মঙ্গল হাজরা-র কবিতাগুচ্ছ
চিহ্ন-ই আমাকে সনাক্ত করে
রাতের তারারা স্ফটিক চিহ্নসম।
দিনের আলােতে উজ্জ্বল।
তিলের দানার মতাে কালো আঁচিল।
ওসব চিহ্ন; চিহ্ন-ই আমাকে সনাক্ত করে-
স্ফটিকের মতন
দুটি সাদৃশ্য ফুলের মধ্যেও জেগে আছে চিহ্ন। আমার চোখে, মুখে, ঠোটে শুয়ে আছে ও
এমনি ভাবে।
অমিত অক্ষরে যে শিশু তারা ভাসে
নাবিকেরা সনাক্ত করেছে ওকেও।
চিহ্নগুলো আড়াল করতে —
ক্ষনে ক্ষনে রঙে,নাটকের ছাই-এ
দাঁড়িয়েছে আমার বিভূতি দেহ।
তবুও নাবিকেরা সনাক্ত করেছে আমায়।
মৃত্যুর শ্বাসে যম ও নিশ্বাসে মা সনাক্ত করেছে শিশু।
চোখের ‘পরে চোখ ভাসে চিহ্নের মতাে।
তোমার চোখের ‘পরে ভাসে তখন প্রতিবিম্ব
আমাকে তা সত্বর সনাক্ত করতে হবে।
যদি জেগে থাকে মহাকাশ
একি মহা-আকাশের নীচে চলন্ত পৃথিবীর পরে জেগে
আছে কত মহাকাশ।
যদি বলাে জেগে আছি; তবে বলে কতকাল জেগে
আছে এ নভঃস্থল!
সাধনা বিনীতভাবে রাত জাগে;দিবালােকে হেঁটে
চলে কবিতায়।
একই চাদরের নীচে ঘর বাঁধে দুই পাখি, রাতের
তারারা মিথ্যে নাকি উজ্জ্বল।
বাইরে প্রহসন হাসে; চাদরের নীচে অন্ধকার
অমােঘ।
পৃথিবী জানে সবটুকু জানে, পৃথিবী এক সমুদ্র চোখ।
ইনসমনিয়া
চোখের তারায় শুয়ে আছে পদ্মপাতা। নিথর শরীর জুড়ে তড়িৎ খেলছে খেলা
মাথা থেকে পা, আবার পা থেকে মাথা।
অন্ধকার পৃথিবীতে এখনও কেউ জেগে আছাে? নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে খুব। নিঃসঙ্গ মনে হয় ওই
চাঁদটাকেও।
চেতনাতে আজও ‘তুমি’ শব্দটা জীবন্ত সঙ্গী হয়ে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়।
চেতনার ঘরে হেঁটে যায় আমরা।
কত ফুল ফোটে আবার ঝরে-
আরও যত রাত গাঢ় হয়;গন্ধে পৃথিবীর বুক ভরে। হয়তাে নীড়ের পাখির মতাে শিস দিতে দিতে আমাদের সাথে আজও চলেছে চন্দ্রবোড়া।
ওর মুখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে বিষ,
চেতনার জলে বিষ ভাসে। উহঃ অসহ্য-
জ্বালায় ছটপট করছে এ জীবন।
কানের কাছে বনবন করছে মশা।
ঘরের কোনে প্লাস্টিক খাচ্ছে ইদুর।
ঘুমের মধ্যেও নাক ডাকছে সন্তাপহীন সুরে
-পাশের বাড়ির কাকিমা।
পুরুষ তাে নেই এখন পুরস্কার দেওয়ার মতাে।
ক’দিন আগেই ভাে জ্বলেছিল নীলমণি!
এ কেমন অভ্যেস এই প্রকৃতির?
আমিও শিখতে চাই শিখতে চাই একটুকু।
ভাবতে ভাবতেই হতাে এইভাবেই
ঘুম এসে যাবে একবার।
সাধনা
সাধনা,
একটা কাঁটার জন্য শুধু
একটা কাঁটার জন্য-
এ শরীর পচে যেতে পারে।
তুমি সতর্ক থেকো।
প্রহরে প্রহরে মােরগেরা ডাকবে না আর।
মল্লযুদ্ধে ওরা সব হেরে গেছে।
নিশ্চুপ
আমার গল্প খুঁজে ঘুমের মরশুম।
সাদা কাগজের পাতাগুলো–
বিছানার মতো নিশ্চুপ।
রাতের আকাশে ঘুমের বড়ি–
তারাদের দামে কেনা।
ওটা জানেনা আজও শীর্ষেন্দু ডাক্তার।
সুন্দরী
সুন্দরী,
আকাশের বুকে মাথা রেখে
করো শৃঙ্গার।
হ্যাঁ, শৃঙ্গার করো চুলে-
পাতায় পাতায় নকশা তুলে,
নকশা আঁকো নদীর।
মেঘ বৃষ্টি হলে, প্রথমে নামবে পাতায়
তারপরে ঝরনার মতো ছন্দে ছন্দে
নেমে আসবে নীচে।
আমি অপেক্ষায় থাকি,
অপেক্ষায় আছি এখনও –
এ ঝরনার জলে যে অন্য গন্ধ চলে।
দুই পক্ষ
যে ফুল সন্ধ্যাবেলায় ফুটে
ভোরের আলোয় ঝরে;
ও ডালেতেও পাতায় পাতার কথা
ছোটো হলেও কাব্য ক’রে গাথা।
একটি পাতা সন্ধ্যাবেলাও মরে,
ওই ডালেতে নরম ভোরের কাঁথা–
সূর্য আলোয় সবুজ শিশুর মাথা।
প্রগাঢ় স্নিগ্ধতা
আমার শুষ্পমূলে ;তোমার ছায়াছবি।
নিবিড় আলোকে তুমি আমাকে আঁকো!
ভালোবাসা স্নিগ্ধতায় কোমল হতে হতে-
প্রগাঢ় অন্ধকার মুখ মুছে-
মায়াবী এই আলো-ছায়ায়।
উলঙ্গ সভ্যতা না যুবতী?
এক যুবতী বিবস্ত্র হয়ে নেমেছে
নেমেছে রাজ সভ্যতায়।
ক্রোধ হীন, হিংসা হীন, প্রেমহীন নিথর পুতুল-
সব কিছু পুড়িয়ে সে উলঙ্গ হয়ে নেমেছে রাজপথে।
স্পর্ধা দিয়েছে, দিয়েছে অধিকারও।
কিন্তু, এটা যেন শেষ হয়।
প্রতি অমাবস্যায় সে জামা খুলতে পারবে না।
★★★