধরি কাছে
আর বাজাই বাঁশির মতো।
তবে যে বাঁশি রাখো তুমি মুখে
তারপর বাজাতে অবহেলা করো
তার চেয়ে বেশি আমি অনুভব করি।
ছেচল্লিশ
আমি জানি
যে ভোরে আমাদের মিলন হবে আবার
তা কখনোই আসবে না।
তাই আমি এই প্রেম
ত্যাগ করি অল্পে অল্পে
তবে আমি যখন এই কথা বলি
আমার ভেতর একটা-কিছু হাসতে থাকে,
কেউ মাথা নেড়ে নেড়ে মুখ টিপে-টিপে হাসে
আস্তে-আস্তে, কষ্টে-কষ্টে।
সাতচল্লিশ
এক পাখির প্রতিনিধি দল
সলোমনের কাছে এসে অনুযোগ করল,
কেন তুমি কখনো নাইটিংগলের নিন্দা করো না?
নাইটিংগল জবাব দিল সলোমনের বদলে
‘কারণ আমার পথ ভিন্ন।
চৈত্র থেকে জৈষ্ঠ রাখি চিহ্ন।
অন্যরা বাকি নয় মাস,
যখন তোমরা কথাই বলো,
আমি থাকি চুপচাপ।’
আটচল্লিশ
তুমি ভেবেছিলে মিলন এক পথ
যে পথ তুমি ধরতে পারো।
কিন্তু আত্মার জগত
বর্জিত ও প্রায় বিস্মৃত বস্তুর পথ ধরে চলে।
তোমার সত্যিকারের পথপ্রদর্শক
স্বচ্ছ ধারা থেকে পান করে।
ঊনপঞ্চাশ
এই মাটির শরীর
এক স্পষ্ট আগমন।
দেবদূতদের ইচ্ছে হয়
আমার মতো ঘুরে বেড়াতে।
পবিত্রতা? দেবশিশুরা
আমার সরলতা পাবার সাধ করে।
সাহস? দানব সৈন্যরা
আমার উন্নত হাত দেখে পালায়।
পঞ্চাশ
গ্রাম রাঙা হয় বসন্তে
আরো মনোহর হয় জীবনসবুজ গাছেরা,
তবুও ভেতরে থাকো।
দরজা লাগিয়ে দাও।
এসো আমার কাছে আদুড় হয়ে।
এখান কেউ নেই।
★★★