গৌ ত ম কু মা র গু প্ত-র কবিতাগুচ্ছ
সানুনয়
অনুপস্থিত করো না আমাকে
বায়ব নই আমি দ্যাখো
প্রভূত রক্তমাংসে আছি আকারে প্রকারে
এদিকে সচকিত হও একবার
এই নাও আমার চুম্বিত ইশারা
আমার অনবরত ফিসফাস
দ্যাখো জেগে আছি নৈঃশব্দে এখনও
এদিকে মুহূর্তের পলক ফ্যালো
অন্ততঃ একবার সজাগে থাকো
নীরবে নয় সরবে ডাকো সুললিত স্বরে
চাক্ষুষ করো আমার আনকোরা পৌরুষ
দ্যাখো আমি অস্তিত্বে প্রবল টইটম্বুর
এক্ষুণিই উপস্খিত করো আমাকে
অবলম্বিত হবো না যাপনে জড়াবো না
হিমায়িত করো না আমাকে
সহর্ষ আলাপে আমাকে সুভাষিত করো
ভাল আছি
তুমি ভাল বললেই খুঁজি
তোমার লোহিত রোদ্দুর করোজ্জ্বল
ওখানেই দেখি আচমন মন্ত্রপূত ওঁ জল ভিজিয়ে দিচ্ছ সাধক করন্যাস
আমি ছুঁয়ে ফেলছি ক্রমান্বয়ে
তোমার সপ্রতিভ কুশল উচ্চারণ
তোমার রজনীগন্ধা শরীর সন্ধ্যা
তোমার চিবুকে নেমে আসা অহম
তোমার স্পর্ধার সুললিত মন্তাজ
তুমি নির্দ্বিধায় উড়িয়ে দিচ্ছো রক্তচোষক মাছি ও মশক
তাকিয়ে দেখছি তোমার ওতপ্রোত নিশ্চিন্তি
উপবেশন ও উপভোগ
ত্বকের লাভায় প্রতিসৃত লাবণ্য রামধনু
রোজনামচায় এখন আমি প্রতিশ্রুত সাবালক
সবুজ নীলে দৈনন্দিন শিখে নিচ্ছি
সাদা কালোর দীর্ঘ ইতিহাস
অতঃপর তোমাকেও জানাবো
আমি কেমন করে ভাল আছি
তোমার গান দেখতে দেখতে
তোমার গান দেখতে দেখতে
সুরের আগুন বৃষ্টিবাদল
একটি নদীর জন্মে হল খরস্রোতা
ঢেউগুলি সব চেনা চেনা
জলতরঙ্গ ছাপিয়ে চাঁদ ভেসে এল
এখন নদীতে বলয় বৈশাখী রোদ
খর বালুকণায় আমাদের যুগলবন্দী
কেঁপে উঠছে হৃদয়ের আশাবরী
সঙ্গতে আজ যূথচারী আবহের গান
তোমার গান দেখতে দেখতে
বুকের আগুনে হেমন্তের বসন্ত
তুমি যেন কুজ্ঞবনের রাধাবিলাস
হৃদয় আমার মগ্ন হল বৃন্দ গানে
কথা
ঘুম থেকে উঠে দেখি
অপেক্ষা করে আছে কথা
স্মৃতি তো নিশ্চিত নীরব
তবু কথা জমে থাকে
বরফের মতো গলে কথা
কখনো মেঘ কখনো বৃ্ষ্টি
মূক জানে কথা অমৃত সমান
বাতাসে ভাসে কথাকলি রেণু
সারা ঘর কথাময় হয়ে আছে তাই
ঘুমের ভেতর নিভৃতি কথা- কাহিনী
অপেক্ষায় আছে বর্ণালী অবকাশের
কথার আগুনে বিস্ফোরক হয়ে আছি
জানি না কি হবে আগামী শেষ কথা
পাঠ
আরো একটি সভ্যতার পাঠ নিই
প্রজনন সমৃদ্ধ বলি বায়ু ও অম্লজান
পিলসুজে সাজাই পৃথিবীর সহজ ভাষা
জ্বলুক ঘৃতপ্রদীপ অন্য পারিজাত আলো
বল্মীকে খেয়েছে আমার আদুরে আসবাব
কোথায় নেভাই বলো চুমু ও শয্যাবিলাস
আরামসুন্দর উপবেশন ধীর স্থির পরিনাম
কঠিন ইটগুলি পেতে গ্রহনীয় ছিল না দান
ধ্যাননিমগ্ন চোখে ভুলে যেতে চাই অপবাদ
পরিমিত পল্লবিত সুরের নির্মোহ প্রণিধান