ছবিঃ গৌতম মাহাতো
শ্রীতনু চৌধুরী–র কবিতাগুচ্ছ
কবিতাই লেখেন।মানে কবিতাই।বাংলা ও বাংলার বাইরের বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে তাঁর স্বেচ্ছা ডুব।কবি নিজেও একটি “শিলাই” নামের লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করে থাকেন।
রাধা বন্দনা
স্খলিত নূপুরগুলি
এক এক করে তুলে রাখি বাঁশিতে
নৃত্য পীড়িত পদযুগলে আঁকা
পলাশ রক্ত ভোর
হরিদ্রা অঙ্গবস্ত্রে মুছে দিতে দিতে
ক্লান্তি ও কুসুম
দেখে নিই অনুরক্ত শঙ্খ- চক্র।
কে ঈশ্বর?
তরুমূল’ ই সৃষ্টির আদি ও অনন্ত
তাই গৃহস্থ বোধ বার বার
বৃক্ষ তলেই জ্বালে জ্যোতির্ময় আলো
ঈশ্বরিক সে আত্মশ্লাঘায়
চোখ মেলে দেখি
তার প্রতিটি পদছাপ
নৃত্যাঙ্গনে জন্ম দিচ্ছে কত
স্বয়ম্ভু ঈশ্বর
মনকেমনের বাঁশি তো
ব্রম্ভমণ্ডল রমন করা
তার ই সাধন বন্দনা।
আহের
ভেষজ পাতার ফাঁকে
আত্মগোপন করে আছে জিঘাংসা
ঘুম ভেঙে প্রথম যে অপয়া মুখ দেখো
তার চেয়ে অনেক বেশি বিষ মেশানো স্তব্ধতায়
হিরন্য প্রস্ফুট যাঁর ব্রহ্ম নির্দেশ
প্রতিটি উন্মিলনে রাই জাগো সুরে সে
শরীরে শরীরে ঢালে হলুদ জীবন
তবুও শুভ্র বক
আহির ভৈরবে নিমগ্ন নিঠুর
ফিরে এসো প্রব্রাজন শেষে
তোমার চরণ প্রত্যাশায়
শুকনো পাতার উপর
থরে থরে রাখা আছে
সোনাঝুরি নূপুর ।
পালাগান
প্রস্থান ও প্রবেশের মাঝে
নায়েক বন্ধু হাত দিয়ে আটকে রাখে আলো
দৃশ্যান্তর পর্বে ঝলমলে ইস্তেহার
ঘুম ভেঙে মঞ্চ শয্যায় উঠে বসে নদী-
তার হিরন্যবক্ষ থেকে উথাল তরঙ্গ
ভরিয়ে দেয় ঘাটের বিরহ বিলাস।
কাছি ছেঁড়া নৌকো বিবেক ভাসানে
অনির্দেশ
কে তার মাঝি হবে?
পাকুড় দহে শুয়ে আছে ভাবনা ভাটিয়ালী
পালাকার হে, যাত্রাভঙ্গ আগে
অনতি সঙ্গম রেখো
গাঙচিল আর সতী মোহনায় ।
পরীক্ষা
হঠাৎ ফেরার কথা বলতেই কেঁপে উঠে বুক।যুগল হৃদয় পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পেতেছে বসত- আদিসুপ্ত গ্রাম। হিমেল হাওয়ায় টুপ্- টাপ ঝরে পড়ে পৃথিবীর বীজ।নাভীস্থলে গন্ধমাদন।কপিদল উল্কি কাটে- ছড়ানো অলংকার। ফেলে ফেলে চলে গেছে চিরদুঃখী সীতা নাম যার। পুঁতে রাখা শ্রী মাটির গভীর। অগ্নি শীতল হয় অগ্নি সমীপ। তবুও দুরু- দুরু,তবু সন্তাপ। নীল বাষ্পে ভরা আছে মাটির দু- ফাঁক।ঠেলে ঠেলে দূরে রাখি। আসলে পরীক্ষা নয়, প্রেম কত অনুগত- দেখায় তোমাকে সে। বারংবার জিতে যাও তুমি রঘুবীর।
রিংটোন
রাত ১২ টা ৩ । এইমাত্র সুইচ অফ করে সপ্তাহ ঢুকে পড়ল রোববারের প্রথম বৈশাখে। ব্যস্ততম দিনের আগে জানালার ওপারে কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা কাকেও দেখছি নে।কেঠায় গঙ্গা নিয়ে কাল হরিদাসী এক বসে থাকবে সারাবেলা।আজ গৌতম, সম্রাট কারো আসার কথা ছিল না। সূর্য তিনদিন এ’ মুখো হয়নি বলে তিলে তিলে তেরাত্রিরে একবারও চাঁদ ওঠেনি। টাওয়ার লোকেশন ধরে আবার একটা লক্ষ্মীপেঁচার সন্ধান করতে গিয়ে হরিদাসীর রিংটোন বেজে ওঠে।
প্রথম বৈশাখ
বসন্ত বিলাস ছেড়ে
চলো পলাশ- সূর্য মাখি
তোমার সবটুকু রং
ঢেলে দাও শিয়র উদ্ভাসে
সব অভিমান উড়িয়ে দিয়ে হাওয়ায়
হাতে হাত রাখো
ঐ দেখো
অনন্ত স্রোতে সে
ভাসিয়ে দিয়েছে লজ্জাবস্ত্র
এসো ,প্রথম বৈশাখে আজ
দুজনে মান্দাস বাঁধি।
কত আর জন্ম হবে
ভুলে যাওয়া সমূহ সহজ
না চাইলেও তবুও
কেউ কেউ তো ভুলে যায়
আর কত জন্ম হবে আমাদের ?
ঠাকুরঘরে তার পা ছুঁয়ে
রাখা আছে অমোঘ শঙ্খ
নিত্যপূজার শেষে তিনবারের বেশি
আরও ক’ বার না হয়
চঞ্চল বালিকা হয়ে
খেলাচ্ছলে দিয়ে দিতে ফুঁ
চুরাশি লক্ষ নিমিত্ত শুধু
নিজে হাতে মাত্র কয়েকটি বারই তো
রচনা করেছি প্রসূতি গৃহ
কত আর জন্ম হবে
অন্তত একবার
উলুধ্বনি না দিলে
কি করে মণিতে রাখি প্রকৃতি প্রত্যয়!
বিনীত রাজহাঁস
সমুদ্র মহিমার সামনে বসে ধ্যানমগ্ন
একপাশে খুলে রাখা আমার অঙ্গরাগ
দূর বোধিবৃক্ষের নিকট যেতে
চেয়ে নিয়েছি রাজহাঁস
আসলে তোমার শুভ্র বসন
সহস্র নীলের ঘন বুণোটে সফেদ
সে কথা জেনেছিল যে
নিশীথ ভোরে সে বয়ে এনেছিল পায়েসান্ন
দিনের উদ্ভাস তীব্রতায়
নিজের ছায়া ক্রমশ প্রলম্বিত হতে দেখে
জেগে উঠে নকল- মহীরুহ প্রবৃত্তি
চেয়ে দেখি,
হাতে রাখা পাত্রে যা রাখা আছে
তার ঝনঝনানি শব্দে
সরে সরে চলে যাচ্ছে
বিনীত রাজহাঁস গুলি।
★★★