চন্দ্রকোনার হারিয়ে যাওয়া ছোট ছোট ইতিহাস নিয়ে
মেদিনীপুরের ভুলে যাওয়া ইতিকথা
ছবিঃ গৌতম মাহাতো
পর্ব-১৬
বিদ্রোহ বহ্নি
…….বগড়ীর
ঐতিহাসিক নায়েক বিদ্রোহ:
শ্রী কানাই লাল দীর্ঘাঙ্গী
( ৭)
জনশ্রুতি যাই থাক না কেন, লেখকের মতে, রসকুন্ডের পলাশ পুস্করিণীর দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত
সাত বামনী বা সাতবোন নামক সাতটি মাকড়া
পাথরের উপর অঙ্কিত তীরন্দাজের মূর্তিগুলো
তৎকালীন কোন সাতজন বীর রমনীর। ১৮০৬ খ্রীষ্টাব্দে সেনাপতি অচল সিংহের নেতৃত্বে নায়েক
বিদ্রোহ আরও ভীষণাকার ধারন করে। ১৮১৫ খ্রীষ্টাব্দে মিঃ চার্লস রিচার্ড ও মিলে হেনরী নামক দুইজন সৈনাধক্ষের অধীনে কয়েকজন অশ্বারোহী
গোরা সৈন্য এই বিদ্রোহ জন্য বগড়ীতে আসে। এই
সময়ে চন্দ্রকোণা শহরের উত্তর দিকে পূর্ব্বোক্ত
ফাঁসী ডাঙ্গা নামিত জায়গায় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর বনিক গন কর্তৃক বিচারালয় ও ফাঁসীর
মঞ্চ তৈরি হয়েছিল।
_________
★★সেনাপতি অচল সিংহ, বিখ্যাত নায়েক সর্দার
ভোঁদা বিশা ও আঠারো কাহান ডাকাতের সর্দার যুগল ও কিশোরের নেতৃত্বে বগড়ীর ঐতিহাসিক নায়েক বিদ্রোহ :-
প্রকৃত পক্ষে এই সময়েই বীর সমশের জঙ্গবাহাদুরের বংশধর রাজা ছত্র সিংহের সেনাপতি অচল সিংহ, রাজপুত বীর বীরসিংহ,
বিজয় নায়েক ভোদা বিশাল এবং আঠারো কাহান
ডাকাতের সর্দার যুগল ও কিশোর দুই ভাই এর নেতৃত্বে নায়েক বিদ্রোহ দুর্বার আকার ধারণ করে।
আর এই সময়েই গড়বেতার গণগণি ডাঙার গহন
অরণ্যে অবস্থিত ‘ নায়েক শিবির ছিল বিদ্রোহীদের
প্রধান ঘাঁটি এবং সর্বাধিনায়ক ছিলেন বীর অচল
সিংহ। আঠারো কাহান অর্থাৎ ২৩০৪০ জন ডাকাতের সর্দার যুগের ও কিশোর দুই ভাইয়ের আড্ডা ছিল বর্তমান মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোণা
থানার অন্তর্গত ‘যুগল ও কিশোরের মাঠে’। এই
সুবিশাল মাঠ ঐতিহাসিক শাহী সড়ক অর্থাৎ
প্রাচীন বর্ধমান -উড়িষ্যা যাবার রাস্তায় পড়ে।
তখন নায়েকগণ কোন ইংরাজ সৈন্য দেখলেই তাকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করত। এই পথে তারা
পথচারীদের নিকট হতে বিদেশী বনিকদের বিরুদ্ধে
সংগ্রাম চালানোর জন্য অর্থাৎ আদায় করত।
এক কথায় স্বদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করাই ছিল
এক মাত্র লক্ষ্য। নায়েক বীর অচল সিংহ গড়বেতার নায়েক শিবিরকে কেন্দ্র করে ইংরাজদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হন। তখন
হুড়হুড়ি, কিশোরপুর,বিরাজপুর,মালবাঁধী, পাথরশিনি, কদমবাঁধী প্রভৃতি স্থানে নায়েক বীর -গণের দুর্গ নির্মিত হয়। বর্তমান গড়বেতা থানার
গণগণির খুলা, বন কাটা, গোপীনাথপুর, কাঞ্চনগিরি প্রভৃতি স্থানে এবং চন্দ্রকোণার বহু জায়গায় ইতস্ততঃ লায়কালি গড় নির্মিত হয়।
‘কাঞ্চনা’ ‘নামক বড়াম থানে আজও নায়েকদের
ব্যবহৃত অস্ত্র সংরক্ষিত আছে।
[অনুলিখনঃ শ্রী দুর্গাশঙ্কর দীর্ঘাঙ্গী]
ক্রমশঃ…
★★★