ছবিঃ প্রসেঞ্জিৎ মণ্ডল
ছোটন গুপ্ত-র কবিতাগুচ্ছ
বসন্ত
পলাশ নেশায় রঙ ছড়ায় আজ রক্তরাগে
অরুণ আলোয় দিগন্তে ঐ কী সুর জাগে?
প্রভাত বেলা পথ চলা শাল পলাশ তলে
এই ফাগুনের বর্ণ বিভায় আগুন জ্বলে।
মন ভুবনের সাড়ায় পাড়ায় খুঁজছি ভাষা,
বাতাস জড়ায় পেলবতায় বৃষ্টি বাসা।
প্রাণের খুশির তুফান টানে বন্য সুবাস-
পলাশ মহুল বাউলা গানে আজ ভালোবাস।
এখন আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা আর
কাঁচপোকাদের সবুজ ঘাসে শিশির মাখার
সাতসকালে রাখছি নরম রোদের মায়া,
বসন্ত আয় এই ফাগুনের আলোয় ছায়ায়।।
ভালো থাকার কবিতা
ভালো আছি কিনা বলিনি তো কক্ষনো,
মনে করে দেখো ভালো থাকা দিনকাল।
ভাগবাটোয়ারা চাওনি তখনও কোনো,
চোখের কাজলে জেগে ওঠে নদী খাল!
আমি ভালো থাকি প্রতিদিন চেনাভূমে,
দিঘিজলে খুঁজি মাছরাঙা দাপাদাপি।
ভাগ করে বাঁচি বিষয় আশয় চুমে…
বসন্ত এলে মেলে দিই লেখা ঝাঁপি।
মনের গহীনে জেগে থাকে উড়ো খই,
আজও ভালো আছি হাবিজাবি লিপি লিখে।
কালকে বোলো না- চেনা মানুষটি কই?
পাতা ঝরে গেলে চোখ মেলি পুব দিকে।
বাউন্ডুলের ভালো থাকা রঙ তুলি–
ইদানিং আঁকে সায়াহ্ন কাল ছবি।
প্রিয় সাথে আছে! অসত্যটুকু ভুলি,
আমাকে ডেকেছে গোধূলিবেলার রবি।।
আমার দুঃখগুলো
হাতের মুঠোয় খানিকটা সুখ কালকে ছিলো,
নিজের তৈরি উল্টোপাল্টা ভুলের মাশুল…
হঠাৎ ও সুখ মুঠোর থেকে লম্ফ দিলো!
এখন সাঁঝে দিব্যি আঁটা দুঃখ আকুল।
দুঃখ নিয়েই দিন কাটিয়ে ছুটতে গিয়ে–
হঠাৎ দেখি নীল আকাশে মেঘের আদল।
আজ কী তবে বৃষ্টি নামবে ঝমঝমিয়ে?
বসেই আছি চুপটি চেয়ে আসুক বাদল।
দুঃখ আমার ভাল্লাগে না বুঝলে না কেউ!
সুখের আবেশ ক্ষণস্থায়ী মানতে নারাজ।
তবুও রোজ চোখ বুজলেই তিরতিরে ঢেউ…
দুঃখ সাজের ঘনঘটায় হয় মহারাজ।।
আলো কথা
তুই মেলে দিস মায়ের ভাষা
একুশ ভোরের অঙ্গনে,
আমরা সাজাই স্বপ্ন ভোরাই
সবুজ লালিম বন্ধনে।
বাংলা ভাষার উচ্চারণে
তোলপাড় হোক তোর কলম।
কবিতাময় দিনযাপনে
চলুক আলোক দিক ভ্রমণ।।
দেরির জন্য
সব কাজেতেই বড্ডো দেরি করি,
নষ্ট সময় পাইনা ফিরে আর।
তবুও রোজ দিব্যি বলে ‘সরি’–
বিচ্যুতি আর ভুলগুলো হই পার।
নিজের জন্য ব্যস্ত থাকায় মানা,
ভাবনাগুলোয় পথের ধারের ভুল…
দু চোখ খোঁজে পাখির রঙিন ডানা,
খুঁজতে চাওয়া লালিম পলাশ ফুল।
আকাশে মেঘ খোঁজার বাসনায়–
যাই চলে রোজ দূরের থেকে দূরে…
নিত্য ভুলি- থমকিয়ে এক ঠায়…
হারিয়ে যাই মনবাউলের-সুরে।
অপেক্ষারা চলেই গেছে কবে…
চোখের কোণে ঝাপসা অহমিকা,
আসতে আমার একটু দেরিই হবে!
দেখছি রোদের অবাক মরীচিকা।।
অসভ্যতার কবিতা
অন্ধকারে জেগে থাকে না বলা কথার নীরবতা,
পাপ তাপ লিখে যায় ভালো আছে পবিত্র সময়ে।
প্রতিদিন প্রতিরাত মুছে দেয় চেনা সরলতা…
লোভ কাম মোহ বার্তা জেগে থাকে হাসিমুখ হয়ে।
আয়নাতে মুখ দেখে কিছু লোক জিঘাংসা বুকে!
চোখে থাকে ধূর্ত খেয়াল আর রক্তপ উল্লাস-নেশা।
কেউ কেউ খুন করে হেসে ওঠে অযাচিত সুখে,
জোছনায় ছায়ারাতে লিখে যায় অর্বাচিন পেশা।
ঋতুভাঙা রোদ এলে ভালোবাসা ঘুম ঘরে একা,
কাল মধুমাস জানে ফুল ফোটা সবুজের ঘ্রাণ–
সূর্যোদয়ের পরে হয়না তো আলো ফোটা রোদ্দুর দেখা।
বসন্ত এসে গেছে তবু কেউ গাইছে না সোহাগের গান।
সময় বলেছে গতকাল চলে যাবে সত্যকে ভুলে…
মাথানত লোকগুলো লিখে যাবে খুনীদের বানী।
লাশকাটা ইতিকথা রাখা থাক গাছে ফুলে মূলে,
আয় তবে রাত জেগে নতুন অসভ্যতা আনি।।
মূর্খ জানে না
মূর্খ জানে না…
কতোটা আগুনে জ্বলে লেলিহান শোক,
বুকে ধরে জেগে থাকে
সময় অপেক্ষায় শিক্ষিত লোক!
শোক-তাপ-যন্ত্রণা
মূর্খরা আছড়ায় বারবার শুধু ভুল করে…
সত্যরা চুপ করে থাকে…
সাময়িক নীরবতা ছড়ায় অতল গহ্বরে।
মূর্খের দেশে তুমি
একা বলে কবিকথা লিখবেনা নাকি!
জানোই তো সিংহাসনে
ইদানিং বসে আছে মূঢ়তার ফাঁকি।
আঁধারের কালোছায়া
মায়াঘন মরীচিকা রাত জেগে ডাকে,
নদীর গভীর জলে
ডুবে থাকা স্তব্ধতা আপাত বিপাকে।
মূর্খ বিজয়ী হলে
বেখেয়াল দিনকালে শিক্ষিত দুয়োর এঁটে যায়।
গাছ পাখি ও প্রকৃতি
নির্বোধ চোখ মেলে আকাশে তাকায়।
তুমি বলো- পথ সব জানে!
পথ তবু ভেঙে দেয় নবীন পথিক।
যা লিখেছো অভিমানে…
যা লেখোনি… যা লিখবে… সবটাই ঠিক?
★★★