সুজিত পাত্র-এর কবিতাগুচ্ছ

   
★★সুজিত পাত্র-এর কবিতাগুচ্ছ★★

                                               ছবিঃগৌতম মাহাতো

                              খেলাপ

নোনাজল আর জীবন আজন্ম শত্রু লক্ষীমনি  আদরের
সমস্ত হিসেব ফুটপাথে গড়ায়
জীর্ন দেবতা রাস্তার উপর লাখো পদাঘাতে স্থবির
দিকশূন্য বৃষ্টি প্রার্থনার  প্রেমিক আজ নিমজ্জিত
বহু দূর থেকে ভেসে আসে  জলতরঙ্গ, মৃদু আলাপ
কোলাহল শেষে প্রত্যয়ী সকাল ডাকলেও  আলস্য পড়ে থাকে
সকালের উষ্ণতার সাথে সাথে যেভাবে ফিরে আসে বিগত বেদনা
একই ভাবে আদরের বীমা কোনো প্রস্তাব মনে না।

                           ★★★

                         পিতৃদণ্ড

আকাটের পিতৃদন্ড হল মুখে চোখে
এরপর সামাল সামাল হরিময় গ্রাম
কেরোসিন পুতুল ভেঙে ভেঙে ওঠে রত্নময় বিশ্রামে
কোন বোলে, কোন রঙে সুবাসিত হবে এই জরৎবীজ
অযোনিশ্রুত স্বামীকাঠ নুয়ে আসে মাচানের স্তবে
বিষপান -হয় হোক মধুময়- ভবিষ্যতের নোনা চিঠি
স্বাক্ষরিত দিশালিপি বেঁধে দেয় হাতুড়ির মৈথুন

পিতৃদণ্ডে আকাটের টলটলে তিন তরী,
রুখা স্নানে মাঝে মাঝে ভেসে যায় হরিডাঙ্গা ঘুম।
                        ★★★

                          গ্রহণ
             
এই যে সময় বিভ্রাট, বৃদ্ধ শহরের গোড়ালির জল
শীতের অসুস্থ ফাটল জুড়ে আঘাতের প্রশ্নে ত্রিধা

চোখে মুখে বঙ্গীয় মননের চিহ্ন মাখা রোগা পাগল
ভাসতে ভাসতে স্বাবলম্বী গ্রাম পেরিয়ে
শ্লোগান তোলে- “তোর মাকে …” এরকমই  সংযম

কৃষকের কোদালে লেগে থাকে মাটির জীবন
আর্দ্র সংকেত প্রহারেও ফিরে ফিরে আসে ঘরে
অথচ সমস্ত ব্রহ্মপথের অজস্র বিভাজনের শেষেও
ঘর নেই কোনো… শুধু তুলসীর মঞ্চ
দীপ হীন মায়েরা জেগে থাকে…
                          ★★★         

                           পদাবলী

হরবোলা বিকেল গুচ্ছটি ওপাশে সরিয়ে রেখে
বাবু হয়ে বসলাম শ্রীরাধের পাশে
তুমি তো বারোয়ারি দুঃখ বিলাসী নও
পাপ পুণ্যের হিসেবধারী স্বজনেও ভয় নেই
তবু স্মৃতিহীন সত্তাহীন অগণিত চেহারার পাশে
কেন জেগে ওঠো বারবার?
#
 আমার শ্লীলতার কোনো পৌরাণিক মহিমা নেই
কোনো আত্মা সংযোগে প্রতিকায়িত না হয়েই
 আমি শুধু নারী
এই তো আকাশ- কোনো পাখিকেই
ফেরাতে পারিনা তার সাঁতারের চাতুর্য থেকে
আমি তো বররঙ্গিনী  গন্তব্য বিরহী জনান্তিক।
                         ★★★

                           ট্রেলার

চড়ে গেছে দিন
তোর অরণ্যের হাতে হাতে এক টুকরো কাচ
ঘোলাটে চোখের খাদে যে ভ্রূণ
হাঁসফাঁস করছে দিনরাত
চাদরের ছোঁয়াচে বলির পণিকে
পূর্ব অথবা পশ্চিম পাহাড়পুর জেগে থাকে

দু নম্বর সড়কে মাথা নোয়ায়
কিছু অবলা করবী
তরতর বেয়ে ওঠে কোলাহোলিক পারদ
ছাঁট সামলানো গতায়ু কন্দুকের ঘেমো কপাল
একটু একটু পরোমায়ু বিলোয়
পূর্ব অথবা পশ্চিম মেদনীপুর বাসে চলে যায়

আমিনকে দু চারশো ধরালে করাতের শব্দ ওঠে
আমাদের হরে কৃষ্ণ স্নানঘরে সুগন্ধ ছড়ায়।

                         ★★★

                           ঘুন

দিনান্তে চক্রশূল
অথচ সম্মুখে পরাগ বৈতরণী
শরীর ভারী হওয়ার গর্বে রাধাচূড়া
       যেই হাত বাড়িয়ে আনমনা
অমনি একটি উপনিবেশ বটিকা
        তার জিভের তলায়
অনেকদিনের পুরোনো আলিঙ্গন
 থমকে থমকে নাচছে রাস্তায়
ওপাশে মানুষ- হাত দিলেই কুৎসিত শব্দ আসে
নষ্ট রাস্তার এবড়ো খেবড়ো তালে
     উদোম আধিপত্যের ভীড়
      নেচে উঠছে লাল নীল বেলুন

দিনান্তে চক্রশূল
অথচ সম্মুখে পরাগ বৈতরণী
                       ★★★

                       পরজীবী

তোমাদের মানুষ খোয়া গেছে, আমাদের ক্ষিদে
তাই আলো ওগরাতে গিয়ে টান পড়ে কোমরবন্ধে
ঝিনুক বাধা রক্ষারত্ন ভিক্ষার মুখে ঠিকরে ওঠে
মায়েরা সার বেঁধে ব্রতকথায় ভিরমি খায়
আমাদের মুথাকাণ্ডে একটি ঘাস দানা বাঁধে
সরের লোভে উড়ে যাই এবেলা থেকে অবেলায়
  জনসংযোগ বাড়ে, কুমারী আঁশ এগায়ে ওগায়ে
বুভুক্ষু দেবতা সমেত শরীর ভারী করে ঘরে ফেরে

যে রাস্তা বেঁকে গেছে বাঁয়ে জন্ম থেকে দুঃখের দিকে;
শ্রমের শেকড়ে আদুরে চাদর ঢেকে পুরু যে ছাব্বিশ
তার ঠিকানা শুধু একটি সাঁকো হয়ে ঝোলে
                              আমাদের কংসবতীর কোলে

                              ★★★

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *