সংসার-আশ্রম ( এক)
নি মা ই ব ন্দো পা ধ্যা য়
আজকের দিনে সংসারে ভালবাসার বড় অভাব। সমাজে স্থিরতার আকাল। সবাই এখন ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। সকলকে নিয়ে স্নেহময় স্পর্শে,
ভালবাসায় জড়িয়ে সংসার করা কাকে বলে
আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন,
জগজ্জননী মা সারদা।
আজ আমরা এই পর্বে তাঁর পূণ্যময় জীবনের কথা শুনব। শুনব তাঁর বাণী ও উপদেশ। যা সমগ্র জগতবাসীর কাছে আজ গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেছে।
আসলে মায়ের মুখের বাণীই তাঁর জীবনের মূল সুর। তিনি সর্বভূতের কল্যানে নিজেকে উৎসর্গ করে গেছেন।সংসারে আমাদের মত গৃহবাসীর নিশ্চিন্তে থাকার পথটি ও বলে গেছেন। সমগ্র জগতবাসীকে জানিয়েছেন সেই মনভালো – করা উপদেশ ” যদি শান্তি চাও মা, কারো দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগতকে আপনার করে নিতে শেখ। কেউ পর নয় মা, জগত তোমার।”
প্রথম কথা ক’টি আমাদের জন্যে।শেষ কথা ক’টি জগতের জন্যে। একবারে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিলেন।
সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য – এই উপদেশ। উপদেশ
দিচ্ছেন কে? একজন লেখাপড়া না জানা, শিক্ষার
আলো না দেখা, গ্রাম্য চিন্তা- ভাবনায় বড় হয়ে ওঠা, একজন বাঙালী নারী, সেই সময়, যে সময় সমাজে পুরুষজাতি কতৃত্ব করে এসেছে পূর্ণমাত্রায়।
তিনি কত বুদ্ধিমতী, কত ধীশক্তি সম্পন্না, কত মুক্তমনা, উদার এবং বলিষ্ঠ চরিত্রের অধিকারিণী
ছিলেন -এর থেকেই বোঝা যায়।তাঁর জীবনে কোনো অহংকার ছিলো না। কোনো দৈবী প্রভাবে তিনি সম্পূর্ণভাবে ” অহং ” মুক্ত ছিলেন। তঁার সম্পর্কে সেই সময়কালেরবিখ্যাত নাট্যকার, শ্রী রামকৃষ্ণ-ভক্ত শ্রী গিরিশচন্দ্র ঘোষ বলেছেন, “তোমরা ভাবতে পারো, তোমাদের সামনে পল্লীবালার বেশে যিনি বসে আছেন,তোমাদের খেতে দিচ্ছেন, তোমাদের এঁটো পাতা তুলে পরিস্কার করছেন, ভক্তদের-এমনকিবিড়াল,পোষা পাখি, গরু বাছুরের মত অবলা প্রাণীদের ও দেখাশোনা করছেন – তিনি আর কেউ নন, এ জগত সংসারের জননী, জগজ্জননী মা, মহামায়া, মহাশক্তি।
“হাজার হাজার লোক নিত্য তাঁর পায়ে প্রনতি
জানাচ্ছে, লুটিয়ে পড়ছে, — মানবী হলে সেই নারী,
অহংকারে ফেঁপে ফুলে উঠতেন। কিন্তু মা দেবী, নাহলে এত মান হজম করা কী মানুষের কম্ম? তিনিই বৈকুন্ঠের লক্ষ্মী।”
ঠাকুরের আর এক অত্যন্ত প্রিয় সন্তান শ্রীমৎ
স্বামী প্রেমানন্দ মহারাজ বলে গেছেনঃ “তোমরা সীতা সাবিত্রী বিষ্ণুপ্রিয়া রাধারানী এই সব মহীয়সী নারী, এঁদের কথা শুনেছ – মা সারদা
এঁদের চেয়েও অনেক উঁচুতে বসে আছেন। তঁার
ঐশ্বর্যের লেশটুকু পর্যন্ত নেই। তিনি নিরঅহংকারিত্বে এবং কর্তব্যের সুচারু সম্পাদনে
প্রমান করে গেছেন – তিনিই জগন্মাতা জগদ্ধাত্রী।
গোটা জগত তাঁর অধীন। জগতের কীটটি পর্যন্ত
তঁার আপন সন্তান। ”
তিনি আমাদের বলে গেছেন ‘সকলকে আপন
করে নিতে শেখ।কেউ পর নয়। যদি সকলকে
আপন করে নিতে পারো তাহলে দেখবে সমগ্র জগতই তোমার’। কিন্তু আমরা বাস্তব জীবনে কী করি? শুধু “আমি আমি আর আমার আমার “।
না, একটু অপরের কথা ভাবো না? একটু অপরের জন্য এগিয়ে এসো না! দেখবে কী শান্তি!
উদার হবে মন, শুদ্ধ হবে প্রান, মুগ্ধ হবে তুমি নিজে- নিজের কাছে। ঘুরে- ফিরে সেই ঠাকুরের কথা। ‘ জীবে প্রেম।মানুষের সেবা’। শুধু সেবা।
মন ভারী পাজি।কখনও এক বস্তুতে লগ্ন বা মগ্ন হয়ে থাকে না। এই এখানে – ওই ওখানে। সেইজন্য মা বলেছেনঃ নিয়মিত জপ ধ্যান করবে।তাতে মনে ভক্তি বাড়ে। কোনো দেবস্থানে যাতায়ত করবে।চোখের সামনে দেবদেবীর মূর্তি দেখলে,
সান্নিধ্যে এলে, মনে ঈশ্বরের উদ্দীপন ঘটে। — এগুলি হলো -যেন নৌকার হাল “।
মা সারদার মত একটি উদার হৃদয়, একটি কল্যান-কামী মন আজকের দিনে বড় প্রয়োজন।আজআমরা এই মহামারী সংক্রান্ত পরিস্থিতিতে কারোর বিপদে পাশে দাঁড়াতে ভয় পাচ্ছি। একটা অবিশ্বাস। কিছু হয়নি, শুধু গুজবের ওপর ভিত্তি
করে কাউকে এড়িয়ে যাচ্ছি।প্রয়োজনে সাহায্যের
হাতটাও এগিয়ে দিচ্ছিনা। এমন কেন হবে? কেন আমরা এমন একটা গোটানো জীবন রচনা করবো? বিধিনিষেধ মেনে কেন প্রিয়জনের পাশে দাঁড়াবো না? সংকটের মূহুর্তেই তো ‘তোমাকে চাই’।
চলবে…
★ আজ থেকে “সহজ মানুষ – সহজপাঠ” ধারাবাহিক ভাবে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে।★