চন্দ্রকোনা হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাসঃ পর্ব-১২

    পর্ব-১২

                                                                 ছবিঃ গৌতম মাহাতো

চন্দ্রকোনা হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে
                লিখছেনঃ–    দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী

             মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা

                                  পর্ব-১২

 ক্ষীরপাই শহরে ফকির ও সন্ন্যাসী                                   বিদ্রোহ:

 ফকির ও সন্ন্যাসী বিদ্রোহের কারণ তাঁদের ধর্মের উপর ইংরেজদের অত্যাচার । ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য প্রথম যুদ্ধ ঘােষণা। 1773 খৃষ্টাব্দে এই স্থানে 6000 জন সন্ন্যাসী প্রবেশ করে। ক্ষীরপাই শহরের রেসিডেন্টের কাছ থেকে এ খবর জানার পরে গভর্নরের আদেশে 5 কোম্পানি বিগ্রেড কোলকাতা থেকে পাঠানাে হয়েছিল। বর্ধমান থেকে অনেক ফোর্স পাঠানাে হয়েছিল। 49জন সন্ন্যাসী কটকের দিকে এগিয়ে যায়। 30 জন সন্ন্যাসী বাঁকুড়ার রাইপুর থেকে সকালেই এই স্থানে জমায়েত হয়েছিল। শিলাবতী নদীর তীরের এই ক্ষীরপাই শহর ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। রাধানগর গ্রামের দালাল পুকুরের পাড়ে যে দুটি আর্মেনিয়ান লিপি ছিল তার থেকে অনুবাদ করেন মন্দির গবেষক ডেভিড ম্যাক্কাচন সাহেব। তার aa aa, “This is tomb of Alaveli, son of Amir Khaian, died in 1716” এই জায়গাতেই রেশমকুঠীগুলি ফরাসীদের অধীনে ছিল ।তার পরে কুঠীগুলি ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দখলে। মুসলমান ও কৈবর্তদের দিয়ে তুঁত চাষ করানাে হত।

      বাংলার মন্দিরে টেরাকোটা আর্ট:

                                                                ছবিঃ গৌতম মাহাতো

জঙ্গল মহলের মল্লভূমের রাজাদের নাম কীর্তি চিরস্মরণীয় কারণ তাঁরা সৃষ্টি করেছেন উৎকৃষ্ট শ্রেণীর মন্দির স্থাপত্য জোড়বাংলা, টেরাকোটা অলংকরণ। আজ সারা বিশ্ব থেকে পর্যটক এই রত্ন মন্দিরগুলি আর রাসমঞ্চ,টেরাকোটা মােটিফ, সুক্ষ নকশা দেখার জন্য আসে। মল্লরাজগণ নব বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নেন। আর নিজেদের অহিংসা থেকে বিরত করেন।কিন্তু তার আগে নিষ্ঠুর দস্যুবৃত্তিতে অভ্যস্ত ছিলেন। এই ব্যাপারে একটি ঘটনা আছে। তখনকার দিনে বৃন্দাবন ধাম যাবার রাস্তা ছিল বিষ্ণুপুরের পাশ দিয়ে। শ্রী জীব গােস্বামীর পাঠানাে অনেক অমূল্য বৈষ্ণব পুঁথি গাড়িতে করে বাংলাদেশে আসছিল। বীরহাম্বির বা বীর সিংহ সেইগুলি অমূল্য ধনরাশি ভেবে লুট বা অপহরণ করেন। পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে বৈষ্ণবাচার্য শ্রী নিবাসের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ও বৈষ্ণবমন্ত্রে দীক্ষাগ্রহণ করেণ। নিজেদের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এই ঐতিহাসিক স্মারক মন্দিরগুলি তৈরী করান। যেগুলি হল উৎকৃষ্টশ্রেণীর মন্দির সৌধ যা বাংলার নবপর্যায়ের(renaissance বলা যায়) মন্দির স্থাপত্যের যুগান্তকারী সৃষ্টি। যেসব নির্মান শিল্পী এই অনবদ্য মন্দির স্থাপত্য তৈরি করেছিলেন তাঁদের নাম আমরা জানিনা কিন্তু তাঁদের সৃষ্টি সৃজনশীলতা, স্থাপত্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মন্দির চর্চা এই স্থাপত্য নিয়ে বিশেষ আলােকপাত ও গবেষণা করেছেন যে সব পন্ডিতগণ তাঁদের মধ্যে David MacCutchion.MA. Cantab যিনি বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন আর গ্রামবাংলার মন্দির টেরাকোটাগুলি কে ভালবেসে ফেলেন। পরে তিনি Jadavpur University তে রিডার (Comparative Literature) ছিলেন। সেই জন্য বলতে হয়- he left behind a huge repository of Essays, Letters, Photographs and other documents that prove to be a treasure chest for the Connoisseurs of Indian art. 
                   আমার ছেলেবেলার কথা মনে আছে।MacCutchion সাহেব এই চন্দ্রকোণা শহরে বহু বার এসেছেন, আমার বাবার(ঐতিহাসিক শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী) সাথে গ্রাম গঞ্জের মন্দিরগুলিতে ছবি তুলতেন পুরাতত্ত্ব নিয়ে আলােচনা করতেন। মহামান্য আঞ্চলিক মন্দির গবেষক ও ঐতিহাসিক পঞ্চানন রায় ও সনামধন্য গবেষক তারাপদ সাঁতরা মহাশয় MacCutchion সাহেবের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আমার ও বাবার শিক্ষক শ্রী রাধারমণ সিংহ মহাশয়ের সংঙ্গেও। আলােচনা করতেন। এই বিষয়ে ওনার একটি comments ছিল আমার বাবার লেখা আঞ্চলিক ইতিহাস ভগ্ন দেউলের ইতিবৃত্ত faa”I have glanced through Sri Kanai Lal Dirghangi ‘s booklet Bhagna Deuler Itibritya with great interest. He is to be commented for undertaking this useful compilation of local history and lore,………………local history and legends of Bengal” আর কলকাতা সংস্কৃত কলেজ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্র ড: প্রণব রায় ও পরে প্রধান অধ্যাপক ছিলেন সংস্কৃত কলেজে যিনি সারা জীবন মন্দির স্থাপত্য নিয়ে গবেষণারত। বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য নিয়ে বইটি আমাকে উপাদান দিয়েছে। গবেষকদের কাছে এই বইটি বেদতুল্য।

                                              ক্রমশ…..

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *