সূ র্য ম ণ্ড ল-র কবিতাগুচ্ছ
শোকসভা
প্রতিটি মানুষ চান তার মৃত্যুর পর একটা অন্তত শোকসভা হোক
সেখানে কেউ মালা দিক গলায়
কেউ গান করুক- ভাল আছি ভালো থেকো
স্মৃতিচারণা করুক কেউ কেউ
জীবনের ওই একটাই তো মুহুর্ত
যখন ইচ্ছে থাকলেও কোনো কটু কথা বলে যায় না
টানাটানি করে যায় না পরকীয়া নিয়ে
বা চারবাক মতে ধার করে ঘি খাওয়া নিয়ে
এমনকি পাড়ায় যিনি বিবিধ ভারতী খুলে বসে থাকেন রোয়াকে
তিনিও মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে বন্ধ করেন নভ
আর মাথা দোলান ঘন ঘন
মানুষ মরে গেলে কেন যে তার সাত খুন মাপ হয় এ ভাবে?
মানুষ কী তবে মেঘ, যে
প্রবল বৃষ্টির পরেও কেউ তার দোষ ধরে না।
প্যারাসিটামল
কুড়ি টাকা পকেটে নিয়ে পা রাখি
দরজার বাইরে
কুড়ি টাকায় এখন কী কী হয়?
কুড়ি টাকায় হয় না কিছুই
বর্ধমান হাওড়া ট্রেনের টিকিট হয় না এক পিঠের
বাসের ভাড়া হয় না অফিসের
কিম্বা এক ঠোঙা চপ মুড়ি
আজকের দিনে একটা তাজা গোলাপের দামও ২৫ থেকে ৩০ টাকা
এক প্যাকেট সিগারেটের কথা তো ভাবায় যায় না
চারমিনার থাকলে হয়ত কিছু একটা সুরাহা হত।
কুড়ি টাকায় এখন কী কী হয়?
কুড়ি টাকায় হয় না কিছুই
শুধু খান তিনেক প্যারাসিটামল ছাড়া
যদিও প্যারাসিটামলই পারে শরীরের সব তাপ ও যন্ত্রনার অবসান ঘটাতে।
চলো
এ ভাবে থেকে যাওয়া ভালো লাগে না আর
গোধূলি ফুরিয়েছে
ছাদের উপর ছায়া ফেলে উড়ে গেছে
সন্ধ্যের বক
ভাটার টানে জল নেমে গেছে দিগন্তের কাছে
আমাদের চেনা নাম পাল্টাতে পাল্টাতে
এখন অনেকটা রুগ্ন গ্লেসিয়ার মতো।
পুরনো ডাকবাক্সে চিঠি ফেললে তা গিয়ে পৌঁছায় না
প্রাপকের কাছে জেনেও, কলেজ ফেরত মেয়েটি
সেখানে রেখে গেল তার রাত জেগে লেখা চিঠি
একেই কি অভিমান বলে?
বলে প্রবল শীতে নদীর পুত্রশোকের হাহাকার?
তেমন করে গুন গুন গান গায় না কেউ আর
স্নান ঘরে, দূরে কোথাও বাজে না রাধার হৃদয় উথলানো বাঁশি
এরপরেও কি ভাবে তুমি থেকে যাওয়ার কথা বলো?
মেঘ জমে জমে আকাশ এখন প্রকৃতই বৃষ্টিসম্ভবা
চলো, গড়িয়ে কিছু পড়ার আগেই আমরা
হাতে হাত রেখে পেরিয়ে যাই এই মরা বসুন্ধরা ।